বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলের ডাকা অবরোধের প্রথম দিনে বগুড়ার একাধিক স্থানে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, মহাসড়ক অবরোধ, চোরাগুপ্তা হামলা, অগ্নিসংযোগ ও যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ঢাকা-বগুড়া, বগুড়া-রংপুর ও বগুড়া-নওগাঁ সড়কে অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুততার সাথে নাশকতা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়েন। দিনভর এসব ঘটনায় ৫ বাসযাত্রী ও আওয়ামী লীগের ৪ কর্মীসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। জেলা পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ ছাড়াও বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে অবরোধের সমর্থনে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বনানী, মাটিডালি ও বাঘোপাড়া অংশে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের হাতে লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে। শ্যামলী পরিবহন, ঢাকাগামী শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের বাস ভাঙচুর করা হয়। পরে তারা ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অবরোধকারীরা পিছু হটে যায়।
এসময় পুলিশের উদ্দেশে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে অবরোধকারীরা। একই সময়ে বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কে সদরের এরুলিয়ে থেকে কাহালুর দরগাহাটা পর্যন্ত অবরোধ করেন অবরোধ সমর্থকরা। অবরোধকারীরা সড়কের পাশে লুকিয়ে থেকে চোরাগুপ্তা হামলা করে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। দুপুর ১২টার সময় বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বনানী লিচুতলায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে এবং ঢাকামুখী বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর শুরু করে। দুইটি ট্রাক ও কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে।
খবর পেয়ে শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিএনপি-জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে চারটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। চার থেকে পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ককটেলের আঘাতে শাজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব হোসেন ছান্নু ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হকসহ আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতা আহত হন। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া বগুড়া সদরের বাঘোপাড়ায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে গাড়ি ভাঙচুর চালায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তারা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রাখে এবং রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও এপিবিএনের যৌথ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় তারা পার্শ্ববর্তী একটি ইটভাটা থেকে পুলিশের উদ্দেশে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। এদিকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিজিবি সদস্যরা টহল জোরদার করেছে।
শাজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব হোসেন ছান্নু জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে যানবাহন ভাঙচুর শুরু করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে জামায়াত ও বিএনিপর নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে আহত করে। তারা ককটেল চার্জ করে।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা জানান, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিনা উসকানিতে হামলা করে নেতাকর্মীদের আহত করছেন। চালাচ্ছেন গণগ্রেফতার।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, জেলার গুটিকয়েক স্থানে দুর্বৃত্তরা চোরাগুপ্ত হামলা চালিয়ে মানুষের জানমালের ক্ষতির চেষ্টা করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক প্রহরায় রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, যে কোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধ করতে বগুড়ায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। এর মধ্যে তিন প্লাটুন সব সময় মাঠে কাজ করছেন এবং বাকি এক প্লাটুন রিজার্ভ থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই