কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের সামনেই টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। এ সময় সন্ত্রাসীরা ঠিকাদারসহ কয়েকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে কুষ্টিয়া পৌরভবনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ঠিকাদার টেন্ডার গ্রহণ প্রক্রিয়া বাতিলসহ পুনরায় টেন্ডার আহ্বানের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী কয়েকজন ঠিকাদার জানান, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখে কুষ্টিয়া শহর এবং শহরতলীর ১০ টি হাট-বাজার পহেলা বৈশাখ হতে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এক বছর মেয়াদী টোল আদায়ের লক্ষ্যে ইজারার দরপত্র আহ্বান করে কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ। উক্ত তারিখ হতে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দরপত্র বিক্রি করা হয় এবং বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) দুপুর একটা পর্যন্ত সিডিউল জমা প্রদানের সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সকাল থেকেই পৌর ভবনস্থ মেয়রের কার্যালয়ের নিচ তলা এবং দোতালাসহ টেন্ডার বক্সের আশেপাশে পাহারা বসায় ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। এ সময় সিডিউল দাখিল করতে গেলে প্রথমে বাধা দেওয়া হয় এবং জোর পূর্বক সিডিউল হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
ভুক্তভোগীদের একজন ঠিকাদার ইব্রাহিম হোসেন জানান, বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে তিনিসহ কয়েকজন মিলে কুষ্টিয়া পৌর ভবনের দোতলায় মেয়রের কার্যালয়ের সামনে রক্ষিত টেন্ডার বক্সে সিডিউল ফেলতে গেলে কুষ্টিয়া শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকীর নেতৃত্বে ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আফিল উদ্দিন, শহর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসিব কোরাইশী, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস খন্দকার, জুয়েলসহ ২০-২৫ জন ক্যাডার পুলিশের সামনেই তার হাত থেকে জোর পূর্বক সব কয়টি সিডিউল ছিনিয়ে নেয় এবং পে অর্ডারসহ সমস্ত সিডিউল ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় তাকেসহ তার সাথে থাকে লোকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। শুধু ইব্রাহিম হোসেনই নন ক্যাডাররা সিডিউল ফেলতে যাওয়া আরো কয়েকজনকেও মারপিট করে তাদের সিডিউল ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের বাধার কারণে অনেকই সেখানে সিডিউল ফেলতে পারেনি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ইব্রাহিম হোসেন দরপত্র প্রক্রিয়া বাতিলসহ পুনরায় দরপত্র আহ্বানসহ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। এ ঘটনায় তিনি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান।
অভিযোগ প্রসঙ্গে শহর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসিব কোরাইশী দাবি করেন তিনি দরপত্র জমা প্রদানের সময় কাউকে বাধা প্রদান করেননি। তিনি বলেন, আমি আমার একটি দরপত্র জমা প্রদানের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, পুলিশের সামনে সন্ত্রাসী কায়দায় টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুষ্টিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহিন উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কুষ্টিয়া পৌরসভার ইতিহাসে প্রকাশ্যে দরপত্র জমা প্রদানে বাধা প্রদান এবং ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌর বিধি অনুযায়ী এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খান জানান, সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে তিনি বিষয়টি জেনেছেন। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ বা ভুক্তভোগী কেউ এ ব্যাপারে লিখিত কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন