বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব রসুলুল্লাহ

মাওলানা আশরাফ আলী

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন শিষ্টাচার ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর সময় যে আরবরা ছিল শতধাবিভক্ত, হানাহানি ছিল যাদের স্বভাবের অংশ, তারা ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত হয়। হানাহানি দূরীভূত হয় আরব সমাজ থেকে। তার বদলে আরবরা একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইমানদার ব্যক্তি আপাদমস্তক বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার প্রতীক। যে ব্যক্তি কারও সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক রাখে না, তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই, সে নিজেও ভালোবাসাপ্রাপ্ত হয় না।’ (মুসনাদে আহমাদ থেকে মিশকাতে)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাচারের দিকে দৃষ্টিপাত করলে শিষ্টাচারিতা, নম্রতা, ভদ্রতার যে পরিচয় মেলে তা আদর্শস্থানীয়। তিনি ছিলেন সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের মূর্তপ্রতীক।  ছিলেন অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী। ছিলেন এমন একজন শুদ্ধাচারী মানব, যিনি কারও প্রতি কখনো কটুবাক্য ব্যবহার করেননি। কখনো দুর্ব্যবহার করেননি। পরিচিত-অপরিচিত সবার সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণ করতেন। কারও সঙ্গে দেখা হলে সর্বপ্রথম তিনি তাকে সালাম দিতেন। এমন বিনয়ী ছিলেন যে, কারও কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কথা বলতেন না। তিনি এতই বিনয়াবনত ছিলেন যে, সাহাবিরা তাঁকে দাঁড়িয়ে সম্মান দিলে তিনি তাদের নিরুৎসাহিত করতেন। আল কোরআনে তাঁর নম্রতা সম্পর্কে ঘোষিত হয়েছে, ‘এ আল্লাহরই রহমত যে, আপনি তাদের (উম্মতের) প্রতি বিনয়ী, নম্র, নতুবা আপনি যদি কর্কশভাষী ও পাষাণ হতেন, তাহলে এসব লোক আপনার চারপাশ থেকে সরে পড়ত।’ মহানবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন দয়া ও মহানুভবতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত উদারচেতা। অসহ্য নির্যাতন-নিপীড়নের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও কাউকে কখনো অভিশাপ দেননি। মানুষের মঙ্গল কামনাকে অলঙ্ঘনীয় কর্তব্য বলে মনে করতেন। কেউ দোষ করলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখতেন। ইসলাম প্রচারের প্রাক্কালে কুরাইশদের হাতে তাঁকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। অবিশ্বাসী ও বিপথগামীদের অত্যাচার, উৎপীড়ন-নিপীড়ন সত্ত্বেও তিনি অভিশাপ দেওয়ার বদলে আল্লাহর কাছে তাদের ক্ষমার জন্য ফরিয়াদ করেছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘আমি মানুষকে অভিশাপ দেওয়ার জন্য আসিনি, এসেছি ক্ষমা ও দয়া করার জন্য।’ মক্কা বিজয়ের পর কুরাইশরা ভীত হয়ে পড়েছিল। তারা মুসলমানদের ভয়ে কে কোথায় পালাবে ভেবে ব্যাকুল হয়ে যায়। কিন্তু রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন এবং তিনি শ্রেষ্ঠতম দয়ালু।’

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর