বগুড়ায় আলুতে বাম্পার ফলনের আশায় স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। আলুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। বৈরি আবহাওয়ার কবলে না পড়লে এবার আলুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার চাষিরা।
উৎপাদন ভালো হওয়ার পাশাপাশি ন্যায্য দামও পাওয়ার আশা তাদের। গত মৌসুমে আলুর ভালো ফলন হলেও কিছুটা দাম কম হওয়াতে ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন বগুড়া অঞ্চলের আলু চাষিরা। পাশাপাশি আলু ষ্টোর করে চরম লোকশান গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। তবে এবছরও বিপুল পরিমাণ জমিতে নতুন করে আলু চাষ করেছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলার আলু চাষিরা।
বগুড়া কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় সাড়ে ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর ফলন ধরা হয়েছে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন।
আলু চাষিরা বেশি দামের আশায় আগাম চাষ করে বাজারে আলু তুলে থাকে। এছাড়া প্রতি বছর ৩ থেকে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আগামজাতের আলু চাষ হয়ে থাকে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আলু ক্ষেতে ভাইরাস নেই বললেই চলে। তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি কৃষককে। যে কারণে বাম্পার ফলনে চাষিরা অনেকটা আশাবাদী।
জানা যায়, বগুড়ার আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, শেরপুর, শাজানাহপুর, নন্দীগ্রাম, ও শিবগঞ্জের বেশ কয়েকটি উপজেলায় মাঠজুড়ে যে দিকে চোখ যাবে সেদিকে শুধু দেখা যায় আলুর ক্ষেত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলুর ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছেন চাষিরা। চাষিরা বলছেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় আগামজাতের আলুর ভালো ফলন হয়েছে। মাঠে মাঠে আলু উত্তোলন চলছে। আবার বিক্রিও করা হচ্ছে।
শাজাহানপুর উপজেলার খলিশাকান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, এ বছর ১১ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। আলু ক্ষেতের লক্ষণ দেখে ভালো মনে হচ্ছে। কিছু কিছু জমির আলু বাজারে তোলা হয়েছে। দাম কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন বাজারে আলুর দাম ভালো থাকলেও সামনে আলু তোলার উপযুক্ত সময়ে দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য ইতিমধ্যে আমরা আলু সংরক্ষণের জন্য উপজেলার কোল্ডস্টোরেজগুলোতে যোগাযোগ করছি। কিন্তু সেখানে ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই বুকিং দেওয়ায় আমাদের মতো ছোট চাষিদের তেমন কোনো সুযোগ পাচ্ছিনা।
শিবগঞ্জের মহাস্থানগড় এলাকার আলু চাষি সাজেদুর রহমান সাজু জানান, আমি ৯০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। গাছ খুব ভালো হয়েছে। সব কিছুর দাম বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। এ বছর বেড়েছে সার, কীটনাশকের ও শ্রমের ব্যয়। গতবছর শুরতে দাম ভালো পাওয়া গেলেও শেষের দিকে দাম কমে গিয়েছিল। তবে এ মৌসুমে আলু চাষের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া হওয়ায় ভালো ফলনের আশা করছেন তারা। এক বিঘা জমিতে ১শ থেকে ১২০ মন আলু হয়। বর্তমানে আলুর দাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, জাতীয়ভাবে চাহিদার অতিরিক্ত আলু চাষ হওয়ায় কৃষকরা ন্যায্য মূল্য হতে বঞ্চিত হয়ে থাকে। ন্যায্য মূল্য পাওয়ার লক্ষ্যে বগুড়ায় ৫ হাজার হেক্টর আলুর আবাদ কমিয়ে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষে আগ্রহী করা হয়েছে কৃষকদের। এতে কৃষকরা পাবে আলুর ন্যায্য মূল্য। সরিষা আবাদে কৃষকরা ঝুঁকলে সয়াবিন তেলের দামও নিয়ন্ত্রনে থাকবে। এবছর আলুর ক্ষেতকে রোগ বালাইমুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলার কোথাও আলুর ফলন বিপর্যয় হয়নি। আশা করা যাচ্ছে সামনে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে আলুর বাম্পার ফলন হবে। তিনি আরো জানান বগুড়ায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ৬৯০ হেক্টর। আর ফলন পাওয়া যাবে ১২ লাখ ২০ হাজার ১৮ মেট্রিক টন। গত বছর প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন ধরা হলেও সেখানে শেষ পর্যন্ত আলু উৎপাদন হয় ১৩ লাখ মেট্রিক টন। আশা করা হচ্ছে এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি আলু উৎপাদন হবে। এখন পর্যন্ত চাষি পর্যায়ে যে উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত হবে। বগুড়ার আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, শেরপুর, শাজানাহপুর, নন্দীগ্রাম, ও শিবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে আলুর চাষ হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম