পরিবহন চাঁদাবাজি সীমা অতিক্রম করতে চলেছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। হতাশাজনক বিষয় হলো চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য থামানোর যেন কেউ নেই। চাঁদাবাজি বন্ধের দায়িত্ব যাদের তারা নিজেরাই তাতে জড়িয়ে পড়ায় অশ্বডিম্ব প্রসবই সার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের সংগঠন, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের সন্ত্রাসী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চাঁদাবাজির সম্পর্ক থাকায় তা বন্ধ করার মতো কোনো কর্তৃপক্ষ দেশে আছে কিনা সে বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন চাঁদাবাজির মৃগয়া ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদনে পরিবহন চাঁদাবাজির যে ভয়াল চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা উদ্বেগজনক। এতে বলা হয়, রাজধানীর শতাধিক পয়েন্টে পরিবহন চাঁদাবাজি অপ্রতিরোধ্য রূপ নিয়েছে। চিহ্নিত কিছু পরিবহন শ্রমিক, সন্ত্রাসী, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন মহলের আশীর্বাদপুষ্টদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজদের অশুভ চক্র। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে যানবাহন চালক, মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। চাঁদাবাজদের অপ্রতিরোধ্য দাপটের কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যেও প্রায়ই দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হয়। যাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রুটে ধর্মঘট হলেও কমছে না চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজির আবার রকমফেরও রয়েছে। সন্ত্রাসীরা সরাসরি ‘চাঁদা’ তুললেও পরিবহন শ্রমিকরা চাঁদা নেয় শ্রমিক কল্যাণের নামে। ট্রাফিক সার্জেন্টরা টাকা তোলেন মাসোহারা হিসেবে। এ ছাড়া আছে রেকার ভাড়া, রাস্তা ক্লিয়ার ফি, ঘাট ও টার্মিনাল সিরিয়াল, পার্কিং ফির নামে অবৈধভাবে অর্থ আদায়। এভাবে নানা নামে, নানা কায়দায় চলছে চাঁদাবাজির উৎসব। রাজধানীর প্রবেশপথগুলো কার্যত চাঁদাবাজদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। তাদের আগ্রাসী ছোবলে চালক, মালিক, শ্রমিক সবার জীবনই অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। যাত্রীরা হচ্ছে দুর্ভোগের শিকার। মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদসহ প্রতিটি বাস-ট্রাক টার্মিনালের অবস্থাই অভিন্ন। এসব স্থানে গাড়ি ঢুকতেও টাকা লাগে, বেরোতেও লাগে টাকা। রাজধানীসহ সারা দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে চাঁদাবাজি বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। চাঁদাবাজির কারণে যানজটের উদ্ভব হয়, পণ্য পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পায় মাত্রাতিরিক্তভাবে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও অসহ্য রূপ ধারণ করে। এ বিষয়ে সরকারের কুম্ভকর্ণের মুখ ভাঙবে আমরা এমন প্রত্যাশাই করতে চাই।