বরিশালের মুলাদীতে মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীর ওপর মাদ্রাসা সুপার যে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়েছেন তাতে তিনি মনুষ্য জাতির কেউ কিনা সে সন্দেহ করা অমূলক হবে না। মাহিম নামের ওই শিশুটির অপরাধ সে শীতের ভয়ে গোসল করে ক্লাসে যায়নি। এ অপরাধে ক্লাসরুমেই ছয় বছরের ওই শিশুর গলা টিপে ধরেন তিনি। ভয়ে মাহিম ক্লাসরুমেই মল ত্যাগ করে। মাদ্রাসার সুপার তাতে নিরস্ত হওয়ার বদলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কয়েক গুণ। শাস্তি হিসেবে মাঘের প্রচণ্ড শীতে মাদ্রাসার পুকুরে গলা অবধি পানিতে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখেন। শীতে মাহিম কাঁপতে থাকলে তিনি তাকে পুকুর থেকে উঠিয়ে হাত-পা ধরে নিয়ে যান মাদ্রাসার রান্নাঘরে। সেখানে চুলার ওপর উঠিয়ে তাকে আগুনের ছেঁকা দেন। আগুনে মাহিমের পেটের একটি অংশ দগ্ধ হওয়ার পর তিনি ক্ষান্ত হন। অন্য শিক্ষার্থীদের ভয় দেখিয়ে বলেন, বিষয়টি যেন কাউকে না জানানো হয়। তারপর গোপনে শিশু মাহিমকে গৌরনদী হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য নিয়ে আসেন মাওলানা আল আমিন নামের ওই মাদ্রাসাশিক্ষক। খবর পেয়ে শিশুটির বাবা হাসপাতালে গেলে মাদ্রাসা সুপার পালিয়ে যান। গৌরনদী হাসপাতালে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় মাহিমকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গোসল না করার জন্য একজন মাদ্রাসাশিক্ষক ছয় বছরের শিশুর ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছেন তা মানসিকভাবে সুস্থ কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রশ্ন ওঠে, মানসিকভাবে অসুস্থ লোকজন শিক্ষকতার পেশায় থাকার সুযোগ পান কীভাবে? আমরা আশা করব বরিশালের মুলাদীর বাটামারা ইউনিয়নের চরসেলিমপুর ফজলুল উলুম সেরাতুল কোরআন মাদ্রাসার মানুষবেশী দানব শিক্ষক আল আমিনকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। নির্যাতিত শিশুর অভিভাবকরা যাতে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পান তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। দেশের আইন অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীর ওপর শারীরিক শাস্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু বহু স্কুল ও মাদ্রাসায় শাস্তিদানের যেসব ঘটনা মাঝেমধ্যে প্রকাশ পায় তা লোমহর্ষ বললেও অত্যুক্তি হবে না। বিশেষত, কোনো কোনো মাদ্রাসায় শিশুদের শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা এবং শিক্ষকদের নির্দেশ পালনে ত্রুটি হলেই নির্মম নির্যাতন চালানোর যে প্রবণতা রয়েছে, তা সামাল দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরও তত্পর হতে হবে।