বিরামহীন বৃষ্টি, অস্বাভাবিক জোয়ারে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পটুয়াখালীর কলাপাড়য় অন্তত পাঁচটি জায়গায় সাড়ে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। যেকোন সময় জলোচ্ছ্বাসে গোটা এলাকায় প্লাবনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সাথে আমন ফসলহানির শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব বেড়িবাঁধের ভাঙন ঠেকাতে জরুরি মেরামতের কাজ করলেও তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার নীলগঞ্জের গৈয়াতলা, বালিয়াতলীর চরবালিয়াতলী, চম্পাপুরের করমজাতলা ও দেবপুরে ভাঙনের যেন তাণ্ডব চলছে। এ ছাড়া নিজামপুরে অন্তত পাঁচ শত মিটার বেড়িবাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েক দফা জলোচ্ছ্ব সের ঝাপটায় রাবনাবাদ পাড়ের করমজাতলার প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধের রিভার সাইটসহ মূল বাঁধ ৮০ শতাংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধের পাড়ের মানুষ চরম বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। ওইসব এলাকার মানুষ তাদের সম্পদ রয়েছে দূর্যোগের ঝুঁকিতে।
এদিকে ধানখালী ইউনিয়নের পশ্চিম লোন্দা গ্রামের টিয়াখালী নদীর তীর এলাকায় প্রায় ৪০ বছর ধরে পশ্চিম লোন্দা গ্রামের টিয়াখালী নদী তীর সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করে আসছে ২৫০টি পরিবার। এ নদীর তীরে বেড়িবাঁধ না থাকায় বহু বছর ধরে প্রতিনিয়ত দু’দফা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে তারা। তলিয়ে যায় একর কৃষি জমি, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসত ভিটা। তখন চলাচলের একমাত্র বাহন হয় ভেলা কিংবা নৌকা। ওই গ্রামের ৩ কিলোমিটার এলাকায় টেকসই রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে এ অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে বানভাসী মানুষগুলো।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এ বছর গত এক মাস ধরে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই সাথে চলছে নিম্নচাপের প্রভাব। অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড় বাড়ছে। ভাঙছে নদী তীর। দূর্যোগ ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। নদীর বাঁধের সংস্কার না হওয়ায় চলতি আমন মৌসুমে হাজার হাজার কৃষক আমন ফসল ঘরে তোলার বিষয়টি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
বালিয়াতলী ইউনিয়নের চরবালীয়াতলী গ্রামের মো, জনি মিয়াজী জানান, জলোচ্ছ্বাসে জিও টিউব, জিওব্যাগসহ বাঁধের টপসহ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঢেউয়ের ঝাপটায় সব শেষ, এখন বাঁধের মধ্যে পানি ঢুকছে। সবাই আতঙ্কে আছেন। বাঁধের যতটুকু আছে, তাও আবার জলোচ্ছ্বাসে হানা দিলে সব ভেসে যাবে। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে গেলে গ্রাম প্লাবিত হবে-এমন শঙ্কায় যেন প্রতিটি পরিবারের বুক চেপে বসে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জামান হোসেন বলেন, রাতে ঘুম আসে না। প্রতি দিন ভয় নিয়ে থাকতে হয়। শুধু বাড়িই নয় গবাদি পশু ঝুঁকিতে আছে। বাঁধ রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলা হলেও সেগুলোর অধিকাংশই ভেসে গেছে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন কলাপাড়া ও ওয়াটারকিপার্য বাংলাদেশের উপকূলীয় সমন্বয়ক মো, মেজবাহ উদ্দিন মান্নু বলেন, বেড়িবাঁধ কয়টি গ্রামের সমস্যা নয়, এটি পুরো উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ছাড়া এখানে মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করা সম্ভব নয়। স্থানীয়দের ভোগান্তি কমাতে জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো.শাহআলম জানান, এমনিতেই প্রাকৃতিকভাবে নদীর পশ্চিম তীরের বরাবর ভাঙন প্রবণতা বেশি থাকে। একারণে রাবনাবাদ পাড়ের বাঁধ ঝুঁকিতে থাকছে। তারপরও করমজাতলায় ইতিপূর্বে জরুরি মেরামত করা হয়েছে কিন্তু টিকছে না। দেবপুরের বাঁধ মেরামত করার পরিকল্পনা রয়েছে। চরবালিয়াতলীতে জিওব্যাগ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল