আখের সঙ্গে ধান চাষে সফলতা পেয়েছেন গবেষকরা, সম্প্রতি এক গবেষণায় বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সফল হয়েছেন। এতে উত্তরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি বদলে দেওয়া সম্ভব বলে দাবি গবেষকদের। আখ চাষে সময় লাগে কমপক্ষে এক বছর। দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল এ ফসল চাষে লোকসান হওয়ায় গত এক দশকে পাবনাসহ আশপাশের জেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমেছে আখের উৎপাদন। ফলে কাঁচামালের অভাবে মাড়াই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হিমশিম খেতে হয় উত্তরবঙ্গের রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোকেও। সংকট দূর করতে আখ চাষ লাভজনক করে কৃষককে আগ্রহী করতে আখের সাথি ফসল হিসেবে ধান চাষের পরিকল্পনা করেন বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। তিন বছরের ধারাবাহিক চেষ্টায় পরীক্ষামূলক উৎপাদনে সফলতা আসায় এখন চলছে খুঁটিনাটি পরীক্ষা। সীমাবদ্ধতা দূর করে দ্রুতই কৃষক পর্যায়ে এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়ার আশাবাদ গবেষকদের। কৃষিবিজ্ঞানীরা জানান, এ পদ্ধতিতে ধান চাষে সেচ ও জ্বালানি খরচ প্রচলিত পদ্ধতির এক-চতুর্থাংশ। পাশাপাশি জমির বহুমুখী ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভবান হবেন কৃষকরা। বিএসআরআই-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামস তাবরিজ জানান, সাধারণত উত্তরাঞ্চলে এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে প্রায় আড়াই হাজার লিটার পানি লাগে। কিন্তু আখ খরাসহিষ্ণু ফসল। ধান ও আখ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ফসল হওয়ায় এই দুই ফসলের মিশ্র চাষে পানি সাশ্রয় হয়। ফলে সেচ ও জ্বালানি খরচ কমে। একই সঙ্গে ধানের জন্য প্রয়োগ করা সার আখেরও কাজে লাগে। একই চাষে, খরচে দুই ফসল। তাই সার্বিকভাবে কৃষকের ভালো মুনাফা আসবে। বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আখ ও ধানের যৌথ চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, ‘এ পদ্ধতির চাষে কৃষকের খরচ এক-তৃতীয়াংশ কমবে। যেহেতু আখ চাষে সময় বেশি লাগে, এ কারণে কৃষক শুধু আখ চাষ করে খুব বেশি লাভবান হচ্ছিলেন না। তাই আমরা খরচ কমিয়ে অর্থনৈতিক লাভের উপায় খুঁজছিলাম। সে ক্ষেত্রে আখ ও ধানের যৌথ চাষ খুবই উপযোগী। আমরা এখন চূড়ান্ত পরীক্ষা করছি। দ্রুতই এটি কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হবে।’ তিনি আরও জানান, বেড পদ্ধতি ও সরাসরি আবাদ দুইভাবেই আখ ও ধানের যৌথ চাষ করা সম্ভব। এতে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকায় প্রয়োজন হবে না ভূগর্ভস্থ পানি। ফলে কমবে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খরচ। নতুন প্রযুক্তির এ চাষাবাদ পদ্ধতি সম্প্রসারিত হলে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারে কৃষি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, আখ অর্থকরী ফসল। ধান ও আখের যৌথ চাষ নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক বড় সম্ভাবনা চাষিদের জন্য। বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. কবির উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যেহেতু ধান বাংলাদেশের প্রধান ফসল, সে কারণে আখ খেতে ধানের চাষে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে বলেই আমাদের ধারণা। এতে একই খরচে কৃষক বাড়তি ফসল পাবে।’