পৃথিবী থেকে দাসপ্রথা বিদায় নিলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে টিকে রয়েছে সে কুপ্রথা। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ওয়ার্ক ফ্রি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সারা বিশ্বের ৪ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ আজও দাসের মতো জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশেও ১৫ লাখ মানুষের জীবনযাপন দাসদেরই মতো। অস্ট্রেলীয় মানবাধিকার সংস্থা গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্সের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে যে ৪ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ ‘আধুনিক দাসের’ জীবন অতিবাহিত করছে তাদের ৫৮ শতাংশই ভারত, চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানের বাসিন্দা। সংস্থার ২০১৪ সালের সমীক্ষায় বিশ্বজুড়ে ৩ কোটি ৫৮ লাখ মানুষের আধুনিক দাসের জীবনযাপনের কথা বলা হয়েছিল। সে হিসেব এক বছরের ব্যবধানে এ তালিকায় আরও ১ কোটি মানুষের সংযোজন হতাশা ব্যাঞ্জক। দাসের সঙ্গে তুলনীয় অমানবিক জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে এমন মানুষ সবচেয়ে বেশি ভারতে। অর্থনীতির বিচারে ভারত এখন শীর্ষ পর্যায়ের দেশে উন্নীত হলেও সে দেশের ১ কোটি ৮৩ লাখ মানুষের জীবন প্রায় দাস যুগের গণ্ডিতে বাধা। তারপর রয়েছে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি বলে কথিত সমাজতান্ত্রিক দেশ চীন। চীনের ৩৪ লাখ মানুষ এখনো দুর্দশাগ্রস্ত জীবনযাপন করছে। মধ্যযুগের মনমানসিকতায় আবর্তিত পাকিস্তান দাসত্ব জীবনযাপনের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে। এ দেশটির ২১ লাখ মানুষ এমন লজ্জাজনক অবস্থানে বাস করছেন। দশম স্থানে বাংলাদেশের অবস্থান এবং এ দেশের ১৫ লাখ অর্থাৎ শতকরা প্রায় এক শতাংশ মানুষ প্রায় দাসের মতো জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। এদের কেউ মাছ ধরা নৌকায়, কেউ গৃহকর্মী হিসেবে, কেউ পতিতালয়ে জীবনযাপন করছে। আধুনিক এই যুগে বিশ্বের সাড়ে ৪ কোটিরও বেশি মানুষের দাসত্বের জীবন বেমানান ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশের ১৫ লাখ মানুষও একই দুর্ভাগ্যের শিকার। এ লজ্জা কাটিয়ে উঠতে সারা জাতিকেই তত্পর হতে হবে।