রবিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

তিস্তার পানি সংকট

অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্সা পেতে হবে

উজানে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে খরস্রোতা তিস্তা অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। দেশের অন্যতম বৃহত্তম নদী তিস্তার অবস্থা এখন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতার মতো ‘পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি’। তিস্তা শুকিয়ে যাওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। গত ৯ জানুয়ারি তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ছিল মাত্র ৪ হাজার কিউসেক। অথচ আর কদিন পরই তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। পানি আরও কমে গেলে সেচ প্রকল্প সচল রাখাই কষ্টকর হয়ে পড়বে। পানি সংকটে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার তিস্তাপারের জীবনযাত্রা ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজও অকার্যকর হওয়ার উপক্রম। তিস্তা নদীতে দিনভর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন যে জেলেরা তারা এখন কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে হেঁটেই তিস্তা পাড়ি দেওয়া যায়, তাই খেয়াঘাটের মাঝিদের আর নৌকা বাইতে হয় না। এ কারণে বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন মাঝিমাল্লারা। কেউ কেউ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেলেও কেউ কেউ তিস্তা ব্যারাজের সামনে সামান্য যে পানি আছে তাতেই পর্যটকদের নৌ-ভ্রমণের আনন্দ দিয়ে আয় করছেন ডাল-ভাতের টাকা। প্রমত্তা তিস্তা শুষ্ক মৌসুমে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে উজানে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের কারণে। এক দশক আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হবে এমনই কথা ছিল। এ যৌথ নদীর পানি শুষ্ক মৌসুমে আধাআধি ভাগের চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত সে চুক্তি থেমে যায়। পানি বণ্টন চুক্তি দীর্ঘ এক দশক ধরে ঝুলে থাকায় তা দুই দেশের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বকে জনগণের বন্ধুত্বে পরিণত হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। আমরা আশা করব, এ বিষয়ে নয়াদিল্লির গরজ অনুভূত হবে। বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের আকুতিকে মূল্য দিতে অচিরেই তিস্তার পানি বণ্টনের জট খুলবে- এমনটিই প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর