সোমবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

পশ্চিমা অশ্লীল সংস্কৃতি মুসলমানের জন্য লজ্জার

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

পশ্চিমা অশ্লীল সংস্কৃতি মুসলমানের জন্য লজ্জার

বছরের শেষ সূর্য যখন ডুবে যায়, তখন হৃদয়ে এক ধরনের হাহাকার বিরাজ করতে থাকে। হায়! জীবন থেকে একটি বছর ঝরে পড়ল। কিন্তু রাত শেষে যখন বছরের প্রথম সূর্য উঠে, তখন হৃদয়ে ভিন্ন এক উল্লাস টের পাই। আবার একটি বছর শুরু হলো। নিজেকে গোছানোর, নিজেকে সাজানোর লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আরও একটি গোটা বছর আমি পেয়েছি। এই এক বছরে আমাকে ওই পর্যন্ত যেতে হবে। আমাকে এটা অর্জন করতে হবে। আমাকে এতগুলো বই পড়তে হবে। আমি এতগুলো ভালো কাজ করব। এ ধরনের বিভিন্ন লক্ষ্য আমরা ঠিক করে নিতে পারি। নতুন সূর্য বলে যদি কিছু না হতো অথবা নতুন বছর যদি আমরা উপলব্ধি না করতাম তাহলে এই যে নতুন করে স্বপ্ন দেখা, নতুন করে বাঁচার আশা, নতুন করে নিজেকে সাজানো এগুলো কিছুই হতো না। তাই তো আল্লাহ দুনিয়াজুড়ে নতুনের মেলা ছড়িয়েছেন। দিয়েছেন নতুন দিন, মাস এবং বছর। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘মহাবিশ্বের সৃষ্টির সময় থেকেই জারি করা বিধান অনুসারে আল্লাহর কাছে গণনার জন্য মাস হচ্ছে ১২টি। এর মধ্যে চারটি মাস তথা মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ হিংসা-সংঘাত নিষিদ্ধ মাস। এটি স্থায়ী বিধান। অতএব এর মধ্যে তোমরা নিজেদের ওপর জুলুম কর না। আর শরিককারীরা যেভাবে একাট্টা হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তোমরাও সঙ্ঘবদ্ধভাবে ওদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রামে সর্বস্বত্যাগে প্রস্তুত থাক। জেনে রাখ, আল্লাহ-সচেতনদের সঙ্গে আল্লাহ সব সময়ই থাকেন।’ (সুরা তাওবা, আয়াত ৩৬)। দুনিয়াজুড়ে আমরা যে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি, তা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। এর আগে ছিল জুলিয়ান কালেন্ডার। এরও আগে রোমানরা গ্রিক পঞ্জিকা অনুযায়ী বছর ধরত ৩০৪ দিনে, যাকে ১০ মাসে ভাগ করা হয়েছিল। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির জন্ম তখনো হয়নি। মার্চ ছিল বছরের প্রথম মাস। এক সময় রাজা নুমা পম্পিলিয়াস দেখলেন ৩০৪ দিন হিসাবে বছর করলে প্রকৃতির সঙ্গে মিলছে না। খ্রিস্টপূর্ব ৭৯৩ অব্দে তিনি বছরের সঙ্গে যোগ করলেন আরও ৬০ দিন। বছরের দিন বৃদ্ধি পেল ঠিকই সঙ্গে সমস্যাও বৃদ্ধি পেল। ঋতুর চেয়ে সময় এগিয়ে আছে তিন মাস। তখনই জুলিয়াস সিজার ঢেলে সাজালেন বছরকে। নতুন দুটি মাস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে এলেন বছরের প্রথম দিকে। কথা ছিল মুসলমানদের সংস্কৃতি অন্যরা গ্রহণ করবে। কিন্তু আজ কী হলো মুসলমানের? তারাই ভিন্ন সংস্কৃতির গোলামি করছে। দুনিয়া আখেরাতের শ্রেষ্ঠ সম্পদ কোরআন ভুলে মুসলমানরা অন্যায়-অবিচারে ডুবে রয়েছে। তাই আল্লাহ তাদের কপালে অপমান আর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দিয়েছে। আফসোস মুসলমানরা অনুষ্ঠান-উপলক্ষ ছাড়া হিজরি সনের তারিখ জানে না। হিজরি সন শুরুর ইতিহাস ও উদ্দেশ জানে না অনেকেই। হিজরি সনের ১ তারিখ উদযাপনে ধর্মের নির্দেশনার অনুসরণ নেই। অন্যদিকে ঈসায়ী সন উদযাপনে খ্রিস্টদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে মুসলমান তরুণরা। থার্টিফার্স্ট নাইট নামে অশ্লীল সংস্কৃতির গোলাম হয়ে পড়েছে মুসলিম তরুণ-তরুণী। ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য তা  লজ্জা ও অপমানের।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর