তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ডের তুলনায় বেশি স্বর্ণ মজুদ করছে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। এতদিন ধরে বেশিরভাগ দেশ তাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার বা রিজার্ভ রাখত ডলার, ইউরো ও মার্কিন ট্রেজারি বন্ডে, সঙ্গে থাকত কিছুটা স্বর্ণ। এবার সেই চিত্র বদলেছে।
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ইন্টারন্যাশনাল রোল অফ দ্য ইউরো ২০২৫’ রিপোর্ট অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হাতে এখন ৩৬ হাজার টনেরও বেশি স্বর্ণ রয়েছে। এর বর্তমান বাজারমূল্য ৩.৬ ট্রিলিয়ন ডলার। অপরদিকে, মার্কিন ট্রেজারির জুন ২০২৪ জরিপ অনুযায়ী, তাদের হাতে থাকা মার্কিন সরকারি বন্ডের পরিমাণ ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার।
এই পরিবর্তনের পেছনে মূল কারণ স্বর্ণের দামের রেকর্ড বৃদ্ধি। ২০২৫ সালে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ৩৫০০ ডলারের ওপরে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনটি প্রধান কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছে। প্রথমত, স্বর্ণ জব্দ করা বা স্থগিত করা যায় না। রাশিয়ার ডলার ও ইউরো রিজার্ভ ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর অবরুদ্ধ হওয়ার পর থেকেই দেশগুলো স্যাংকশন-প্রুফ সম্পদ খুঁজতে শুরু করে। দ্বিতীয়ত, আমেরিকার ঋণের মাত্রা বাড়তে থাকায় মার্কিন বন্ডে অতিরিক্ত ভরসা রাখতে চাইছে না অনেক দেশ। তৃতীয়ত, রিজার্ভে বৈচিত্র্য আনার কৌশল হিসেবেও স্বর্ণের গুরুত্ব বেড়েছে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ১,০৮২ টন, ২০২৩ সালে ১,০৩৭ টন এবং ২০২৪ সালে ১,০৪৫ টন স্বর্ণ কিনেছে—যা এক দশক আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে কেনা হয়েছে মোট ৪১০ টন স্বর্ণ। বছরের শেষে এ সংখ্যা প্রায় ১,০০০ টনে পৌঁছাবে বলে আশা করছে লন্ডনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মেটালস ফোকাস।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪৩ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী বছরে আরও স্বর্ণ কেনার পরিকল্পনা করছে, আর ৯৫ শতাংশ মনে করছে বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের মজুদ আরও বাড়বে।
ভারতও এই প্রবণতার অংশ। ২০২৫ সালের মার্চে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের হাতে ছিল প্রায় ৮৮০ টন স্বর্ণ, যা দেশটির মোট রিজার্ভের প্রায় ১২ শতাংশ। এটি রুপির প্রতি আস্থা বাড়াতে সহায়তা করছে। তবে স্বর্ণের দাম বাড়ায় দেশের ভেতরে ঐতিহ্যগতভাবে শক্তিশালী স্বর্ণের চাহিদার সঙ্গে দ্বন্দ্বও তৈরি হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল