যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত সম্প্রতি রায় দিয়েছে, গুগলকে তাদের ক্রোম ব্রাউজার বা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম বিক্রি করতে হবে না। এটি গুগলের জন্য একটি বড় স্বস্তির খবর, কারণ মার্কিন বিচার বিভাগ চেয়েছিল গুগল যেন নিজেদের আধিপত্য কমাতে ক্রোম বিক্রি করে দেয়। কিন্তু আদালতের এই রায়ের ফলে গুগল একরকম বেঁচে গেছে বলা যায়। এই রায়ের পরপরই গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের শেয়ারের দাম ৮ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
তবে রায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, গুগল আর একচেটিয়া চুক্তি করতে পারবে না। এখন থেকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সার্চ ইঞ্জিনগুলোর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা বা তথ্য শেয়ার করতে হবে। এতদিন গুগল অ্যাপল, স্যামসাংয়ের মতো বড় কোম্পানিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতো, যাতে তাদের ডিভাইসে গুগলের সার্চ ইঞ্জিন ডিফল্ট হিসেবে সেট করা থাকে। ২০২১ সালে শুধু অ্যাপলের সঙ্গে এমন চুক্তির জন্য গুগল ২৬ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল। এখন এই একচেটিয়া চুক্তির লাগাম টেনে ধরা হচ্ছে।
এই রায়ের ফলে অ্যাপল এবং অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ এখন থেকে তারা তাদের ডিভাইসে অন্য সার্চ ইঞ্জিন বা ব্রাউজারকেও প্রমোট করতে পারবে।
গুগল কি আসলেই একচেটিয়া ব্যবসা করে?
অনেকেই মনে করেন, গুগল ইন্টারনেটে কার্যত একটি আইনসিদ্ধ একচেটিয়া কোম্পানি। কারণ বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ মানুষ কিছু খুঁজতে গেলেই গুগল করে। এমনকি ইংরেজি অভিধানেও 'Google' শব্দটি একটি ক্রিয়াপদ হিসেবে ঢুকে পড়েছে। এর কারণ হলো গুগলের সার্চ ইঞ্জিন অন্যদের থেকে অনেক বেশি জনপ্রিয়।
২০২৩ সালের আগস্ট মাসে আদালত একটি রায়ে বলেছিলেন, গুগল তাদের প্রভাব ব্যবহার করে প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তাই তখন অনেকেই ধারণা করেছিলেন, গুগল হয়তো ভেঙে যাবে। কিন্তু এবারের রায়ে সেই আশঙ্কা কেটে গেছে।
ভবিষ্যৎ কী?
এই রায়কে গুগল নিজেদের জন্য বিজয় হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো নতুন প্রযুক্তির উত্থান প্রমাণ করে যে ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রতিযোগিতা এখন অনেক তীব্র। মানুষ সহজেই তাদের পছন্দের সেবা বেছে নিতে পারে।
অন্যদিকে, গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা যেমন 'ডাকডাকগো' বলছে, এই রায়ে গুগলের অবৈধ আচরণে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। তাদের মতে, ভোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ধারা অব্যাহত থাকবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই আইনি লড়াই এখানেই শেষ হচ্ছে না। চলতি মাসের শেষ দিকে গুগলকে আরও একটি মামলার মুখোমুখি হতে হবে, যেখানে তাদের অনলাইন বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে একচেটিয়া আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, গুগলকে যদি ভেঙে দেওয়া হতো, তাহলে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন এবং অ্যাপের বাজারে নতুন প্রতিযোগিতার সুযোগ তৈরি হতো। এতে ছোট কোম্পানিগুলোর বাজারে প্রবেশ সহজ হতো এবং ভোক্তারা পেত আরও বেশি বিকল্প। কিন্তু আপাতত সেই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল