ময়মনসিংহের ফুলপুরে গোখাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন গরু খামারিরা। গোখাদ্যের সঙ্কটে খামারিরা বাধ্য হচ্ছেন বেশি দামে খড় কিনতে।
বুধবার ফুলপুর পৌর শহরের ছনকান্দা খড় বাজারে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সাড়ে ৭শ' থেকে ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে খড়।
কাজিয়াকান্দা গ্রামের খড় বিক্রেতা ইদ্রিস আলী বলেন, এখন সিজন শেষের দিকে তো খড় পাওয়া যায় না। তারপর ভাড়া বেশি। তাই আমাদের কেনা দামই পড়ে যায় সাতশ'র উপরে। সে হিসাবে আমরা সাড়ে ৭শ' টাকা মণ বা সবচেয়ে ভালোটা ৮০০ টাকা পর্যন্ত মণ বিক্রি করছি।
ওই বাজারে গিয়ে কথা খুচরা খড় বিক্রেতা ইমাদপুর গ্রামের বিল্লালের সাথে। তিনি প্রতি বোঝা ২০০ টাকা করে বিক্রি করছেন।
জানা যায়, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ধারা বাজারেও খড়ের দাম বাড়তি। আগে যে খড় ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা মণ বিক্রি হতো। তা এখন ৮০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে।
কয়রাহাটি গ্রামের কৃষক এমদাদুল হক জানান, তিনি একটি খড়ের পুঞ্জি (স্তূপ) কিনেছেন সাড়ে ৮ হাজার টাকা দিয়ে। এতে তার ২০টি বোঝা হয়েছে। প্রতি বোঝা ভাড়াসহ প্রায় ৫০০ টাকা খরচ পড়েছে।
কৃষক কামাল উদ্দিনের ছেলে মাহবুব জানান, ধারা বাজারে ৫ কেজি খড় ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে এ পুঞ্জি কেনাতে তাদের কিছুটা সাশ্রয় হবে।
খড় কিনতে আসা আব্দুল আজিজ নামে একজন কৃষক বলেন, গরু নিয়ে বিপদে আছি। একেকটা গরুর পিছনে মাসে ২ মণ খড় লাগে। তাতেও ঘাটতি পড়ে যায়। ধানের মৌসুম লাগতে অহনও আরও দুই মাস বাকি। খেড়ের (খড়) এত দাম, ৫টা গরু কেমনে ফালবাম!
মফিদুল ইসলাম নামে এক গরু খামারি বলেন, ভূষি, ভুট্টা, ভয়েল, গম সব কিছুরই দাম বাড়তি। খড়টা পর্যন্ত ৮০০ টাকা মণ হয়ে গেছে। গরু পালন এখন কঠিন হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গোখাদ্যের দাম ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। করোনা পরবর্তী দানাদার গো খাদ্যের বস্তা ৭০০ থেকে বেড়ে ৯০০ টাকা হয়ে গেছে। আর খড়ের দাম আমাদের ফুলপুরে একটু কম। কারণ এ এলাকায় ধান হয়। অন্যান্য এলাকায় খড়ের দাম আরও বেশি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের উপজেলায় সাড়ে ৫শ'র অধিক গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে কয়েক হাজার গরু আছে। গরুর জন্য পুষ্টিকর খাবার হলো কাঁচা ঘাস। মূলতঃ খড়ে তেমন পুষ্টিগুণ নেই। ঘাসে পুষ্টি বেশি।
গরুর জন্য সরকারি কোন সহযোগিতা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণ কৃষকদের জন্য তেমন কোন সরকারি সুবিধা নেই। তবে এনএপিপি প্রকল্পের আওতায় সিআইপি সদস্যদের বিনামূল্যে কিছু কিছু গোখাদ্য দেওয়া হয়। এর আগে বিনামূল্যে ৫৪টি ভেড়া দেওয়া হয়েছিল এবং তাদেরকে ৫৪ বস্তা খাদ্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘাস চাষের কাটিং দেওয়া হয়। কেউ যদি ঘাস চাষ করতে চায় তাদেরকে কাটিং দিতে পারবো।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন