বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে যদি বড় ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে বৈশ্বিক জিডিপি ভয়াবহভাবে সংকুচিত হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আইএমএফের মতে, এই অর্থনৈতিক সংকোচনের মাত্রা হতে পারে ইউরোপের প্রধান দুই অর্থনীতির দেশ ফ্রান্স ও জার্মানির সম্মিলিত জিডিপির সমান। বিবিসির একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।
আইএমএফের এই সতর্কতা সামনে আসার পেছনে রয়েছে নভেম্বর মাসের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বর্তমান পরিস্থিতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা সব পণ্যের ওপর সর্বজনীন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে তার, যা হতে পারে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ইতিমধ্যে এই পরিকল্পনার জবাবে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প এক বক্তব্যে বলেছেন, শুল্ক হলো অভিধানের সবচেয়ে সুন্দর শব্দ। তার এই মন্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রীরা। এর আগে ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, যা বর্তমান বাইডেন প্রশাসনও অব্যাহত রেখেছে।
আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গীতা গোপীনাথ জানিয়েছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির প্রকৃত প্রভাব এখনো সুনির্দিষ্টভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যদি বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয় বা বৃহৎ পরিসরে শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে বৈশ্বিক জিডিপি প্রায় ৭ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে। গীতার ভাষায়, ৭ শতাংশ একটি বিশাল সংখ্যা, যা ফ্রান্স ও জার্মানির সম্মিলিত অর্থনীতির সমান। এই ক্ষতি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য এক বড় ধরনের ধাক্কা হবে।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, হাজার হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ শুল্ক আরোপের প্রস্তাবটি আসলে বর্তমান পৃথিবীর জন্য এক নতুন বাস্তবতা। গত দুই বা তিন দশকের বাণিজ্যিক সম্পর্ক থেকে এটি এক বিরাট পরিবর্তন।
ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং ভবিষ্যৎ সংকট
বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের যৌথ বৈঠকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় ছিল বিভিন্ন দেশের ক্রমবর্ধমান সরকারি ঋণ। গীতা গোপীনাথ বলেছেন, বিশ্বজুড়ে অনেক দেশেই সরকারি ঋণ বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে সংকট সৃষ্টি করতে পারে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা রয়েছে, তবে দেশগুলোর উচিত হবে ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় আর্থিক প্রস্তুতি নেওয়া। এই সংকট শেষ নয়, আরও সংকট আসতে পারে, তাই এখন থেকেই সেসব মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
গীতা গোপীনাথ আরও বলেন, অতীতে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টায় অনেক সময় প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল, এবং বেকারত্বের হার বেড়ে গিয়েছিল। তবে এইবারের মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লড়াই সফল হয়েছে, আর বেকারত্বের হার তেমন বাড়েনি। এখন, এই সাফল্য ধরে রেখে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল