মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমরা ভুল পথে চলছি কেন?

এ কে এম মাঈদুল ইসলাম

আমরা ভুল পথে চলছি কেন?

[কুড়িগ্রাম-৩ আসন থেকে ছয়বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এ কে এম মাঈদুল ইসলাম আমাদের মাঝে আর নেই। গত ১০ মে তিনি চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তির আগে তিনি লেখাটি পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমরা এ লেখাটি প্রকাশ করছি। বি. স.]

আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী বহুদিন পর একটি বাস্তব সত্য কথা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মতো রাস্তা নির্মাণ পদ্ধতি দুনিয়ার কোথাও নেই।’ পরিকল্পনামন্ত্রীর সদয় জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, আপনার নিশ্চয় একটি গানের কলি মনে আছে, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।’ তো, আমাদের দেশের মতো রাস্তাঘাট পৃথিবীর অন্য দেশে দেখবেন কী করে! সত্যি কথা বলতে গেলে, আমাদের দেশে যে পরিকল্পনা হয়েছে তার বিসমিল্লাতেই গলদ! দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ড. নূরুল ইসলামসহ বেশ বড় বড় লোককে পরিকল্পনা কমিশনে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এর পর থেকে আমাদের পরিকল্পনা কমিশন নামকাওয়াস্তে পরিকল্পনা কমিশনে পরিণত হলো। এর বড় সমস্যা হলো, বিদেশি ঋণ নেওয়ার জন্য যত রকম মিথ্যা তথ্য সংগ্রহ করা, তৈরি করা প্রয়োজন তাতে আমাদের পরিকল্পনা কমিশন খুবই দক্ষ। এ ব্যাপারে তারা অভিজ্ঞও বটে! তারা প্রায়ই বিদেশে যান, বিদেশ থেকে ডেলিগেশন তাদের কাছে আসেন। বিদেশিদের সঙ্গে ওঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি করে করে তাদের একটা আলাদা ট্রেনিংই হয়ে গেছে। আমি বহুবার মহান জাতীয় সংসদে বলেছি আমাদের পরিকল্পনা কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য। এটা সত্যি কথা, আমাদের দেশের মতো দেশ অন্য কোথাও নেই। এটাও সত্যি, আমাদের দেশের মতো এ রকম দেশ আগে ভারতবর্ষে ছিল না।

আমাদের দেশ নদীমাতৃক। নদ-নদীই এ দেশের জীবন। আমরা সবাই জানি, হিমালয় থেকে পলিমাটি এসে জমে জমে এ দেশের ভূখণ্ড তৈরি হয়েছে। ছোট দেশ হলেও ব্রহ্মপুত্রের মতো বড় নদ ও ছোট ছোট নদ-নদী, খালবিলে ভরা এ দেশ। নদীপথে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ গুরুত্ব অতীতে ছিল, এখনো আছে এবং আগামীতেও থাকবে। পৃথিবীর তিন ভাগই হলো সমুদ্র। সমুদ্রবন্দর দিয়ে বেশির ভাগ মালামাল পরিবহন করা হয়। সমুদ্র, নৌপথ যদি না থাকত তাহলে আরবরা আমাদের দেশে আসত না, পর্তুগিজরা আসত না, কলম্বাস নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কার করতে পারত না। ইংরেজ বণিকরা এসে তো খুঁটি গেড়েই বসে গেল। ২০০ বছর শাসন করল। তখন স্থলপথ ছিল না। আমরা সবাই জানি এবং এটা খুবই সাধারণ কথা যে, পৃথিবীর তিন ভাগ হলো পানি, আর এক ভাগ হলো স্থল। তাই নদীপথেই বিদেশি বণিকরা বাণিজ্য করার জন্য এ দেশে আসত। এখনো নদীপথেই বেশির ভাগ বাণিজ্য হয়। এই নদীপথের ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু আমরা ভুল করে এ নৌপথগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। বিশেষ করে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ করার ওপর জোর দিয়েছি। প্রথমত, ভুল পরিকল্পনা এবং দ্বিতীয়ত, আমাদের সরকারের অদূরদর্শিতা ছিল। যেমন পাকিস্তান হওয়ার পর তিন বা পাঁচ টন ওজন পরিবহনের জন্য সড়কপথ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পরে দেখা গেল যে সেই সড়কপথে ৮-১০ টন ওজন পরিবহনের ট্রাক চলে। ফলে রাস্তা ভেঙে যায়। এখন ভারতের সঙ্গে আমাদের দেশের যে যোগাযোগ কানেকটিভিটি হচ্ছে তাতে ২০-২২ টন ওজন পরিবহনের ট্রাক চলবে। এতে রাস্তাঘাট একটাও ঠিক থাকবে বলে মনে হয় না। আমাদের এখানে ১ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করতে যে খরচ হয় পাকিস্তানে তা নির্মাণে তার পাঁচ ভাগেরও কম লাগে। কারণ হিমালয় থেকে পলি এসে আমাদের যে মাটি তৈরি হয়েছে তা খুব নরম। আর পাকিস্তানে পাহাড় থেকে মাটি কেটে তার ওপর পাথর বসিয়ে অনায়াসে তারা রাস্তা নির্মাণ করে থাকে। ভারতে পাহাড় আছে। তারাও পাহাড় কেটে পাকা রাস্তা নির্মাণ করে। তাদের জন্য পাকা রাস্তা নির্মাণ সহজ। কিন্তু আমাদের অঞ্চলে পাকা রাস্তা কোনো দিনই টিকবে না। বৃষ্টি হলে এক বছরের মধ্যেই রাস্তা ভেঙে যায়। তাদের দেশেও বৃষ্টিতে রাস্তা ভেঙে থাকে। তাদের ২৪ ঘণ্টা লোকবল থাকে। যেখানে ভেঙে যায় সঙ্গে সঙ্গে তারা ঠিক করে নেয়। কিন্তু আমাদের এত টাকাপয়সা নেই। একটু গর্ত হলে তাতে সব রাস্তাই ভেঙে যায়।

আমাদের রাস্তাগুলোর ‘অরিজিন’ কী, তা প্রথমে জানতে হবে। আমাদের রাস্তাগুলো ছিল মূলত পায়ে হাঁটার। এরপর ইউনিয়ন পরিষদ হলো এবং এ রাস্তাগুলো ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে গেল। এরপর পর্যায়ক্রমে জেলা বোর্ড, সড়ক ও জনপথের অধীনে রাস্তাগুলো ন্যস্ত হলো। সাপের মতো আঁকাবাঁকা এ রকম রাস্তা পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। কেননা রাস্তা নির্মাণের জন্য কেউ জমি ছেড়ে দিতে চান না। বাংলাদেশে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করে কয়েকটি জায়গায় বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, রাস্তার একপাশের মাটি কাটলে অন্য পাশের লোক বাধা প্রদান করে। তাই দুই পাশ থেকেই মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এ রাস্তাগুলো খুবই ব্যয়বহুল।

আমাদের দেশে নদীপথ উন্নয়ন করা উচিত ছিল অনেক আগেই। তা না করে আমাদের বিরাট ভুল হয়ে গেছে। নদীপথই আমাদের আসল পথ। এখন এ রাস্তাগুলো করাতে আমাদের নদীপথ বন্ধ হয়ে গেছে। নদ-নদীর প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। বন্যার সময় দেখা যায়, রাস্তাঘাট ভেঙে সব শেষ। পানির যে এত শক্তি তা চিন্তাই করা যায় না। আমি একবার বন্যার সময় প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবের সঙ্গে ফুলছড়ি ঘাট দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রেললাইনগুলো পানির তোড়ে সব আঁকাবাঁকা হয়ে গেছে। পানির স্রোতে রেললাইন পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। পানির প্রবাহে বাধা দেওয়া অথবা নদীপথ বন্ধ করা আমাদের ঠিক হয়নি। এখনো আমাদের সময় আছে বলে মনে করি। এ রাস্তাগুলো যত টাকা খরচ করি না কেন কোনো দিনই ভালো হবে না। যদি নতুন কোনো পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয় তখন হয়তো রাস্তাগুলো ভালো করা যাবে। বিশ্বের বড় বড় এক্সপার্ট যেসব চিন্তাভাবনা করেন এসবের সঙ্গে বাস্তবে আমাদের কোনো মিল নেই। আমরা এ দেশের মানুষ। ছোটবেলা থেকেই আমরা দেখেছি এখানে কী হয়, না হয়। যেমন আমাদের রংপুরের রাস্তা করতে যে টাকা লাগে, ফরিদপুরে সে রাস্তা করতে এর কয়েক গুণ বেশি টাকা লাগে। কারণ সেখানে অনেক উঁচু করতে হয়। তা ছাড়া ইঁদুরে গর্ত করে রাস্তা ভেঙে ফেলে। এক জায়গা মেরামত করতে করতে অন্য জায়গা ভেঙে যায়। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান চেষ্টা করেছিলেন কংক্রিট রাস্তা নির্মাণের। রড, সিমেন্ট, কংক্রিট দিয়ে ঢালাই রাস্তা করার। বগুড়া থেকে রংপুর পর্যন্ত তিনি এ ঢালাই রাস্তা নির্মাণ করিয়েছিলেন। কিন্তু সে রাস্তাও দু-তিন বছরের বেশি টেকেনি। কারণ তখন ৩ থেকে ৫ টন ভারী ওজনের গাড়ি চলাচলের চিন্তাভাবনা ছিল। এখন যে পদ্ধতিতে রাস্তাগুলো হচ্ছে তা সনাতনী পদ্ধতিতে হচ্ছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, ‘চাইনিজ ঠিকাদারদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।’ আসলে চাইনিজদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের দায়িত্ব হলো কাজগুলোর টেকসই নিশ্চিত করা। যেমন ইরানের শাহ তাদের দেশে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে তার ওপর দিয়ে কত টন পর্যন্ত পরিবহন করা যাবে তার জন্য প্রকৌশলীদের ব্রিজের নিচে রেখে সেই ওজন দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিতেন। কারণ ভেঙে পড়লে প্রকৌশলীরাই আগে মরবেন। এখানে গাফিলতি বা চুরির কোনো জায়গা নেই। যা হোক, এ সভ্য জগতে তো এ রকম আইন করা সম্ভব নয়। যখন আমাদের ঢাকা-রংপুর রাস্তাটি হয় তখন আমি একদিন আসছিলাম। তখন দেখি, বগুড়ায় কোরিয়ান কোম্পানির লোকজন খোলা ভ্যানের মধ্যে বসে চা খাচ্ছেন। ভ্যানের মধ্যে বসা, মাথায় ক্যাপ পরা ইঞ্জিনিয়াররা চা পান করতে করতে যাচ্ছেন। এটা দেখে আমি গাড়ি থামালাম। তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, What is this?  Sir, we are testing this road. আমি বললাম, What do you mean by this? তারা বলল, If we can take tea properly on the road on this van, that means the road is plain and ok.  তখন কথাটা শুনে অবাক হলাম যে, সত্যি গাড়িতে বসে যদি চা পান করা যায় তাহলে নিশ্চয়ই সে রাস্তা ভালো হবে। আমেরিকাসহ অনেক দেশ আছে যেখানে গাড়িতে বসে লোকজন চা, বিয়ার পান করে।

রেলওয়ে সেক্টর আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ আমল থেকেই আমরা সমগ্র বাংলাদেশের রেলওয়ের একটা বিস্তৃত নেটওয়ার্ক উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি। ১৮৬২ সালে কুষ্টিয়ার দর্শনা ও জগতীর মাঝখানে রেলওয়ে লাইন প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে পূর্ববঙ্গে রেললাইনের যাত্রা হয়। ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে মিটার গেজ ও পশ্চিমাঞ্চলে ব্রডগেজ রেলওয়ের বিস্তৃতি ঘটে। মূলত যমুনা নদী বাংলাদেশ রেলওয়েকে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে ভাগ করে রেখেছিল। পশ্চিমাঞ্চল ছিল কলকাতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর সমগ্র পূর্বাঞ্চল ও আসাম ছিল চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের সদর দফতর ছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর রেলওয়ে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চলে যায়। তখন আমাদের রেলওয়ের নাম ছিল P R (পাকিস্তান রেলওয়ে)। তখন রেলওয়েই ছিল চলাচলের প্রধান মাধ্যম। সে সময় রেলওয়ে খুব ভালোভাবেই চলছিল। তখন ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার জন্য বাহাদুরাবাদ ও তিস্তামুখ ফেরিঘাট (ব্রহ্মপুত্র নদ) পার হয়ে যেতে হতো। প্রতি বছর তিস্তামুখ ঘাট ভেঙে যেত। আর বাহাদুরাবাদ ও তিস্তামুখ ফেরিঘাট চালু রাখার জন্য প্রতি বছর সরকারের সে সময়কার প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় হতো। লোকসান না দেওয়ার জন্য ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের আওতায় এনে P E R (পাকিস্তান ইস্টার্ন রেলওয়ে) হিসেবে আলাদা রেলওয়ে বোর্ড গঠন করা হয়। তখন থেকেই ধীরে ধীরে রেলওয়ের অবস্থা শোচনীয় হতে থাকল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা করলাম B R (বাংলাদেশ রেলওয়ে)। ১৯৮২ সালে এ বোর্ডের অবলুপ্তি ঘটানো হয় এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আওতায় রেলওয়ে ডিভিশন করা হয়। ১৯৯৫ সালে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে এক চুক্তিবলে নয় সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ রেলওয়ে অথরিটি (বি আর এ) গঠন করা হয়। দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশ রেলওয়ে হওয়ার পর রেলওয়ের অবস্থা আরও শোচনীয় হতে থাকে। বর্তমানে দেখা যায়, রেলওয়ের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেবল পূর্বাঞ্চলই প্রাধান্য পাচ্ছে। আর রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল বলতে কিছুই নেই, এখানে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয় না। আপনারা যারা কলকাতা থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লি গেছেন, নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে, বিহারে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত ট্রেনের গতি অনেক কম থাকে। তারপর দিল্লি থেকে যখন হাওড়ার দিকে আসে, তখন বোঝা যায় ট্রেনের গতি আরও কমে যাচ্ছে। তখন যাত্রীরা তৈরি হন ট্রেন থেকে নামার জন্য।

আমরা রাস্তার জন্য যে অর্থ ব্যয় করি, তা ব্যয় না করে আমরা ট্রেন লাইন উন্নত করতে পারি। ট্রেন লাইনে অনেক মালামাল পরিবহন করতে পারি। কিন্তু তাতে আমরা নজর দিচ্ছি না। ভারতে যোগাযোগব্যবস্থায় লাইফ লাইন হলো ট্রেন। তারা অনেক উন্নতমানের ট্রেন চালাচ্ছে। আমাদের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রচুর বাজেট বরাদ্দ করা দরকার। আমাদের পাশের দেশের কথাই বলি। ভারতে দুধের খুব অভাব ছিল। কোনো জায়গায় দুধ থাকত, কোনো জায়গায় থাকত না। বড় দেশ। আমূল হওয়ার পর পুরো দেশ দুধে সমৃদ্ধ হলো। এটা নির্ভর করে গোখাদ্যের ওপর, কাঁচা ঘাসের ওপর। দুধ যখন বেশি হয় তখন বেশি দাম পাওয়ার জন্য তারা মিল্ক কনটেইনার করেছে। আমাদের পাবনা থেকে যদি ঢাকা পর্যন্ত আমরা কনটেইনারে দুধ নিয়ে আসি তাহলে সাশ্রয়ী মূল্যে দুধ পাওয়া যাবে। ভারতে ফ্রিজ কনটেইনার আছে। সেগুলো দিয়ে মাছ বরফজাত করে শহরে পাঠিয়ে দেয়। এতে রাস্তায় চাঁদাবাজি হয় না; যার জন্য কৃষক ন্যায্যমূল্য পায় এবং শহরবাসীরাও টাটকা শাক-সবজি থেকে শুরু করে মাছ, দুধ পেয়ে থাকেন। আমাদের ট্রাক-বাসের চাঁদাবাজি তো ঐতিহাসিক হয়ে গেছে। হাজার হাজার লোক বেকার। যেখানে পাঁচটা বাস আছে, সেখানে শতাধিক শ্রমিক নেতা হয়ে বসে আছে। সবাই চাঁদা ভাগ করে নেয়। সুতরাং ট্রেন হলে এ চাঁদাবাজির হাত থেকেও বাঁচা যাবে এবং সময়মতো মালামাল পৌঁছে যাবে।

ভারত এখন নতুন ট্রেন সিস্টেম করছে। চীনের রেল উন্নয়নের কথা বাদই দিলাম। এ প্রসঙ্গে ভারতের রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের সাফল্যের কথা উল্লেখ করা যায়। ভারতের রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছরের মাথায় তিনি ভারতীয় রেলকে লাভবান করে তুলতে অভাবনীয় সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর এ সূত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড, ফ্রান্সের এইচইসি আর ভারতের আইআইএম আহমদাবাদের মতো ভুবনবিখ্যাত ব্যবস্থাপনা স্কুলে পাঠ্য হতে চলেছে লালুর অধীনে ভারতীয় রেলের অভাবনীয় উত্তরণের কাহিনী। এ বীরগাথা সাফল্যের কারণ জানতে চাইলে ভারতের রেলমন্ত্রী লালু বলেছিলেন, ‘মা বলতেন, বেয়াড়া মোষকে লেজ ধরে জব্দ করা যায় না, শিং ধরতে হয়। আমি ঠিক সেটাই করেছি।’ আমাদের রেলমন্ত্রীকে মোষের শিং ধরতে হবে। তা না হলে আমাদের ট্রেনের অবস্থা ভালো হবে না। বেশ কিছুদিন আগে আমেরিকায় কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করছিলাম। তাদের বলেছিলাম, তোমাদের রেললাইন এত উন্নত নয় কেন? তারা বলল, ফোর্ড কোম্পানি নাকি ইনফ্লুয়েন্স করে তাদের রেলওয়েকে ভালো করতে দেয়নি। যদিও তাদের এত সম্পদ রয়েছে! সড়কপথগুলো তারা ভালো করেছে। আমাদের দেশের এখন টাটা, বিড়লা প্রভৃতি গাড়ি বিক্রেতার ইনফ্লুয়েন্সে যদি আমরা রেলপথ ভালো না করি, তাদের গাড়ি বিক্রির জন্য সড়কপথ তৈরি করি, আর সে রাস্তায় তাদের ২০-২৫ টন ওজনের গাড়ি চলে তাহলে সে রাস্তা বেশিদিন টিকবে না। তাহলে এ রাস্তা করেও লাভ কী? যে রাস্তা রয়েছে সেগুলো মেরামত করাই ভালো। তাই আমি মনে করি ট্রেনের দিকে আমাদের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর