বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকে উত্তাল বঙ্গোপসাগর। সাগরে আছড়ে পড়ছে বিশাল বিশাল ঢেউ। এই অবস্থায় উত্তাল সাগরে টিকতে না পেরে সুন্দরবনসহ উপকূলের মৎস্য বন্দরগুলোতে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার ফিশিং ট্রলার। এতে বন্ধ হয়ে গেছে সাগরে ইলিশ আহরণ।
এছাড়া বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা, আলোরকোল ও চরখালী এলাকার বনের ওপর দিয়ে চার ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। উপকূলজুড়ে দুই দিন ধরে বৈরী আবহাওয়ায় বাগেরহাটসহ সুন্দরবনের ওপর দিয়ে থেমে থেমে ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, বৈরী আবহাওয়া ও পূর্ণিমার প্রভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী করমজল পর্যটন কেন্দ্র। এতে উপকূলের নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে।শরণখোলা সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন জানান, সাগরে প্রচণ্ড ঢেউ হচ্ছে। ইলিশ আহরণের হাজার হাজার ফিশিং ট্রলার শুক্রবার দুপুর থেকে সুন্দরবন ও উপকূলের শরণখোলা, রায়েন্দা, মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহগাটের কেবি মৎস্য বন্দর, মোংলা, পাথরঘাটা, মহিদপুর, নিদ্রাছখিনা বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ে রয়েছে।
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলেপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ জানান, বঙ্গোপসাগরের গভীর থেকে বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সুন্দরবনের দুবলার চর ও আলোরকোলে। সুন্দরবনে ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় চার ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে সুন্দরবন। বনরক্ষীরা সবাই সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান করছেন। কটকা অভয়ারণ্য অফিস এলাকা তুলনামূলক উঁচু হলেও সেখানেও জোয়ারের পানিতে অফিস চত্বর ও বন তলিয়ে গেছে।
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার মো. আজাদ কবির জানান, স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন ফুট উচ্চতার পানিতে প্লাবিত হয়েছে করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি। তবে এই কেন্দ্রের বন্যপ্রাণী এখনো নিরাপদ রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখেই সুন্দরবনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন জায়গায় উঁচু টিলা তৈরি করা হয়েছে। যাতে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড এই ম্যানগ্রোভ বনে পানি বাড়লে বন্যপ্রাণীগুলো সেসব উঁচু টিলায় আশ্রয় নিতে পারে। করমজল প্লাবিত হওয়ায় পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে।
সুন্দবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হোসেন জানান, বৈরী আবহাওয়ায় সাগর আশান্ত হয়ে ওঠায় শত শত ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিয়েছে। এসব ফিশিং ট্রলারে থাকা জেলেদেরে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার বনরক্ষীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কুমার সত্বিক জানান, বাগেরহাটের সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসকারী শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, বাগেরহাট সদরসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার পরিবারের বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাবার খবর পাওয়া গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত