বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

মহররম মাসের মর্যাদা করণীয় ও বর্জনীয়

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

মহররম মাসের মর্যাদা করণীয় ও বর্জনীয়

মহররম শব্দের অর্থ মর্যাদাপূর্ণ। অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রহস্যময়  তাৎপর্য নিহিত রয়েছে এ মাসকে ঘিরে। বিশেষ মর্যাদার কারণেই মহররম মাসকে মহানবী (সা.) আল্লাহর মাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা। আশুরার দিনটি যুগ যুগ ধরে অনেক তাৎপর্যপূর্ণভাবে ও মর্যাদার সঙ্গে পালন হয়ে আসছে। এ দিনের সর্বাপেক্ষা আলোচিত বিষয় হলো কারবালার ইতিহাস। মূলত এ দিনের তাৎপর্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য আরও প্রাচীন। আশুরার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য এবং স্মরণীয় বরণীয় ঘটনার শীর্ষে স্থান পায় হজরত মুসা (আ.)-এর একটি ঘটনা। এই দিনে তিনি অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। মহাপরাক্রমশালী প্রভু আল্লাহপাক সে দিন চিরকালের জন্য নীলনদে ডুবিয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন ভ্রান্ত খোদা দাবিদার ফেরাউন ও তার বিশাল বাহিনীকে। এ ঘটনার বিবরণে ইমাম বুখারি (রহ.) সাহাবি হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সা.) হিজরত করে মদিনায় পৌঁছে মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা পালন করতে দেখেন। রসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করেন, এই দিনে কী ঘটেছে যে, তোমরা এতে রোজা পালন কর? তারা বলে এই দিনটি অনেক বড় দিন, এই দিনে আল্লাহতায়ালা মুসা (আ.) ও তাঁর সাথীগণকে ফেরাউন থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এরই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ হজরত মুসা (আ.) রোজা রাখতেন। তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। ইহুদিদের উত্তর শুনে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হজরত মুসা (আ.)-এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে অধিক যত্নশীল হওয়ার অধিকারী। অতঃপর তিনি নিজেও আশুরার রোজা রাখেন এবং মুসলমানদের তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন তখন সাহাবিগণ অবাক হয়ে বলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.) বিধর্মীরা তো এই দিনটিকে বড় দিন মনে করে। এই দিনে তারাও রোজা পালন করে। আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি তা হলে তো এদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে। তাদের প্রশ্নের উত্তরে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন (তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে) আগত বছরে ইনশা আল্লাহ এই ১০ তারিখের সঙ্গে নবম তারিখে মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব (সহিহ মুসলিম)। অপর বর্ণনায় রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখ, তবে এক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরও একটি রোজা রেখে নিও (মুসনাদে আহমাদ)। উপরোক্ত হাদিসগুলোর আলোকে প্রমাণ হয়, আশুরার রোজা হবে দুটি : মহররমের ১০ তারিখে একটি আর ৯ তারিখে অথবা ১১ তারিখে আরও একটি।

লেখক : কলামিস্ট গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর