৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৯:৩৮

তুলির শেষ টান পড়ছে, প্রতিমা শিল্পীদের শঙ্কাও বাড়ছে

নরসিংদী প্রতিনিধি

তুলির শেষ টান পড়ছে, প্রতিমা শিল্পীদের শঙ্কাও বাড়ছে

নরসিংদীতে পুরোদমে চলছে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। ষষ্ঠীবোধনীতে দেবী দুর্গাকে পূজা মণ্ডপে পৌঁছে দিতে কাজ চলছে দিন-রাত। দুর্গা দেবীকে দৃষ্টি নন্দন ও আকর্ষণীয় করে তুলতে শেষ মুহূর্তে রং তুলির আঁচড়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীদের।

এবার জেলার প্রতিমা শিল্পীরা প্রায় ৫০০ প্রতিমা তৈরি করেছে। তবে প্রতিমা তৈরির সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে শিল্পীদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু খরচের তুলনায় প্রতিমার দাম পাচ্ছে না। ফলে এবার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। আগামীকাল শনিবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হবে। 

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এবার জেলার প্রতিটি পূজা মন্ডপে জাঁকজমক ভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হবে। এবার জেলার ৬টি উপজেলার ৩৫৬টি পূজা মণ্ডপে দেবী দুর্গার পূজা অর্চনা করা হবে। এর মধ্যে নরসিংদী সদরে ১০৩টি, শিবপুর উপজেলায় ৭১টি, রায়পুরা উপজেলায় ৬২টি, মনোহরদী উপজেলায় ৫২টি, পলাশ উপজেলায় ৪৮টি ও বেলাব উপজেলার ২২টি মণ্ডপে দেবী দুর্গার পূজা অর্চনা করা হবে।

মৃৎশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিরা জানান, নরসিংদীর মৃৎশিল্পীদের তৈরি প্রতিমা গঠন ও কারুকার্যে নজরকাড়া। তাই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়তে থাকে নরসিংদীর প্রতিমার কদর। এবার জেলার প্রতিমা শিল্পীরা প্রায় ৫০০ প্রতিমা তৈরি করেছে। বৈশাখ মাস থেকে প্রতিটি কারখানায় দুর্গা প্রতিমার তৈরি শুরু হয়ে যায়। করোনার কারণে জেলায় গত কয়েক বছর পূজা কম হয়েছে। যার ফলে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে। এবার করোনা পরিস্থিতি ভালো থাকায় কিছুটা লাভের আশা করা হয়েছিলো। কিন্তু প্রতিমা তৈরির জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রতিমা তৈরীতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় প্রতিমার দাম পাওয়া যাচ্ছে না। পূজার আয়োজকরা বেশি দামে প্রতিমা নিতে চায় না। তারা আগের দামের মধ্যে প্রতিমা তৈরি করতে চাইছে। এখন প্রতিমা তৈরীতে দিন-রাত যে পরিশ্রম করা হয় দাম না পাওয়ার কারণে তারা লোকসানের আশঙ্কা করছে।

প্রতিমা শিল্পীরা জানান, বেলে  মাটির দাম প্রতি ট্রাক ১৬ হাজার টাকা, বাঁশ প্রতি পিছ ৪০০ টাকা, দড়ি ২০০ টাকা কেজি, রং ২৫০০-২৭০০ টাকা কেজি, প্রতি কেজি তাঁরকাটা ১২০ টাকা , ১ কেবি কাট ১২০০ টাকা , খড় প্রতি ভ্যান ২ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতিটি জিনিসের দামই বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ। বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরিও। কিন্তু প্রতিমার দাম বাড়েনি, তাই ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন মৃৎশিল্পীরা।

শহরের পশ্চিম কান্দাপাড়া এলাকার দিপু প্রতিমা শিল্পালয়ের মালিক দিলীপ পাল বলেন, প্রতিমা তৈরির জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমাদের খরচ ও বৃদ্ধি পেয়েছে। সাথে শ্রমিকদের মজুরি ও বৃদ্ধি পেয়েছে। সে তুলনায় আমরা প্রতিমার দাম পাচ্ছি না। এ বছর আমরা প্রতিমা বিক্রি করছি গঠনভেদে ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এখন শেষ পর্যায়ে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে আমাদের পুঁজিই থাকবে না।

বিশ্বকর্মা প্রতিমা শিল্পালয়ের মালিক সনজিত পাল বলেন, এবার আমাদের কাজের চাপ বেশি থাকলে ও প্রতিমার দাম খুব কম পাচ্ছি। প্রতিমা তৈরিতে আমাদের যে পরিমাণ পরিশ্রম হয় তার তুলনায় দামই পাচ্ছি না। দুই থেকে তিন বছর আগে যে দামে প্রতিমা বিক্রি করতাম এবার প্রতিমার সেই দামই পাচ্ছি। তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে প্রতিমা তৈরি করলেও আমাদের কাঙ্ক্ষিত লাভ হচ্ছে না। ফলে এবার ও গত বছরের মত ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

আরেক মৃৎশিল্পী বিপ্লব পাল বলেন, লাভ না হওয়ার পরেও আমরা শিল্পকে ভালোবাসার কারণে আমরা কাজ ছাড়তে পারি না। প্রতিমার মৌসুম শুরু হলেই আমরা কাজ শুরু করে দেই। আমাদের সকল প্রতিমা এক সময়ে সকলকে বুঝিয়ে দিতে হবে। যার কারণে আমাদের খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে।

নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত কুমার দাস বলেন, মৃৎশিল্পীদের হাতের নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করে প্রতিমার সৌন্দর্য। মানে ভালো ও দামে কম হওয়ায় নরসিংদীর প্রতিমার চাহিদা দেশজুড়ে। এবার খুব উৎসব মুখর পরিবেশে নরসিংদীতে পূজা উদযাপন করা হবে। পূজার নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন খুব তৎপর রয়েছে। তাদের সাথে আমরা সমন্বয় করে কাজ করছি। এবার পূজায় আলোক স্বজ্জা ও ডিজে পরিহার করে ঢাকঢোল বাজিয়ে পূজা করার আহবান জানানো হয়েছে।


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর