শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
মতামত

সামাজিক বৈষম্য কমাতে হবে

অপূর্ব আজাদ

গত এক দশকে দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়েছে স্পুটনিক গতিতে। সব মিলিয়ে চার যুগে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্ববাসীর নজর কাড়ার মতো। তবে উন্নয়নের সুফল দেশের ১৬ কোটি মানুষের সবার কাছে পৌঁছেনি সামাজিক বৈষম্যের কারণে। গত চার যুগে বাংলাদেশের উন্নয়নের সিংহভাগ সুফল ভোগ করেছে ধনিক শ্রেণি। গরিবের মধ্যে এর সুফল পৌঁছানোর ব্যর্থতা ধনী-গরিবের ব্যবধান ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে চলছে। এ কথা ঠিক, দুনিয়ার সব দেশেই ধনী-গরিবের ব্যবধান আকাশসমান। সাম্যবাদের মন্ত্রে যারা এখনো উজ্জীবিত সেই চীন, ভিয়েতনামেও ভিন্নতা কিছু হয়নি। এ দুই দেশে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সম্পদ পুঞ্জীভূত করার সুযোগ দেওয়ার পর কোটিপতির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ দারিদ্র্যমোচনে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখালেও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফলের বড় ভাগ ধনীদের ভাগে পড়ায় হতদরিদ্রদের ভাগ্যে নজর কাড়ার মতো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে না। পাকিস্তানের পশ্চিমাংশের সঙ্গে পূর্বাংশের বৈষম্যের কারণেই বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এখন বাংলাদেশেই এক মানুষের সঙ্গে আরেক মানুষের বৈষম্য সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করতে চলেছে। এ বৈষম্য নিরসনে পিছিয়ে পড়া অংশের উন্নয়নে সরকারকে ফলপ্রসূ কর্মসূচি নিতে হবে। সামাজিক বৈষম্য নিরসনে সরকার নিজেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

১৯৭১-এর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা ও নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার পর সহায়সম্বলহীন যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতিকে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিপুল জনসংখ্যার সদ্যস্বাধীন দেশটি পৃথিবীর সবচেয়ে গরিব দেশ হিসেবে চিহ্নিত ছিল। ’৭১-এ ফসলের মাঠে দুই ফোঁটা পানির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত বাংলার মানুষ। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মুখে সামান্য খাবার তুলে দিতে সাহায্যের ঝুলি নিয়ে ঘুরতে হয়েছে ধনী দেশগুলোর দ্বারে দ্বারে। যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো আর শূন্য ভা-ার নিয়ে যাত্রা করা বাংলাদেশ এখন আর সে অবস্থায় নেই। নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে শক্ত ভিত্তি করে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক স্বীকৃতি অর্জনকারী দেশ এখন বাংলাদেশ। বিপুল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে আগামী দুই দশকের মধ্যেই বিশ্বে দাতা দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। এ উন্নয়নও বিশ্বস্বীকৃত। ২০১৫ সালেই বিশ্বব্যাংকের মানদন্ডে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নাম উঠেছে বাংলাদেশের। অর্থনীতির আকারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৪৩, আর ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় বিশ্বের ৩৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘প্রাইস ওয়াটার কুপার হাউস’ বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৮তম বড় অর্থনীতির দেশ, ২০৫০ সালে আরও ৫ ধাপ এগিয়ে আসবে ২৩ নম্বরে।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ‘দ্য হ্যারিটেজ ফাউন্ডেশন’ কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিক ক্রমতালিকা প্রকাশ করছে। সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০ দেশের মধ্যে ১২৮তম ও এশিয়ায় ৪১ দেশের মধ্যে ২৮তম। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, বাংলাদেশ প্রতি বছরই এ তালিকায় ওপরের দিকে উঠে এসেছে এবং ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশকে টপকেছে। এ তালিকায় যথাক্রমে ১৩০ ও ১৩১তম অবস্থানে আছে ভারত ও পাকিস্তান। গবেষণা সংস্থাটির মতে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হচ্ছে ব্যবসায়িক পরিবেশের চেয়ে বেশি কিছু। অর্থাৎ এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা যেখানে উদ্যোক্তারা মুক্তভাবে তাদের কর্মকা- করতে পারবেন এবং দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে মানুষের ক্ষমতায়ন হবে এবং সকল শ্রেণির মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিটি নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশবাসীকে দেওয়া তাদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও সামাজিক বৈষম্য যে কমছে না এ এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা। এ ঘেরাটোপ থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসা যাবে সে পথ উন্মোচন এখন সময়ের দাবি। স্বীকার করতেই হবে, সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষকে এগিয়ে নিতে নানা কর্মকৌশলের আশ্রয় নেওয়া হলেও আশা অনুযায়ী সুফল অর্জিত হচ্ছে না। স্বাধীনতার সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার স্বার্থে সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে সরকারকে আরও তৎপর হতে হবে। একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। বৈষম্য কমানো বলা যত সহজ বাস্তবায়ন পর্যায়ে তা কঠিন কাজ। এ কঠিন কাজটি করার ক্ষেত্রে সরকারকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। পিছিয়ে পড়া অংশের জনগোষ্ঠীকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে বেছে নিতে হবে জুতসই কর্মকৌশল।

                লেখক : প্রকৌশলী।

সর্বশেষ খবর