সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪নং ওয়ার্ড রায়গঞ্জ উপজেলায় জাল টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার অভিযোগ ওঠেছে সদস্য প্রার্থী সুমন সরকারের বিরুদ্ধে। এছাড়াও ছোট কোরআন শরীফ হাতের মধ্যে রেখে কৌশলে ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়েছে।
এ ঘটনাটি এখন টক অব দ্য জেলায় পরিণত হয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে জাল টাকা দিয়ে কৌশলে প্রতারণা করে ভোট ক্রয় করে বিজয়ী হয়েছেন সুমন সরকার এমন অভিযোগ তুলেছেন ৭ ইউপি সদস্য।
অবশ্য নির্বাচনের পর ইউপি সদস্য ভোটারার নকল টাকা চালাতে না পেরে তারা ওই জাল টাকা নিয়ে প্রার্থীর কাছে গেলে তিনি উল্টো পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেন।
অভিযুক্ত প্রার্থী সুমন সরকার রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য পদে (বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক) বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগেও তিনি জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন।
রায়গঞ্জের স্থানীয় এক সাংবাদিক তার ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘জেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে রায়গঞ্জের এক সদস্য প্রার্থী জেলা পরিষদ নির্বাচনে তার পক্ষে ভোট আদায়ের কৌশল হিসেবে তালিকাভুক্ত ভোটার অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদেও টাকার বান্ডিল দিয়েছেন গতরাতে। ভোট দিয়ে বের হয়ে এসে কিছু কেনাকাটা আর ফুর্তির জন্য বের হন তারা। কিন্তু পরখ করে দেখেন রাতের অন্ধকারে দেয়া টাকার বান্ডিল পুরোটাই জাল নোট। কয়েক মেম্বার সেই প্রার্থীকে বিষয়টি অবহিত করলে বিজয়ী প্রার্থী সুমন সরকার সাফ জানিয়ে দেন, জাল নোট যার কাছে পাওয়া যাবে তাকেই কিন্তু পাকড়াও করবে পুলিশ। একথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যান তারা। ভোট কেনা-বেচার বাজারে এভাবে কত কিছুই না ঘটছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতারণার শিকার এক ভোটার জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনের আগের দিন রাতে তাদের ওই প্রার্থী নিজ হাতে টাকার বান্ডিল বিতরণ করেছেন। এ সময় বলে দিয়েছেন, এই টাকা ভোটের আগে যেন খরচ না করা হয়। খরচ করলে টাকা দেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হবে। এতে তার ক্ষতি হবে। তার কথা অনুযায়ী ভোটের আগে টাকা গুলো খরচ করা হয়নি। ভোট দেওয়ার পর স্থানীয় ধানগড়া বাজারে গেলে দোকানদার টাকা হাতে নিয়ে উল্টিয়ে দেখে বলে এগুলো জাল নোট। এরপর টাকাগুলো নিয়ে প্রার্থীর কাছে গেলে তিনি পুলিশে ধরিয়ে দেবেন বলে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেন।
আরেকজন প্রতারণা শিকার ভোটার জানান, প্রার্থী সুমন সরকার কৌশলে ছোট্ট কোরআন শরীফ নিয়ে করমর্দন করেন এবং ভোটের প্রতিশ্রুতি নেন। এরপর বলেন আপনি কিন্তু কোরআন শপথ করে ভোট দেবার জন্য স্বীকার হয়েছেন। এভাবে ব্ল্যাক মেইল করেছে।
একই ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী গোলাম মোস্তফা জানান, জাল নোটের বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছি। টাকা দিয়ে বা জাল নোট দিয়ে ভোট কিনবে এটা কোন কথা বা কাজ হতে পারে না। তিনি জানান, সঠিক তদন্ত এবং তদন্তে ঘটনাটি প্রমাণিত হলে তিনি পুনর্নির্বাচন দাবি করেন।
এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া যে জাল টাকা দিয়েছে সেও অপরাধী। তেমনি যে নিয়েছে সেওতো অপরাধী।
জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক ড. ফারুকক আহাম্মদ জানান, জাল নোট দিয়ে ভোট কেনাবেচার বিষয়ে কেউই জানায়নি বা অভিযোগও দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রার্থী সুমন সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এগুলো ভিত্তিহীন ও ভুয়া প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন