যেসব ভারতীয় নাগরিক পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমালোচনা করছেন, তাদের কঠোর সমালোচনা করলেন দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান ও অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মনোজ নারাভানে।
তিনি বলেছেন, “যুদ্ধ কোনও রোমান্টিক ব্যাপার নয় এবং এটি বলিউডের ফিল্মের মতো উপভোগ্যও নয়।”
সোমবার পুনে জেলায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, সীমান্ত এলাকায় বসবাসরকারী লোকজন সারাক্ষণ একধরনের ট্রমা বা ভীতিতে ভোগেন। কারণ যুদ্ধের কারণে স্বজণের মৃত্যু এবং আশ্রয়হীন হয়ে যাওয়া তারা জন্ম থেকেই দেখে আসছেন।
মনোজ নারাভানে বলেন, “যুদ্ধে যারা স্বজন হারান, তাদের সেই বেদনা, ভীতি পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত স্থায়ী হয়। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার বা পিএসটিডি বলে একটি মনোবিজ্ঞানে একটি টার্ম প্রচলিত আছে; যারা কোনও ভয়াবহ বা নিষ্ঠুর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন, তারা পিএসটিডিতে আক্রান্ত হন এবং ২০ বছর পর্যন্ত তাদের মধ্যে এই ট্রমা থেকে যায়। পিএসটিডিতে আক্রান্তদের মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়।”
ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, সরকারের নির্দেশ পেলে এখনও তিনি যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত, তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি সবসময় কূটনীতিকেই প্রথম পছন্দ হিসেবে বিবেচনা করেন।
তিনি বলেন, “যুদ্ধ রোমান্টিক কোনও ব্যাপার নয়, আপনাদের বলিউডের মুভিও নয়। এটা খুবই গুরুতর একটি ব্যাপার। শেষ পন্থা হিসেবে যুদ্ধ বা সহিংসতা বেছে নেওয়া উচিত সেই সময়ে, যখন যাবতীয় কূটনীতি ব্যর্থ হয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন যে, এখন যুদ্ধের সময় নয়। যদিও কিছু নির্বোধ মানুষ আমাদের ওপর জোর করে যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু এজন্য আমাদের উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই।”
মনোজ নারাভানে বলেন, “এখনও অনেকে প্রশ্ন করছেন যে কেন আমরা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে গেলাম না। একজন সৈনিক হিসেবে, যদি আমার কাছে নির্দেশ আসে— তাহলে আমি যুদ্ধে যাব; কিন্তু আমার কাছে সেটি প্রথম পছন্দ হবে না।”
“আমার প্রথম পছন্দ হবে কূটনীতি; অর্থাৎ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করা। এটি শুধু দুই বা একাধিক দেশের মধ্যে নয়, আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও এর চর্চা থাকা উচিত। সহিংসতা কোনও সমাধান হতে পারে না।”
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ২৬ জন পর্যটক নিহত হন।
এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। তবে পাকিস্তান সরাসরি এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। তারপরও গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। নয়াদিল্লির তথ্যানুযায়ী, এ অভিযানে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, নিহত হয়েছে ৩১ জন এবং আহত হয়েছে ৫৭ জন।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর তিন দিনের মধ্যে ‘অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস’ নামে অভিযান শুরু করে পাকিস্তান। আরবি ‘বুনিয়ান উন মারসুস’-এর বাংলা অর্থ সীসাঢালা প্রাচীর। পাকিস্তানের হামলায় ভারতেও ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এদিকে পাল্টাপাল্টি এই সংঘাতের মধ্যেই তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন কর্মকর্তাদের চাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। শনিবার থেকে কার্যকর হয় এই যুদ্ধবিরতি। সূত্র: এনডিটিভি, দ্য হিন্দু
বিডি প্রতিদিন/একেএ