শিরোনাম
৩১ মে, ২০২৩ ১৯:২২

ভয়ংকর ডাকাত চক্রের ৫ জনই স্বজন

ফারুক আল শারাহ, লাকসাম প্রতিনিধি:

ভয়ংকর ডাকাত চক্রের ৫ জনই স্বজন

প্রতীকী ছবি

ভয়ংকর আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য রাসেল, মামুন, মোহাম্মদ আলী, বাদশা ও হাবিব ওরপে রিপন। তারা সকলেই স্বজন। মামুন ও মোহাম্মদ আলী আপন ভাই। বাদশা তাদের আপন ভগ্নিপতি। রিপন ও রাসেল আপন খালাতো ভাই। তারা সংঘবদ্ধভাবে ডাকাতি করেন। সকলেই দুর্ধর্ষ ডাকাতিতে পারদর্শী। শুধু ডাকাতি নয়; নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত তারা। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৩টি মামলা। পুলিশের অভিযানে মাঝে-মধ্যে গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁকফোকরে কিছুদিন পর জামিনে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসেন। বারবার গ্রেফতার ও মুক্তির পর বেরিয়ে এসেই ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্মে আরো বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে চাঞ্চল্যকর একটি ডাকাতির ঘটনায় দলের একাধিক সদস্য গ্রেফতারের পর পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতির এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটন করেছে।

আন্তঃজেলা ৫ ডাকাত সদস্যের মধ্যে রয়েছে, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ভেলানগর গ্রামের মৃত আছমত আলীর ছেলে মামুন ও মোহাম্মদ আলী, একই গ্রামের মৃত জারু মিয়ার ছেলে রাসেল, চান্দিনা উপজেলার ইত্যারপুর গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে বাদশা ও নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর গ্রামের মৃত শাহ আলমের ছেলে হাবিব ওরপে রিপন। দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের দলে রয়েছেন আরো অনেক সক্রিয় সদস্য রয়েছেন।    
তথ্য অনুসন্ধানে ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর ভোর রাতে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে দেশের সুপরিচিত শিল্প প্রতিষ্ঠান ভাইয়া গ্রুপের মালিকানাধীন ব্রিটিশ ট্যোবাকো কোম্পানির পরিবেশক মেসার্স মমিন স্টোরে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাত দলের সদস্যরা ওই প্রতিষ্ঠানের নৈশপ্রহরীকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ও হত্যার হুমকি দিয়ে অফিসের পাশে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে।

২৬ নভেম্বর মমিন স্টোরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে গিয়ে মূল গেইটের তালা ভাঙ্গা দেখে নিরাপত্তা প্রহরী সুলতানকে ডাকার পরও কোন শব্দ না পেয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ডাকাতির আলামত দেখতে পায়। ডাকাত দলের সদস্যরা ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ টাকার বিভিন্ন ব্যান্ডের সিগারেট ও বিভিন্ন মালামাল লুট করে। ওইদিনই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সমির চক্রবর্তি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জনকে অভিযুক্ত করে নাঙ্গলকোট থানায় ডাকাতির একটি মামলা দায়ের করেন। 

নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নোয়াখালী জেলার সদর সুধারাম এলাকার চরমটুয়া গ্রামের জহির আহম্মদের ছেলে দেলোয়ার হোসেন প্রকাশ মিলনকে চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ এলাকা থেকে আটক করে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক একই এলাকা থেকে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার ভেলানগর গ্রামের মৃত আছমত আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী ও চট্টগ্রাম পতেঙ্গা এলাকা থেকে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার ভেলানগর গ্রামের মৃত ঝান্ডু মিয়া বেপারীর ছেলে রাসেলকে আটক করে।

তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ উদ্ধার করা হয়। ওইসময় গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে তারা আইনের ফাঁকফোকরে আদালতের নির্দেশনায় জামিনে বেরিয়ে আসার পর আরো বেশি সক্রিয় হয়ে উঠে। তারা ডাকাতিসহ নানা অপরাধ কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের আনাগোনায় নাঙ্গলকোটসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভয়ংকর এ ডাকাত চক্রের সদস্যদের অপতৎপরতায় পুলিশ প্রশাসন হতাশ। বিভিন্ন মামলায় পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতারে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও তারা বারবার কৌশল পাল্টে গ্রেফতার এড়িয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য মামুন, মোহাম্মদ আলী, বাদশা, হাবিব ওরফে রিপন ও রাসেল ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িত। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে দোকান, গোডাউন ও জুয়েলার্সে ডাকাতির কাজে বেশ পারদর্শী। কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায়ও তাদের অনেক সোর্স ও চক্রের সদস্য রয়েছে। যারা তাদেরকে ডাকাতির কাজে বিভিন্ন তথ্যাদি প্রদান, স্থান পরিদর্শনসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে। এই চক্রের অপরাধমূলক তৎপরতায় ইদানিং কুমিল্লার বিভিন্ন থানায় চুরি ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্ম অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনায় স্থান পায়।
নাঙ্গলকোট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফারুক হোসেন জানান, ডাকাতিসহ যে কোন ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা রোধে পুলিশ প্রশাসন সর্বদা তৎপর রয়েছে।  

বিডি প্রতিদিন/এএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর