শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

একটি দায়মুক্তি : মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যা করেছি

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

একটি দায়মুক্তি : মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যা করেছি

আমাদের একটা দায়মুক্তি ঘটেছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে হানাদার পাক বাহিনীর ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার স্মরণে বছরের এই তারিখটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত সংসদে পাস হয়েছে। প্রস্তাবটি পাস হয়েছে সর্বসম্মতভাবে। আমিও এই মহতী কর্মের অংশীদার হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। বলেছি, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্ম জানবে এবং স্মরণ করবে বাংলাদেশে হানাদার বাহিনী কী ধরনের বর্বরতা চালিয়েছিল। নিরস্ত্র-নিরীহ-ঘুমন্ত মানুষকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার ইতিহাস বিশ্বে বিরল। তারা একটি জাতির অস্তিত্বকেই বিলীন করে দিতে চেয়েছিল। এর জন্য পাকিস্তানকে চিরকাল ঘৃণা ও নিন্দার বোঝা বইতে হবে।

২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত সংসদে সর্বসম্মতভাবে পাস করার মধ্য দিয়ে আমরা ৩০ লাখ শহীদের আত্মাকে কিছুটা শান্তি দেওয়ার তৃপ্তিবোধ করতে পারছি। আমি জানি, এই সিদ্ধান্ত সংসদে পাস হওয়ায় গোটা দেশের আপামর মানুষ সীমাহীন খুশি হয়েছে। এখানে আমার অনুভূতিতে আরও একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। তা হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে আমি আরও একটু কাজ করতে পেরেছি, সেটা আমার পরম তৃপ্তি। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি ছিলাম খাঁচায় বন্দী পাখির মতো। স্বাধীনতার যুদ্ধের ময়দানে অস্ত্রহাতে শত্রুর মুখোমুখি হতে পারিনি। আটক ছিলাম তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বন্দীশিবিরে। কী অবর্ণনীয় সেই বন্দী যন্ত্রণা। আমার আত্মজীবনী ‘আমার কর্ম আমার জীবন’ গ্রন্থে সে কথা উল্লেখ করেছি। তবে বন্দীজীবন আরও ভোগ করেছি। সেটা ছিল খালেদা জিয়ার কারাগার। এই কারাগারের নির্যাতন ছিল পাকিস্তান বন্দীশিবিরের চেয়েও ভয়াবহ। পাকিস্তানের বন্দীশিবিরে অন্তত কথা বলার সুযোগ থাকত।

স্বাধীনতাযুদ্ধ, স্বাধীনতার চেতনার কথা মনে পড়লে আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। কারণ, সৈনিক হিসেবে এই যুদ্ধে আমার অংশগ্রহণ ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। সেই ভাগ্য আমার ভাগ্যে জোটেনি। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সব সময় ছিলেন এবং এখনো আছেন আমার চেতনা ও প্রেরণার উৎস হয়ে। তিনি যে রাজনীতি করেছেন এবং যে রাজনৈতিক দলকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেই দলের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে না পারলেও নেতা বঙ্গবন্ধু মুজিবের প্রতি আমার শ্রদ্ধা অকৃত্রিম ও অসীম। আমি তাই সংসদেও বলেছি, সর্বত্রই বলি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর নিজস্ব সম্পদ নয়; তিনি গোটা জাতির, তিনি সর্বজনীন। আমি মুক্তকণ্ঠে বলি, বঙ্গবন্ধু মানে একটি স্বাধীন দেশ, বঙ্গবন্ধু মানে স্বাধীনতার যুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু মানেই ১৬ ডিসেম্বরের চূড়ান্ত বিজয়। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমি এ দেশের সেনাপ্রধান হতাম না, রাষ্ট্রপতি হতাম না। তার কাছে আমার এই ঋণের কথা ভুলতে পারি না।

ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধু আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। তার কারণেই আমরা পাকিস্তানের আটক বাঙালিরা ১৯৭৩ সালে দেশে ফিরতে পেরেছিলাম। দেশে ফিরে আমি আবার সেনাবাহিনীতে পুনর্বহাল হলাম। পাকিস্তান-ফেরত সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে আমিই প্রথম পদোন্নতি পেয়েছিলাম। আমি  লে. কর্নেল থেকে কর্নেল পদে উন্নীত হলাম। এরপর আমাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে নিয়োগ করা হলো। বঙ্গবন্ধু আমাকে এনডিসি কোর্স করাতে ভারতে পাঠালেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনিই আমাকে ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত করলেন। আমার প্রতি বঙ্গবন্ধুর স্নেহ-ভালোবাসা ও বদান্যতার ঋণ শোধ করার মতো নয়। আর সে কারণেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমিই প্রথম তার কবর জিয়ারত করেছি এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে তার কবরে ফুল দিয়েছি। এটা আমার কিছুটা পরিতৃপ্তি। তবে বড় একটি কাজ আমি করতে পারিনি, সেই দুঃখ আমার থেকেই গেছে। তা হচ্ছে, একান্ত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা দিতে পারিনি। তাকে জাতির পিতা ঘোষণা করার জন্য ক্যাবিনেটে প্রস্তাবও এনেছিলাম। কিন্তু আমার ক্যাবিনেটের কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্যের তীব্র আপত্তিতে এবং তাদের যুক্তি শুনে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে ঘোষণা দিতে আমাকে বিরত থাকতে হয়েছে। অথচ আমি এ ব্যাপারে দৃঢ় থাকলে এই মহৎ কাজটা করে যেতে পারতাম। গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এই কথাটি আমি ব্যক্তও করেছি।

দুঃখ এবং বিবেকের তাড়না আমার আরও একটা রয়ে গেছে। তা হলো এই দেশের একজন সৈনিক হয়েও মুক্তিযুদ্ধে আমি অংশগ্রহণ করতে পারিনি। কেন পারিনি, এখানে সে কথা ব্যক্ত করার তাগিদ বোধ করছি। শুরু করছি আমার সৈনিক জীবনের শুরুর সময়টা থেকে। আমি তখন ঢাকা ইউনিভার্সিটির মাস্টার্সের ছাত্র। ভার্সিটির ক্রীড়া ক্ষেত্রে আমার তখন একচ্ছত্র আধিপত্য। ইতিমধ্যে চাকরি পেয়ে গেলাম সেনাবাহিনীতে। ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে আমি কমিশনপ্রাপ্ত হলাম। ১৯৬৯ সালে লে. কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে ’৬৯-এর ৩০ অক্টোবর থার্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পেলাম। তখন থার্ড ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে।

বাংলাদেশে তখন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার আন্দোলনে শাসকগোষ্ঠী পশ্চিমা পাঞ্জাবিদের টালমাটাল অবস্থা। শাসকরা ষড়যন্ত্র করে এ দেশ থেকে সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসারদের পশ্চিম পাকিস্তানে বদলি করে নিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭০ সালের ২৯ ডিসেম্বর আমাকে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে করাচির মালি ক্যান্টনমেন্টে বদলি করা হয়। আমি যেতে চাচ্ছিলাম না। একদিকে দেশের রাজনীতিতে টানটান উত্তেজনা, যখন-তখন একটা কিছু ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা, নির্বাচনে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে শাসকদের টালবাহানা, সব মিলিয়ে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা; অন্যদিকে দেশের মাটির মায়া আমাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তুলেছিল। দেশমাতৃকা আমাকে যেন অক্টোপাসের মতো ধরে রাখতে চাইছিল। এ দেশের নদীতে সাঁতার কেটে, এই মাটিতে খেলাধুলা করে, শিউলি-হাসনাহেনার গন্ধ নিয়ে, কোকিল-শ্যামা-ঘুঘু-দোয়েলের গান শুনে যেখানে বড় হয়েছি; সেই মাটি ছেড়ে শুধু জীবন ও জীবিকার তাগিদে মরুভূমির দেশে চলে যেতে কোনোভাবেই মন সায় দিচ্ছিল না। তখন জেনারেল এম এ জি ওসমানীর কাছে জানতে চাইলাম কী করব। তিনি বললেন, তুমি সৈনিক, যেখানে তোমার পোস্টিং হবে সেখানেই তোমাকে যেতে হবে। তার পরও এক মাসের ছুটি নিলাম। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসটা দেশেই ছুটিতে কাটালাম। তারপর ফেব্রুয়ারিতে করাচিতে যেতেই হলো। আমার স্ত্রী রওশন আমার সঙ্গেই গেলেন। তাই মাত্র এক মাসের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারলাম না। এরপর মার্চে শুরু হলো যুদ্ধ। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পর্যন্ত যদি দেশে থাকতে পারতাম তাহলে হয়তো আর পশ্চিম পাকিস্তানে যেতে হতো না। কারণ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এসেছে। যেখানে তিনি বলেই দিয়েছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তার পর থেকে দেশ তো বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই পরিচালিত হয়েছে। একে তো শত চেষ্টা করেও পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারিনি, সেই কাঁচা ঘায়ে লবণ দিতে কিছু অপপ্রচারকারী প্রচার করেছেন যে, আমি নাকি যুদ্ধকালীন ছুটিতে দেশে এসেছিলাম। এর চেয়ে জঘন্য মিথ্যাচার আর কিছু থাকতে পারে না। পাকিস্তানের বন্দীশিবিরে আটকাবস্থা থেকে পালিয়ে আমি যে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আবার চেষ্টা করেছিলাম, তার প্রমাণ মেজর জেনারেল (অব.) মুহম্মদ খলিলুর রহমানের লেখা ‘পূর্বাপর ১৯৭১ পাকিস্তানি সেনা গহ্বর থেকে দেখা’ গ্রন্থের মধ্যেও উল্লেখ আছে। জেনারেল খলিলও আমার সঙ্গে পালাতে চেয়েছিলেন। কেন আমরা তা পারিনি সে কথা তার গ্রন্থের ২৮ পৃষ্ঠায় কিছুটা উল্লেখ আছে। আলোচনার স্বার্থে সেই অংশটি এখানে উল্লেখ করছি। তিনি লিখেছেন : ‘আমার পাকিস্তানের বাইরে যাওয়ার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল; কিন্তু তখনো পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আমার যাতায়াতের ওপর কোনো বাধা আরোপ করা হয়নি। একটি পরিদর্শন কার্যক্রম অনুমোদন করালাম— করাচির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখব। যথাসময় উপস্থিত হলাম করাচিতে। ওইদিন সন্ধ্যায় গেলাম মালির সেনানিবাসে সপ্তম বেঙ্গল সদর দফতরে, লে. কর্নেল এরশাদের (পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি) বাসায়। আমরা অতি ঘনিষ্ঠ বলে পরস্পরের চিন্তাধারাও জানতাম। অতএব, সময় ক্ষেপণ না করে আলোচনা শুরু হলো। আমি, এরশাদ ও এরশাদের স্ত্রী তিনজনে আলোচনা করছি কীভাবে সীমান্ত পার হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া যায়। ম্যাপ খুলে বসলাম, এরশাদের সপ্তম বেঙ্গলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সীমান্ত এবং করাচি থেকে সেখানে জিপে করে যাওয়ার রাস্তা পথের দূরত্ব সবকিছু আলোচনায় এলো; কিন্তু সন্তোষজনক কোনো ফল বেরোলো না। করাচি থেকে সীমান্তের দূরত্ব, যেদিক দিয়ে গণনা করা যাক না কেন, ৫০০ মাইলের কম নয়। রাস্তার বেশির ভাগ অংশই পাকা নয়।

এই রাস্তায় সারা রাত বিরামহীনভাবে গাড়ি চালালেও সকালের আগে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। অথচ আমাদের সীমান্ত অতিক্রম এক রাতের মধ্যে করতেই হবে। কারণ পরদিন সাতসকালেই সবাই জানতে পারবে যে, আমরা পালিয়েছি। অতএব, অত্যন্ত ভগ্নহৃদয়ে রাতের খাওয়া সেরে বিদায় নিলাম এরশাদ দম্পতির বাসা থেকে। পরদিন ফিরে এলাম রাওয়ালপিন্ডিতে।’

মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিতে না পারলেও আমার ভিতরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অঙ্গীকার করেছিলাম, জীবনে যদি সুযোগ পাই তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কাজ করে যাব। আল্লাহ আমাকে সে সুযোগ দিয়েছিলেন। তাই যখন দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলাম তখন বলেছি, ‘মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান’। এ কথা কোনো একজন ব্যক্তি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছিল না। এ কথা ছিল দেশের রাষ্ট্রপতি এরশাদের। অর্থাৎ একটা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। তারপর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে আমি যা করেছি দেশের আর কোনো সরকার তা করতে পারেনি। সেই কাজের বর্ণনা যদি এখানে না দিই তাহলে এই আলোচনাটি অপূর্ণ থেকে যাবে এবং আজকের প্রজন্ম জানবে না আমি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ভিতরে ও বাইরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালন-পালন করে কত কাজ করেছি। যেমন— ১. মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের স্মরণে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ কাজ সম্পন্ন করেছি। এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ অতীতের সরকারের আমলে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে ছিল। আমার সরকারই এ প্রকল্পটিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্রহণ করে একে পরিপূর্ণভাবে মূর্ত করে তোলে। ২. বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনের স্মৃতিকে অবিস্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মেহেরপুরের আম্রকাননে ‘মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ’ নির্মাণ করি। মেহেরপুরের যে ঐতিহাসিক আম্রকাননে (বৈদ্যনাথতলা) বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়, তা ছিল উপেক্ষিত ও অবহেলিত। আমাদের আগের কোনো সরকারই জাতীয় ইতিহাসের এই গৌরবময় স্থানটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে এর স্মৃতি রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। মুজিবনগরকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকায় রূপান্তরিত করে সেখানে আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্বের আদর্শ সংরক্ষণের দায়িত্ব আমিই পালন করেছি। আমার উদ্যোগেই স্থানটির উন্নয়ন সাধিত হয় এবং ঐতিহাসিক ও গৌরবময় ঘটনাটির স্মরণে উপযুক্ত স্মারকস্তম্ভ নির্মিত হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, মুজিবনগরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথভাবে সম্মান ও মর্যাদাদানের জন্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমিই প্রথম সেখানে গমন করি। ৩. মুক্তিযুদ্ধের মরণোত্তর সর্বোচ্চ বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত সাতজন শহীদের প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি করে সুসজ্জিত বাসস্থান নির্মাণ করে দিয়েছি। ৪.  স্বাধীনতাযুদ্ধে অসম সাহসিকতা প্রদর্শন এবং চরম আত্মত্যাগের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী পাঠ্যপুস্তকে (প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত) অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। এ অন্তর্ভুক্তি আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্মরণ করিয়ে দেবে তাদের অম্লান বীরত্ব ও আত্মদানের কাহিনী। ৫. বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত সাতজন শহীদের নামে বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট ও উদ্বোধনী খাম প্রকাশ করেছি। ৬. আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর সৈনিকদের চরম আত্মদানের কথা এ দেশের মানুষকে বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করা এবং তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের জন্য প্রতিদিন দুবার টেলিভিশনের বাংলা ও ইংরেজি সংবাদের আগে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশস্তিমূলক নেপথ্য সংগীতসহ জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছি। ৭. শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন ও আবাসগৃহের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ফান্ড কার্যকরভাবে পুনর্গঠন করেছি। ৮. মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে সারা দেশে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, দুস্থ ও নিঃস্ব মুক্তিযোদ্ধাসহ সব মুক্তিযোদ্ধাকে সুসংগঠিত করে তাদের অসুবিধাসমূহ দূরীকরণসহ পুনর্বাসনের জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর ফলে বাংলাদেশের সর্বত্র মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের শাখা ও কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ৯. মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের প্রধান কার্যালয়ের জন্য মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় একটি বহুতল ভবন বিনামূল্যে প্রদান করেছি, যার নামকরণ করা হয় ‘স্বাধীনতা ভবন’। ১০. মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৬৪টি জেলা হেডকোয়ার্টারে স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণের জন্য মাত্র ১০১ টাকা প্রতীক মূল্যে ৫ কাঠা করে জমি বরাদ্দ করেছি। ১১. মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা হেডকোয়ার্টারের কার্যালয় ভবনসমূহ নির্মাণের জন্য প্রথম কিস্তি হিসেবে ১ কোটি টাকা প্রদান করেছি। ১২. শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি অমর করে রাখার লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সহস্রাধিক রাস্তাঘাট ও ভবনের নামকরণ করেছি। ১৩. আমিই মুক্তিযোদ্ধাদের একক ও দলগতভাবে অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য সহস্রাধিক ছোট-বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছি। ১৪. আমার আগ্রহ ও উদ্যোগেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশাসনিক ও সামাজিক কার্যক্রমে বিশেষভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলা পরিষদে একজন করে মুক্তিযোদ্ধাকে মনোনয়ন দেওয়ার বিধান করেছি। প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভাসহ অন্যান্য পরিষদে এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে একজন করে মুক্তিযোদ্ধাকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছি। ১৫. ১৯৮৩ সালে ২৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ প্রদান করেছি। ১৬. মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিশেষ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যানকে একজন মন্ত্রীর পূর্ণ মর্যাদায় রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করার বিধান চালু করেছি। ১৭. আমার শাসনামলে প্রতি বছর পবিত্র হজ পালনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে তিনজন করে মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি হজ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ১৮. প্রকৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি বাস, ট্রেন ও বিমানে বিনামূল্যে ভ্রমণের জন্য বিশেষ পরিচয়পত্র প্রদান করেছি। ১৯. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি উদ্যোগে বিদেশে প্রেরণ করেছি। ২০. বেকার মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। ২১. সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনসমূহে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়স ৩০ বছর থেকে ৩২ বছর বৃদ্ধি এবং চাকরির ক্ষেত্রে ৩০% কোটা যথাযথভাবে পালন করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ২২. সহস্রাধিক ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি খাসজমি, পুকুর, জলাশয় ও পতিত জমি বরাদ্দ করেছি। ২৩. মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠা করেছি। ক্রীড়া চক্রের স্থায়ী কার্যালয়ের জন্য ওসমানী উদ্যানসংলগ্ন স্থানে নিজস্ব ভবন ও জমি দান করেছি। ২৪. বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনীভিত্তিক তথ্যচিত্র নির্মাণ করার ব্যবস্থা নিয়েছি। ২৫. রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পরদিনই (২৫ মার্চ ’৮২) আমি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বোচ্চ খেতাবপ্রাপ্ত (মরণোত্তর) প্রত্যেকের পরিবারকে ২ হাজার ৫০০ টাকার একটি চেক ও উপহার প্রদান করেছি। ২৬. ঢাকার মিরপুরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছি। ২৭. ঢাকার মিরপুর রোডে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্থায়ীভাবে ব্যবহূত দুটি পাকা ভবনের মালিকানা স্থায়ীভাবে প্রদান করেছি। ২৮. প্রতিটি মাত্র ১ টাকা প্রতীকী মূল্যে ২২টি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চিরস্থায়ীভাবে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানায় হস্তান্তর করেছি। ২৯. দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কল্যাণ ট্রাস্টের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহ করমুক্ত করেছি। ৩০. মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য ঢাকার ইস্কাটনে প্রয়োজনীয় জমিসহ একটি দ্বিতল ভবন স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করেছি। ৩১. মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের বহুতল ভবনের জন্য কাকরাইলের কাছে একটি জমি নামমাত্র মূল্যে বরাদ্দ করেছি। ৩২. ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিল’ শীর্ষক মুক্তিযুদ্ধের ১৫ (পনের) খণ্ড দলিল প্রকাশ করেছি। আমার দায়িত্ব পালনকালে পনের খণ্ডে স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিল প্রণয়ন সম্পূর্ণ করে প্রকাশ করা হয়। এ দলিলপত্র দেশের খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ ও স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ব্যক্তিদের দ্বারা অত্যন্ত সতর্কতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সংকলিত ও সম্পাদিত হয়েছে। ৩৩.          মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর সিলেটের বাসভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করেছি। ৩৪. জেনারেল ওসমানীর স্মরণে সচিবালয়ের সামনের পার্ক এলাকা উৎসর্গ করেছি (ওসমানী উদ্যান) এবং আন্তর্জাতিক মানের ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন নির্মাণ করেছি। ৩৫. সিলেট বিমানবন্দরকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করেছি। ৩৬.          জেনারেল এম এ জি ওসমানীর নামে সিলেট মেডিকেল কলেজের নামকরণ করেছি। ৩৭. জেনারেল এম এ জি ওসমানীর স্মরণে বিশেষ ডাকটিকিট ও উদ্বোধনী খাম প্রকাশ করেছি। ৩৮. স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক অবদানের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃত ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ সব মুক্তিযোদ্ধার খসড়া তালিকা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছি। ৩৯. যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সুচিকিৎসার জন্য পিজি হাসপাতাল (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি করে কেবিন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। ৪০. রোগীর তত্ত্বাবধানের দায়িত্বসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হাসপাতালে প্রয়োজনমতো বেড প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। ৪১. উচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশক্রমে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে বিদেশে প্রেরণের ব্যবস্থা করেছি। ৪২. দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থানরত যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা স্থানীয়ভাবে সম্ভব না হলে ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে ঢাকায় প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। ৪৩. উন্নতমানের হুইল চেয়ার ও এর খুচরা যন্ত্রাংশ, কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং ওষুধপথ্যাদি জরুরি ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে সরবরাহ করেছি। ৪৪. যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য নিজ নিজ এলাকায় ন্যূনতম প্রয়োজনের ভিত্তিতে বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছি। ৪৫. বরাদ্দকৃত পরিত্যক্ত বাড়িঘর সরকার জনসাধারণের কাছে পাঁচটি বার্ষিক কিস্তিতে এবং ২০ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। এ ক্ষেত্রে শহীদ পরিবার এবং প্রতিবন্ধী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১০টি সমান বার্ষিক কিস্তি ও ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের ব্যবস্থা ছিল। এ নিয়মনীতি পরিবর্তন করে বরাদ্দকৃত পরিত্যক্ত বাড়িঘর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছে বিক্রির শর্তাবলি সহজ করে ৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট এবং ২৫টি সমান বার্ষিক কিস্তিতে বিনা সুদে বাড়ির মূল্য পরিশোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ৪৬. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছি।

এত কিছু করার পরও বার বার মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং দেশমাতৃকার কল্যাণে যদি আরও কিছু কাজ করতে পারতাম। সংসদে যখন গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্তের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। তখনো মনে হয়েছে, কেন এ কাজটা আমি করে যেতে পারলাম না। তবে যা করা উচিত ছিল ১৯৭৩ সালে গঠিত পার্লামেন্টে, সে কাজটি হয়েছে ২০১৭ সালের সংসদে। তবুও আত্মতৃপ্তি এই যে, দেরিতে হলেও মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারীদের ঋণ আরও কিছুটা কমেছে। আমিও সর্বশেষ এ মহতী কর্মের অংশীদার হয়ে এবং বিগত দিনে বিবেকের তাগিদে কিছু কাজ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজের কিছুটা দায়মুক্তির চেষ্টা করেছি। আশা করি আজকের প্রজন্মও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে এবং আমার কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ রাখবে।

লেখক : সাবেক রাষ্ট্রপতি।

সর্বশেষ খবর