গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২৮৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে ২৬১ জনই বরিশাল বিভাগের। বরিশাল বিভাগ হিসেবে ডেঙ্গু সংক্রমণে শীর্ষে থাকলেও ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে এই মশাবাহিত রোগটির প্রকোপ মোটেও সিটি করপোরেশন বা বিভাগীয় শহর এলাকায় নয়। ডেঙ্গু মূলত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বরগুনার মতো প্রান্তিক জেলায়।
জানা গেছে, বরগুনা জেলার পৌর এলাকাই মূলত ডেঙ্গুর হটস্পট। ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি প্রাণঘাতী এই রোগটি গ্রামাঞ্চলেও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ পর্যন্ত সারা দেশে ৫ হাজার ৩০৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু বরগুনা জেলাতেই আক্রান্ত হয়েছেন ১৪শ’র বেশি মানুষ। অর্থাৎ ডেঙ্গুর পরিপূর্ণ মৌসুম শুরুর আগেই ভয়ংকর হয়ে উঠেছে বরগুনার ডেঙ্গু পরিস্থিতি। মোট আক্রান্তের ২৪ শতাংশ এই জেলাটির। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বরগুনার স্থানীয় হাসপাতালগুলো।
এ বছর (২০২৫) এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ৩৬২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। যার মধ্যে ৫৮ শতাংশ রোগীই বরগুনার। চলতি বছর বিভাগটিতে মারা যাওয়া চারজনই বরগুনার বাসিন্দা। গত বছর বিভাগে ৮ হাজার ৪৫৭ জন হাসপাতালে এসেছিলেন। এর মধ্যে বরগুনারই ছিলেন ২ হাজার ৩৬৭ জন।
বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন চারজন। এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৮৪ জন। এরপর পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ২১০ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৪ জন, বরিশাল জেলায় ১৫৩ জন, বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১১ জন, পিরোজপুরে ১০৬ জন, ভোলায় ৩২ জন ও ঝালকাঠিতে ১০ জন। পিরোজপুর ও ভোলা জেলার হাসপাতালে কোন ডেঙ্গু রোগী নেই। এছাড়া ঝালকাঠিতেদ দুই জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে দুই জন, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে আট জন এবং বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বরগুনায় কেন এরকম হচ্ছে। সেটা নিখুত পাবে বলতে পারবো। বিষয়টি জানার জন্য বুধবার সকাল থেকে বরগুনায় রয়েছি। যা দেখতে পেয়েছি। রোগী ও বাহক রয়েছে। এটা কিভাবে নিয়ন্ত্রন করা যায়, সেই বিষয় নিয়ে চিকিৎসক, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথেও কথা বলেছি।
তবে বরগুনা কিভাবে ডেঙ্গুর হটস্পট হয়ে উঠলো তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান বা গবেষণা না থাকায় এই প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে হাতে নেয়া জাতীয় কার্যক্রমগুলো ধীরগতি। জেলা শহরগুলোতেও ডেঙ্গুর কার্যক্রম দায়সারা বলেই জানাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
তবে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গুও করোনার মতো মহামারী রূপ নিতে পারে। দেশের তুলনামূলক প্রান্তিক এলাকাগুলোতেও ডেঙ্গুর এমন বিস্তার অশনি সংকেতই দিচ্ছে। একসময় ডেঙ্গু নগরের রোগ হিসেবে পরিচিত থাকলেও গত কয়েক বছরে সেই ধারণা পাল্টে দিচ্ছে এডিস মশাবাহিত এই রোগটি।
আজ বুধবারও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। জানানো ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮৮ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ সময় ডেঙ্গুতে কারো মৃত্যু হয়নি। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৬১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুজন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল