সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
ইতিহাস

মুসা খানের আত্মসমর্পণ

মুঘল সেনাপতি ইসলাম খানের কাছে একের পর এক পরাজয়ে মুসা খান এতটাই বিচলিত হয়ে পড়েন যে, তিনি তাঁর রাজধানীতে অবস্থান করাও তখন নিরাপদ মনে করেননি। তিনি সোনারগাঁ নগর পরিত্যাগ করে ইবরাহিমপুর চরাঞ্চলে পশ্চাদপসরণ করেন। সোনারগাঁ নগরের দায়িত্বে নিয়োজিত হাজী শামসুদ্দিন বাগদাদি পরে ইসলাম খানের নিকট আত্মসমর্পণ করেন এবং তাঁর নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে নগরের দায়িত্ব প্রত্যর্পণ করেন (মধ্য এপ্রিল, ১৬১১)। স্বীয় রাজধানী শহরের পতন মুসা খানের প্রতিরোধ ক্ষমতার গোটা ভিত্তিকেই বানচাল করে দেয়। রাজধানীর পতন ছিল বস্তুত তাঁর ব্যর্থতার স্মারক। অবশ্য তিনি তাঁর হূত অবস্থান পুনরুদ্ধারের জন্য বেপরোয়া হয়ে কয়েকবারই মুঘলের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করেছেন। কিন্তু এসব অভিযানে পুনঃপুনঃ ব্যর্থতা পরিণামে তাঁর আত্মসমর্পণকেই ত্বরান্বিত করেছে। ইবরাহিমপুরে তাঁর আশ্রয়স্থল থেকে মুসা খান মুঘল সেনানায়ক শেখ কামালের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর ভাইদের এবং মৈত্রী জোটের জমিদারদের নিয়ে ইসলাম খানের নিকট আনুগত্য স্বীকার করেন। জাহাঙ্গীরনগরে মুসা খান ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে অবাঞ্ছিত বাধ্যবাধকতা এবং কড়া নজরদারিতে রাখা হয়। মুসা খান ও তাঁর মিত্র জমিদারদের নামে মাত্র তাদের জমিদারি জায়গির হিসেবে ফিরিয়ে দেওয়া হলেও বস্তুত তারা তাদের জমিদারি অধিকার থেকে বঞ্চিত হন এবং মুঘল বাহিনীতে ব্যক্তিগতভাবে অংশগ্রহণে বাধ্য হন। তাদের জমিদারির অধীনস্থ এলাকা দখল করে নেওয়া হয়, তাদের সেনাবাহিনী সম্ভবত ভেঙে দেওয়া হয়, গোটা নৌবহর বাজেয়াপ্ত করে রাজকীয় নৌবহরের সঙ্গে অতিরিক্ত বহর হিসেবে যুক্ত করা হয়।

মুঘল সুবাহদার ইবরাহিম খান ফতেহ জঙ্গ, মুসা খানের নেতৃত্বাধীন বিশিষ্ট জমিদারদের ব্যাপারে সমঝোতা সৌহার্দ্যরে নীতি গ্রহণ করেন। তিনি ১৬১৮ খ্রিস্টাব্দে মুসা খান ও অপরাপর জমিদারদের পূর্ণ স্বাধীনতায় বহাল করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর