দেশে প্রতি বছরই আমন ধানের মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে ইঁদুর এসে হাজার হাজার মেট্রিক টন ফসল খেয়ে ফেলে। ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষায় কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ইঁদুর হাত থেকে আমন ধান রক্ষা করে। তার পরেও উৎপাদিত ফসলের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ইঁদুরের পেটে চলে যায়। এবার আমন মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ১১ লাখ ৬০২টি ইদুর নিধন করা হয়েছে। প্রতি বছর রংপুর অঞ্চলে বিপুল পরিমান আমন ধান ইদুরের কারণে কৃষকরা গোলায় তুলতে পারে না ।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বের থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ইঁদুর নিধন হয়েছে রংপুর জেলায়। এখানে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৫২টি ইদুর নিধন করা হয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধায় ৫৪ হাজার ৭৪০, কুড়িগ্রামে এক লাথ ২১ হাজার ৯১৩টি, লালমনিরহাটে ৩৪ হাজার ১৫১টি, নীলফামারীতে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৬টি ইদুর নিধন করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের লোকজনসহ স্থানীয় কৃষকরা ইদুর নিধন অভিযানে অংশ নেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, দেশে প্রতি বছর ইদুরের কারণে ১০-১২ লাখ টন খাদ্যশস্য নষ্ট হয়ে থাকে। ইঁদুর প্রতিদিন তার শরীরের ওজনের ১০ গুণ পর্যন্ত খাবার নষ্ট করতে পারে। এ ছাড়া মলমূত্র ও লোম আমাদের খাদ্যদ্রব্যের সাথে মিশে টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্মরোগ, কৃমিরোগসহ ৩৩ প্রকারের রোগ ছড়ায়। মারাত্মক প্লেগ রোগের বাহকও এই ইঁঁদুর। ইঁদুর মাঠের ও ঘরের ফসল নষ্ট করা ছাড়াও বৈদ্যুতিক তার কেটে অগ্নিকান্ড ঘটায়, টেলিফোনের তার কেটে টেলিফোন অচল করে দেয়, কম্পিউটারসহ ঘরের কাপড়-চোপড়, কাগজপত্র কেটে নষ্ট করে। এ ছাড়া রাস্তা, বাঁধ, রেললাইনে গর্ত করার ফলে বন্যার সময় পানি ঢুকে রাস্তা, বাঁধ ও রেললাইন ভেঙে যায়। এক জরিপ অনুযায়ী আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গমের শতকরা ৪-১২ ভাগ, গোল আলুর শতকরা ৫-৭ ভাগ, আনারসে শতকরা ৬ - ৯ ভাগ এবং সেচ নালার ৭-১০ ভাগ পানি ইঁদুরের কারণে নষ্ট হয়ে থাকে। কোন স্থানে এক জোড়া ইঁদুর থাকলেই এক বছরে ৩০০০টি বংশধরের সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশে ইঁদুর নিধন অভিযান ১৯৮৩ সন থেকে পরিচালিত হচ্ছে।
এবছর এখন পর্যন্ত রংপুরে ইঁদুর নিধনে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন পুরস্কার দেয়া হয়নি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সেরা ইঁদুর নিধনকারিদের পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রায় ৬ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সাহাদৎ হোসেন বলেন, প্রতিভছরই মোট উৎপাদনের একটি উল্লেখ্যযোগ্য অংশ ইদুরের পেটে চলে যাচ্ছে। ইঁদুর নিধন অভিযানের ফলে প্রতিবছর আবাদের একটি অংশ ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ