শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
গল্প

মায়াবতী কাক

আমেনা খানম

মায়াবতী কাক

টুলু আজ সকাল থেকেই ভীষণ জেদ করছে তাকে নানাবাড়ি বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এদিকে কেবলই তার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। টুলুর মা, তাকে অনেক করে বুঝিয়েও কোনোভাবেই তাকে সকালের নাশতায় রাজি করতে পারছেন না! নিরূপায় হয়ে তিনিও যথারীতি দুপুরের রান্নার জোগাড় করতে লাগলেন।

টুলু, মা রে! আর অভিমান করিস না। খেয়ে নে মা, আজ বাবা আসুক, তারপর একটু সময় নিয়ে নিশ্চয় আমরা তোমাকে নানাবাড়ি নিয়ে যাব। টুলুর গাল বেয়ে লোনাজল ঝরছে। এবার মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে টুলু বলল, মা! সত্যি যাব তো আমরা। সত্যি, সত্যি, সত্যি!

এবার টুলুর লাফাতে বাধা দেয় আর কে। কী মজা! ও হো হো কী মজা! আমরা নানাবাড়ি যাব... যা মন চায় খাব, সারা দিন খেলব, এরকম আরও কতশ’ কথায় সুর দিয়ে সারা ঘরময় উল্লাস করছে সে।

টুলুর এত আনন্দ দেখে তার মার মনটাও ভালো হয়ে গেল। প্রায় এক সপ্তাহের জন্য এবার টুলু ও তার মা নানাবাড়িতে বেড়াতে গেল। প্রতিটি দিনই যেন আনন্দ আর আনন্দ। টুলুর নানি কত রকমের পিঠা-পুলি যে তাকে তৈরি করে খাওয়ালেন আর সঙ্গে দেওয়ার জন্য কত রকম শুকনো পিঠা, তেলেভাজা মচমচে পিঠা তৈরি করছেন, তা অত পিঠার নামই টুলু মুখস্থ রাখতে পারছে না। কীভাবে যে পাঁচটা দিন এরই মধ্যে কেটে গেছে তা ভাবতেই টুলুর মন ভীষণ খারাপ করছে। বাসায় গেলেই তো আবার সেই রুটিন মাফিক জীবনের কড়াকড়ি শাসন। টুলুর এত ধরাবাঁধা নিয়ম একদম ভালো লাগে না। টুলুর গাছগাছালি, ফুল-পাখিদের সঙ্গে সবসময় আড্ডায় মেতে থাকতে মন চায়। যেন টুলু ওদের সব ভাষাই বোঝে! টুলু সুযোগ পেলেই তার বাবাকে এসব কথা বলতেই টুলুর বাবা হেসে হেসে টুলুর মাকে ডেকে বলে, ওগো কোথায় গেলে...

একটু শুনে যাও আমাদের টারজান কন্যা কী সব বলছে...,

টুলুর মাও না হেসে আর পারে না।

টুলুর নীরবতা দেখে টুলুর নানাভাই তাকে কাছে নিয়ে বলল, আপু! তোমার কেন মন খারাপ আমি কিন্তু ঠিক জানি। টুলু চমকে উঠে বলল, সত্যি নানাভাই! বলো তো নানাভাই, কেন আমার মন খারাপ?

হুম, শোন তাহলে আমিও ছোটবেলায় বাগানে বাগানেই বেশি সময় কাটাতাম। কত ফুল আর পাখি যে আমার বন্ধু ছিল তা বলে শেষ করা যাবে না। আমি তাহলে তোমার মতোই হয়েছি, তাই না নানাভাই? তুমি আমার চাইতেও অনেক অনেক ভালো। আপু শোন, মন দিয়ে পড়ালেখা করবে আর ছুটি পেলেই আমার কাছে চলে আসবে কিন্তু, ঠিক আছে!

টুলু এবারের মতো নানাবাড়িতে কালকের দিনটিই থাকতে পারবে। কেননা স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য প্রতিদিন প্রাকটিস করতে হবে বাবার দেওয়া আরও অনেক অনেক বিধান আছে।

নানাবাড়ির ঘাট বাঁধানো পুকুরপাড়ে বসে এসব ভাবতে ভাবতেই নানাভাইদের বড় নিমগাছের ডালে এসে বসল এক বড় সাইজের কাক। পাখিটাকে টুলুর একটু বড় বলেই চোখে পড়ল। সে দৌড়ে গিয়ে নানাকে ডাকতে যাবে, হঠাৎ টুলুর চোখে পড়ল কাকের মুখে একটি খেলনা সিলভারের খেলনা হাঁড়ি। টুলু একটু আশ্চর্য হয়ে বেশ কিছু সময় ওদিকটাতেই চেয়ে রইল। তার মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি এলো। সে করুণ কণ্ঠে কাকটির কাছে হাঁড়িটি প্রিয় উপহার হিসেবে চাইতেই খানিকক্ষণ কাকটি এ ডাল, ও ডালে চড়ে একলাই উঠোনে নেমে এলো। আহা! কাকের এত মায়া দেখে টুলু তার নানাভাইকে বলে একখন্ড রুটি নিয়ে এলো মায়াবতী কাকটির জন্য। আরও কত কী বলে বলে রুটির খন্ডগুলো কাকটিকে খাওয়াল। তার নানাভাই এসব কিছু দূর থেকে দেখল আর প্রাণভরে তার নাতনির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইল। টুলু সবসময় তার কাক বন্ধুর দেওয়া উপহারটি খুব যতেœ তার শোকেসে তোলা অন্যান্য খেলনার পাশে সাজিয়ে রাখে। এটি তার প্রিয় মায়াবতী কাকের দেওয়া সেরা উপহার! বাসায় এসে অকপটে তার বাবাকে এই সাত দিনের সব গল্প বলতে বলতে জিজ্ঞাসা করল বাবা! আর কোনো দিন মায়াবতী কাকের সঙ্গে দেখা হলেও তো আমি তাকে চিনতে পারব না,

কেননা সব কাকই তো একই রকম দেখতে, তাই না বাবা!!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর