বৃহস্পতিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডায়াবেটিস সচেতনতা

অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী

ডায়াবেটিস সচেতনতা

২৮ ফেব্রুয়ারি ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশে^ ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪২.৫ কোটি। এর তিন-চতুর্থাংশ বাস করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশসমূহে। ১ মিলিয়নের বেশি শিশু ও কিশোর ধরন-১ ডায়াবেটিসে ভুগছে। প্রায় ২১ কোটি রয়েছে অনির্ণীত অবস্থায়। ডায়াবেটিস, বিশেষত টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধের এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে এ সংখ্যা ২০৪৫ সালের মধ্যে ৫৯ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন মূলত তিনটি উপাদান- শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাট। এগুলো নানা রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। শর্করা যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কার্যকর হয় তাতে মূলত প্যানক্রিয়াস (পেটের একটি বিশেষ অংশ) থেকে নিঃসৃত ইনসুলিন নামে এক ধরনের হরমোনের সাহায্য লাগে। কোনো কারণে এই ইনসুলিন কম নিঃসৃত হলে বা নিঃসরণ একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে শর্করা আর কোনোও কাজে লাগে না। ফলে তখন শরীরে শর্করার পরিমাণ বেশি হয়ে যায়।

ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে :

কায়িক পরিশ্রম না করা। মোটা বা স্থূলকায় হয়ে যাওয়া। অতিমাত্রায় ফাস্টফুড খাওয়া ও কোমল পানীয় (সফট ড্রিংকস) পান করা। অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকা। ধূমপান করা ও তামাক খাওয়া। গর্ভকালীন বিভিন্ন সমস্যা। যাদের বাবা-মা অথবা রক্তসম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে এবং যাদের বয়স ৪৫ বছরের বেশি তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা আছে। কাজেই ডায়াবেটিস সম্পর্কে তাদের অধিকতর সতর্ক থাকা দরকার। একজন ডায়াবেটিস রোগী বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তে ডায়াবেটিস সমিতির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা অধিভুক্ত বা সাব-অধিভুক্ত সমিতিতে গিয়ে ডিজিটাল নিবন্ধন করতে পারেন। ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধনকৃত যে কোনো রোগী যে কোনো কেন্দ্র থেকে একই নিবন্ধনের মাধ্যমে যে কোনো সেবা নিতে পারবেন। রোগী নিবন্ধিত তথ্যগুলো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বা মোবাইলে দেখতে পারবেন। চিকিৎসা পদ্ধতির পরিবর্তন বা পরিবর্ধনসংক্রান্ত তথ্য হাতের নাগালে থাকায় আপনার বিভিন্ন জটিলতা বা ঝুঁকিসংক্রান্ত বিষয়েও আপনি অবগত হতে পারবেন। যে কোনো সময়ে চিকিৎসা নিয়ে সেন্ট্রাল পদ্ধতিতে আলোচনার সুযোগ থাকবে। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে মোবাইলে ইব্রাহিম হেলথ-লাইনের মাধ্যমে আপনার নিকটস্থ সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। রোগীদের ডিজিটাল নিবন্ধন সুবিধাসমূহ : যে কোনো সেবা কেন্দ্রের চিকিৎসক উপস্থিত যে কোনো রোগীর তথ্যাদি-শারীরিক অবস্থা, পূর্ববর্তী শারীরিক অবস্থা, জটিলতা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বর্তমান পরীক্ষার তথ্য, চিকিৎসা পদ্ধতি, খাবার ওষুধ ও ইনসুলিন, শর্করা নিয়ন্ত্রণের তথ্য ইত্যাদি জেনে নিতে পারবেন। যে কোনো কেন্দ্রের চিকিৎসক আগের চিকিৎসার ধরন দেখে চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারবেন। রোগের বৈশিষ্ট্য, ক্রম পরিবর্তন, রোগের বিবর্তন, চিকিৎসার ধারা পর্যালোচনা করার সুযোগ থাকবে।

ডায়াবেটিসে প্রতি ৭ সেকেন্ডে একজন মৃত্যুবরণ করছে। এর প্রতি ১২ জনে একজন ডায়াবেটিসে সংক্রান্ত। বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রতি দুজনের মধ্যে একজন জানেন না, তিনি এ রোগে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞরা জানান, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট উদ্যোগী এবং বিভিন্ন মাত্রায় সফল; কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। অর্থাৎ বাংলাদেশের ডায়াবেটিস রোগীরা তুলনামূলক খারাপ অবস্থায় জীবনযাপন করছে। বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৪১ কোটি। বাংলাদেশে প্রায় ৭১ লাখ, বছরে বাড়ছে আরও ১ লাখ রোগী। কেবল ডায়াবেটিস জটিলতা কমাতে পারলে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতেই বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় কমানো সম্ভব বলে মনে করছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। ডায়বেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ : ডায়াবেটিস ও এর জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব (টাইপ-২ ডায়াবেটিস ৭০% পর্যন্ত প্রতিরোধ করা সম্ভব)। বিভিন্ন গবেষণায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধে যেসব উপায় সম্পর্কে বলা হয়েছে, তা হচ্ছে- জীবনযাপনে পরিবর্তন ও সঠিক পরিবেশ। পুষ্টিকর ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ। শরীরচর্চা। যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা।

সবচেয়ে বড় কথা এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা এবং যথাযথ চিকিৎসার অভাবে অসংখ্য লোক অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্ববরণ করা ছাড়াও অকালে মৃত্যুবরণ করছে। অনেক ডায়াবেটিস রোগীর জটিলতার কারণে পায়ে পচনশীল রোগ হতে পারে এবং এর ফলে পা কেটে ফেলার মতো অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। পরিমিত খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করতে পারলে তবেই প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগী স্বাভাবিকের মতো, সৃজনশীল কাজে সক্ষম ও সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারবেন- আজকের দিনে এই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : শব্দসৈনিক

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর