কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সমাজের ভালো ও সৎ মানুষদের বিএনপির সদস্য করতে হবে। শিক্ষক, উকিল, চাকরিজীবী, পোশাক শ্রমিকসহ যাদের সমাজে সুনাম রয়েছে, তাদের দলে নিতে হবে। কোনো চাঁদাবাজ, দখলবাজ, সন্ত্রাসীকে দলের সদস্য করা যাবে না।’
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর মুক্তমঞ্চে জেলা বিএনপির উদ্যোগে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘দেশব্যাপী ১ কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বিএনপি একটি বৃহৎ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। তবে ফাঁক ফোকর দিয়ে কিছু দুষ্কৃতিকারী ঢুকে পড়তে পারে। এজন্য সজাগ থাকতে হবে যাতে কোনো সন্ত্রাসী, খুনি, চাঁদাবাজ বা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর বিএনপিতে ঠাঁই না পায়।’
তিনি আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। অথচ শেখ হাসিনা দেশকে খুবলে খেয়েছে। হঠাৎ করে কয়েকটি রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি তুলছে।
পিআর কী জনগণ বলতে পারবে—এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে রিজভী বলেন, যারা ধর্মীয় রাজনীতি করে তাদেরও কেউ কেউ এ দাবি করছে। এ পদ্ধতিতে ভোটাররা প্রার্থী নয়, দলকে বেছে নিলে দলগুলো কর্তৃত্ববাদী হয়ে পড়বে। বিতর্কিত ও অর্থ বিত্তশালী ব্যক্তিরা সহজেই এমপি হয়ে যেতে পারবেন। অথচ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কেউ চিনবে না। যে ভোটাধিকারের জন্য এত সংগ্রাম ও রক্ত বিলানো হলো, তা নিয়ে কেন এত লুকোচুরি?
তিনি আরও বলেন, আমরা ভুলে যাইনি, একবার সংস্কারের নামে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মী ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, জাকির, সুমনসহ অনেককে গুম ও খুন করা হয়েছে। ভয়াবহ দুঃশাসন কায়েম করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছে।
বিএনপির মূল লক্ষ্য প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, আমরা একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে আইনের শাসন থাকবে, মানুষ ভয়ভীতির বাইরে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে।
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দেওয়া শহীদদের স্মরণ করে রিজভী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কচি প্রাণ মীর মুগ্ধ জীবন দিয়েছে, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ বুক পেতে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছে। এই রক্তের দাম রাখতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন হবেই হবে। পিআর পদ্ধতি এ দেশে কার্যকর হবে না। পাশের দেশ নেপালে এ পদ্ধতিতে সরকার দুই মাসও টিকে না। নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের কোনো কর্মী বা দোসরকে বিএনপির সদস্য করা যাবে না। সকল সংস্কারের কথা ৩১ দফায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির টিম লিডার আহসান উদ্দিন খান শিপন, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য সাঈদুল হক সাঈদ, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম, জেলার সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি জহিরুল হক খোকন, এড. গোলাম সারোয়ার খোকন, এড. মো. শফিকুল ইসলাম, এ.বি.এম মমিনুল হক, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এড. তরিকুল ইসলাম রুমা, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আলী আজম, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান শাহীন, জেলা যুবদলের সভাপতি শামীম মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মাহমুদ, স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দিলীপ, কৃষক দলের আহ্বায়ক আবু শামীম মো. আরিফ, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তফা, জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সমীর চক্রবর্তী প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ