এক সন্তানের জননী পোশাক কর্মী ছামিনা খাতুন ওরফে সাবিনার সঙ্গে দুই বছর ধরে পরকীয়া প্রেম করে আসছিল এক সন্তানের জনক রাকিবুল হাসান সুমন। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে নেন বাসা ভাড়া। এক পর্যায়ে প্রেমিক বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় প্রেমিক ও তার বন্ধুকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে প্রেমিক ও তার বন্ধু মিলে হত্যার পর প্রেমিকার লাশ ওয়ারড্রবে ভরে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে।
শুক্রবার রাতে হত্যাকান্ডের পর পিবিআই ছায়া তদন্ত করে। চারদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গাজীপুর পিবিআই হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেফতার করেছে। হত্যাকান্ডের শিকার ছামিনা খাতুন ওরফে সাবিনা (৩২) কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার দাড়ারপাড় গ্রামের আয়নাল হকের মেয়ে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানার নবব গ্রাম এলাকার মো: দুলাল মিয়ার ছেলে মো: ফারুক হোসেন (২৪), সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ থানার চৌবাড়ী এলাকার মো: শাহ আলম আকন্দের ছেলে মো: শাহরিয়ার আকন্দ (১৯), শেরপুরের নকলা থানার মাওড়গা গ্রামের মর্তুজ আলীর ছেলে মো: রাকিবুল হাসান সুমন (২৪) ও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থানার ধনকুরা গ্রামের মো: সুনু মিয়ার ছেলে নাঈম (২৭)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক এ কে এম রেজাউল করিম জানান, গ্রেফতারকৃত আসামি রাকিবুল হাসান সুমনের সাথে খুন হওয়া প্রেমিকা এক সন্তানের জননী ছামিনা খাতুন ওরফে সাবিনার প্রায় দুই বছর ধরে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক হয়। তারা দুইজন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাইনবোর্ড এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। একপর্যায়ে রাকিবুল হাসান সুমন তার প্রেমিকা সাবিনাকে ছেড়ে স্ত্রী সন্তানের কাছে চলে যায়। এতে সাবিনা প্রায় সময় প্রেমিক মো. রাকিবুল হাসান সুমনকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করত এবং বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। রাকিবুল হাসান সুমন প্রেমিকা সাবিনাকে বিয়ে করতে রাজী না হওয়ায় সাবিনা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নাওজোড় এলাকার স্থানীয় লোকজন দিয়ে প্রেমিক রাকিবুল হাসান সুমনকে ধরে এনে মারধর করায়। রাকিবুল হাসান সুমন ও তার বন্ধু নাঈম পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৩ অক্টোবর সাবিনাকে নাঈমের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসন সড়কস্থ ভাড়া বাসায় ডেকে এনে প্রেমিক রাকিবুল হাসান সুমনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। ঘটনার দিন সাবিনা বিয়ের জন্য সুমনকে চাপ দিলে প্রেমিক রাকিবুল হাসান সুমন এবং বন্ধু নাঈম সাবিনাকে বুঝানোর চেষ্টা করে। প্রেমিকা সাবিনা এক পর্যায়ে প্রেমিক রাকিবুল হাসান সুমন ও নাঈমকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলে নাঈম সাবিনার হাত চেপে ধরে ও মো: রাকিবুল হাসান সুমন গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে সাবিনাকে মেরে ফেলে। পরে প্রেমিক রাকিবুল হাসান সুমন ও বন্ধু নাঈম ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী বাসন সড়কের একটি ফার্ণিচারের দোকান থেকে ১২ হাজার টাকায় কিস্তিতে একটি ওয়ারড্রোব কিনে এনে তার ভেতরে সাবিনার লাশ রেখে তালাবদ্ধ করে রাখে। লাশ সরানোর জন্য নাঈম তার ভায়রা ভাই ফারুক হোসেনকে পিকআপ নিয়ে আসতে বলে। প্রেমিক রাকিবুল হাসান সুমন ও তার বন্ধু নাঈম লাশ সরানোর কাজে সহযোগিতা করার জন্য শাহরিয়ার আকন্দ নামে তাদের আরেক বন্ধুকে তার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসে। রাকিবুল হাসান সুমন, নাঈম, শাহরিয়ার ও ফারুক চারজন মিলে লাশ ভর্তি ওয়ারড্রোব পিকআপে উঠায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিহত সাবিনার লাশ ভর্তি ওয়ারড্রোবটি পিকআপে করে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানাধীন বি কে বাড়ি এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে আসে।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে ওই স্থানে গিয়ে নিহতের ভাই জসিম উদ্দিন তার বোনকে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মৃতদেহ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরে নিহতের ভাই মো: জসিম উদ্দীন বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, গ্রেফতারকৃতদের মঙ্গলবার গাজীপুর আদালতে হাজির করা হলে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম