সিরাজগঞ্জের বেলকুচি-চৌহালী আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মণ্ডলের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। সাংগঠনিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দলের সাধারণ সম্পাদকের সাথে সমন্বয় ছাড়া এককভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন এবং কমিটির পরিচিতি সভা করাসহ নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরে বৃহস্পতিবার সকালে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম আশানুর বিশ্বাস বলেন, গত বছরের ২৩ মে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি এবং এমপি আব্দুল মমিন মণ্ডল সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ আব্দুল মমিন মণ্ডলকে সভাপতি এবং তাকে (বেগম আশানুর বিশ্বাস) সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে। কমিটির মেয়াদ ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এমনকি বিগত নয় মাসে এমপি মমিন মণ্ডল উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত কোন সমাবেশ বা কর্মসূচিতে যোগ দেননি। উল্টো দলে বিভক্তি সৃষ্টির জন্য কতিপয় হাইব্রিড আওয়ামী লীগ ও তার বেতনভুক্ত কিছু কর্মচারি নিয়ে দায়সারাভাবে এককভাবে কর্মসূচি পালন করেছে।
সংবাদ সম্মেলন উল্লেখ করা হয়, সভাপতি নির্বাচিত হবার পর থেকেই এমপি মমিন মণ্ডল গঠনতন্ত্র পরিপন্থী এক তরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করছেন। বেলকুচি সদর ইউনিয়নের কমিটি এককভাবে করেছেন। কমিটির সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম বেগমকে না জানিয়ে এমপির সমর্থনপুষ্ট সভাপতি আল-আমিন এককভাবে কমিটি করে সভাপতি মমিন মণ্ডলের কাছে জমা দেন। মমিন মণ্ডল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশানুর বিশ্বাসের সাথে সমন্বয় ছাড়াই এককভাবে বেলকুচি সদর ইউনিয়ন কমিটি অনুমোদন করেন এবং কমিটির পরিচিত সভা অনুষ্ঠান করেন। দৌলতপুর ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি এমপি মমিন মণ্ডল পরিচিত সভার আয়োজন করেছেন। আমরা জানতে পেরেছি ওই প্রস্তাবিত কমিটিতে এমপির মদদপুষ্ট এহিয়া ও মহির নামে দুজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ীকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেয়া হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোন সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীকে ও অনুপ্রবেশকারী দলীয় পদ দেয়া যাবে না। অথচ তিনি এসমস্ত কাজ করে যাচ্ছেন। জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ও নাশকতা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আমিরুল ইসলাম আলামিনকে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দিয়েছেন। এমনকি জেলা পরিষদ নির্বাচনেও তাকে বিজয়ী করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
এ অবস্থা চলতে থাকলে জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত বেলকুচি-চৌহালী আসনটি আওয়ামী লীগের হাত ছাড়া হবার শঙ্কা রয়েছে। তাই দ্রুত বিষয়টি নিরসনের জন্য সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সাবেক সহ-সভাপতি গাজী লুৎফর রহমান, সাবেক দপ্তর সম্পাদক গাজী আবদুল মালেক, সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মহাদেব চন্দ্র সাহা, সাবেক কার্যকরী সদস্য এমদাদুল হক, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ চান মোহাম্মদসহ দলীয় নেতাকর্মী ও ইউপি চেয়ারম্যাগন উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমপি মমিন মণ্ডলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. কে.এম হোসেন আলী হাসান জানান, বেলকুচি পাল্টাপাল্টি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। দু'পক্ষই লিখিতভাবে অবহিত করেছে। চলতি মাসের মধ্যেই আমি দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা করব। দু'পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করতে না পারলে কেন্দ্রীয় নেতাদের শরণাপন্ন হতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন