গত ২২ মে গাফ্ফার ভাইয়ের ওপর বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম সাহেবের তথ্যসমৃদ্ধ লেখা এক কথায় অসাধারণ। তাঁর এ লেখনী দেখেই উৎসাহিত হলাম গাফ্ফার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু লিখতে যা শুধু দু-চারজনই জানেন। গোটা বিশ্বের সব বাঙালির অভিভাবক, বিবেক হিসেবে যে মহান ব্যক্তি স্বীকৃত, তিনি যে একসময় কঠিন অর্থকষ্টে জর্জরিত ছিলেন, সে কথা কজনই বা জানেন! তাঁর (প্রয়াত) স্ত্রী ১৯৭৪ সাল থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। ছিল স্কুলগামী পাঁচ সন্তান। এমন একটি সময় ছিল এ সাতজনের পরিবার চালানোর মতো আর্থিক অবস্থা তাঁর ছিল না। তাঁর সেই আর্থিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে সত্তর ও আশির দশকে যারা বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন, যথা খুনি জিয়া এবং এরশাদ, গাফ্ফার ভাইয়ের কাছে অনেক লোভনীয় টোপ ফেলে প্রস্তাব করেছিলেন তিনি যদি তাদের পক্ষে লেখালেখি করেন তাহলে তাঁকে প্রচুর অর্থ দেওয়া হবে। গাফ্ফার ভাই ঘৃণাভরে সেসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বরং ১৯৭৬ সালে ‘বাংলার ডাক’ পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন, যেটি ছিল গোটা বিশ্বে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে প্রথম সংবাদপত্র। ১৯৭৬ সালেই গাফ্ফার ভাই বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার ভূমিকা উন্মোচন করেছিলেন। এরপর জিয়া চেষ্টা শুরু করেছিলেন পয়সা দিয়ে গাফ্ফার ভাইকে হাত করতে। কিন্তু জিয়া গাফ্ফার ভাইকে চিনতে ভুল করেছিলেন। ‘বাংলার ডাক’ প্রকাশনায় গাফ্ফার ভাইকে সহায়তা করতেন এম আর আখতার মুকুল, বঙ্গবন্ধু গবেষক আবদুল মতিন এবং বাংলা টাইপিংয়ে সাহায্য করতেন আমার প্রয়াত স্ত্রী লায়লা চৌধুরী হাসি, যিনি বিবিসি বাংলা বিভাগে চাকরির সুবাদে বাংলা টাইপে অভ্যস্ত ছিলেন। সে সময় আধুনিক টাইপ মেশিন ছিল না। ছিল ‘মুনির অপটিমা’ নামে একটি প্রাচীনকালীন মেশিন। হাসি বিবিসিতে বসেই সেই টাইপ মেশিনে বাংলার ডাকের জন্য টাইপ করতেন। পত্রিকাটি বছর দুয়েক চলার পর আর্থিক অনটনের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এ দুই বছরেই গাফ্ফার ভাই যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিশালসংখ্যক পাঠককে জানাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল কারিগর ছিলেন জিয়া এবং মোশতাক গং, প্ররোচনায় ছিল পাকিস্তান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি শক্তি। পত্রিকাটি গোপনে বাংলাদেশেও পাঠানো হতো, যে কাজে তখন স্বদেশ রায়সহ আরও কিছু সাংবাদিক সহায়তা করতেন। পত্রিকাটি বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাফ্ফার ভাই চরম আর্থিক অনটনে পড়ে যান। ঠিক সে সময়ই ঝোপ বুঝে কোপ মারার চেষ্টায় লিপ্ত হন জিয়াউর রহমান। লন্ডনে জিয়া তার চরদের মাধ্যমে গাফ্ফার ভাইয়ের কাছে এ মর্মে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন যে তিনি জিয়ার বিরুদ্ধে লেখা বন্ধ করলে জিয়া তাঁকে বস্তাভরা টাকা দেবেন। এ ঘৃণ্য প্রস্তাবে উত্তেজিত হয়ে গাফ্ফার ভাই জিয়ার চরদের এই বলে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন যে দরকার হলে তিনি কুলির কাজ করবেন, তবু বঙ্গবন্ধুর খুনি জিয়ার কাছে বিক্রি হবেন না। ঠিক কুলির কাজ না করলেও বাস্তবেই তখন গাফ্ফার ভাই এবং মুকুল ভাই জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়েছিলেন পূর্ব লন্ডনের অল্ডগেট এলাকায় ‘স্টার কেশ অ্যান্ড কেরি’ নামক এক বৃহদাকার দোকানে বাংলাদেশি মাছ কাটার কাজে। কিন্তু আনিস নামক সেই দোকানের ধর্মান্ধ মালিক জিয়ার চরদের প্ররোচনায় কয়েক মাস পরই গাফ্ফার ভাই এবং মুকুল ভাইকে চাকরিচ্যুত করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মুকুল ভাই লন্ডনেই থেকে গিয়েছিলেন।
গাফ্ফার ভাই তখন বিবিসি বাংলা বিভাগেও খন্ডকালীন আউটসাইড কন্ট্রিবিউটরের কাজ করে যে পয়সা পেতেন তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল নগণ্য। আমার স্ত্রী তখন বিবিসি বাংলা বিভাগে কর্মরত আর আমি ব্রিটিশ সরকার চালিত যুক্তরাজ্য ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইজরি সার্ভিসের মধ্যম মর্যাদার এক কর্মকর্তা। বিবিসি বাংলা বিভাগ ছিল ‘বুশ হাউস’ নামক ভবনে, যা ছিল আমার দফতরের কাছে। দিনের শেষে আমি স্ত্রীকে বাসায় নেওয়ার জন্য বুশ হাউসে গেলে স্বভাবতই সেখানে আড্ডায় যোগ দিতাম বুশ হাউসের নিচতলায় বিবিসি ক্লাবে। বাংলা বিভাগের সিরাজুর রহমান তখনো বিএনপিতে যোগ দেননি, ছিলেন আমাদের চেতনায়, সেই প্রতিদিন সন্ধ্যার আড্ডায় সিরাজুর রহমান ছাড়াও যোগ দিতেন সৈয়দ শামসুল হক, কাদের মাহমুদ, কমল বসু, শ্যামল লোধ, দীপঙ্কর ঘোষ, ঝর্ণা গোলরে, ফজলে রাব্বি মাহমুদ হাসান, তালেয়া রেহমান, মানসী বড়ুয়া, নূরুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠান থাকলে গাফ্ফার ভাইও থাকতেন। এমনি একদিন গাফ্ফার ভাই তাঁর চরম আর্থিক অনটনের কথা জানিয়ে আমাকে বললেন, কাল তাঁর ঘরে খাবার পাক হবে না। একুশের অমর গানের লেখক, এই কিংবদন্তির মুখ থেকে এ কথা শোনার পর আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। সে সময় ইমিগ্রেশন ট্রাইব্যুনালসমূহে অনেক বাঙালির মামলার শুনানি হতো আর তারা বাংলায় সাক্ষ্য দিতেন বলে তা ইংরেজিতে অনুবাদ করার জন্য তরজমাকারীদের পদ ছিল, যাদের বেশ ভালো সম্মানি দেওয়া হতো। আমি পরদিনই গাফ্ফার ভাইকে একজন ইন্টারপ্রেটারের পদে বহাল করতে পেরেছিলাম বলে আজও নিজেকে ধন্য মনে করি। পরবর্তীতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ঢেউ লন্ডনে ছড়িয়ে পড়লে গাফ্ফার ভাই তাঁর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তখন যুক্তরাজ্যে এরশাদ নিয়োজিত হাইকমিশনার লে. জেনারেল মীর শওকত আলীও রাষ্ট্রদূতের পদ থেকে বিভিন্ন কারণে ইস্তফা দিয়ে গাফ্ফার ভাইয়ের এত বড় ভক্তে পরিণত হন যে গাফ্ফার ভাইয়ের পাশের রাস্তায়ই তিনি বাড়ি কেনেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও তিনি সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। সে সময় গাফ্ফার ভাই ‘এরশাদ মরিয়ম কাহিনি’ নামে একটি নাটক লিখে তা মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা করে মূল চরিত্রের জন্য আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আবদুল মালেক উকিলের ছেলে বাহারউদ্দিন খেলনকে বাছাই করেন। নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আগের দিন বাংলাদেশ হাইকমিশনের গোয়েন্দারা পূর্ব লন্ডনের প্রকাশ্য জনপদে খেলনকে বেদম প্রহার করছিল মাস্তানদের সহায়তায়। খেলনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে নাটকটির মঞ্চায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। গাফ্ফার ভাইয়ের ওপরও আক্রমণের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বহু কর্মী তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল। খেলন এক দিন পরই হাসপাতাল থেকে মুক্ত হওয়ায় নাটকটি যথাসময়ে পূর্ব লন্ডনের হাফ মুন থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়েছিল, যাতে অগণিত দর্শক ছিল।
গাফ্ফার ভাই দেশের রাজনীতির বিকৃত চিত্র তুলে ধরার মানসে ‘নতুন দিন’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলে আর্থিক সহায়তার জন্য এগিয়ে আসেন বেইজ ওয়াটার এলাকার ‘স্টার অব বোম্বে’ নামক রেস্তোরাঁর বিত্তশালী মালিক প্রয়াত তারা মিঞা, যিনি পরে মার্কেন্টাইল ব্যাংকেরও পরিচালক হয়েছিলেন। তিনি ‘নতুন দিন’ পত্রিকার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ জোগাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার পরও প্রয়োজন ছিল প্রচুর টাকাপয়সার। গাফ্ফার ভাই আমিসহ মোট নয়জনকে বললেন ওই পত্রিকার অংশীদার হতে। প্রতিজনকে তখন ১০ হাজার পাউন্ড করে দিতে হয়েছিল। আমি এরই মধ্যে ‘জনমত’ পত্রিকা কিনে নিয়েছিলাম। গাফ্ফার ভাই বললেন ‘জনমত’ আর ‘নতুন দিনে’ কোনো আদর্শগত সংঘাত হবে না। সে সময়টায় আমি যুক্তরাজ্য ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইজরি সার্ভিসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে বেশ উঁচু বেতনভুক ব্যক্তি ছিলাম। আমার স্ত্রীও প্রথমে বিবিসি এবং পরে টাওয়ার হ্যামলেটে একটি সরকারি কলেজে অধ্যাপনার জন্য বেশ মোটা অঙ্কের বেতন পাচ্ছিলেন। তার ওপর ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইজরিতে চাকরি নেওয়ার পর ১৯৮৩ সালেই লন্ডনে প্রথম বাড়িটি খরিদ করি, যার ওপর তলার অংশ ভাড়া দিতাম। সব মিলে আমার আর্থিক অবস্থা ছিল জমজমাট আর তাই গাফ্ফার ভাইয়ের ‘নতুন দিন’ পত্রিকায় টাকা খাটাতে অসুবিধা হয়নি। এ পত্রিকায় আরও যাঁরা টাকা খাটিয়ে অংশীদার হয়েছিলেন তার মধ্যে ছিলেন তারা মিঞা, ফারুক হায়দার, মুহিব চৌধুরী, খুররম মতিন, আবদুল মতিন, নুরুল আলম। পত্রিকাটির পূর্ব লন্ডনভিত্তিক অফিসে প্রতিদিনই স্বৈরাচারবিরোধী বহুজনের মিলনমেলা ঘটত, যার মধ্যে ছিলেন জেনারেল শওকত, শফিক রেহমান, তালেয়া রেহমান, সৈয়দ আশরাফ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর জ্যৈষ্ঠ পুত্র ড. সেলিম, ঊর্মি মাজহার, ঊর্মি রহমান, হাবিবুর রহমান, নিখিলেশ চক্রবর্তী, সৈয়দ শামসুল হক, কবি শহীদ কাদরী, সিরাজুর রহমান, বঙ্গবন্ধু গবেষক আবদুল মতিন, মুকুল ভাই, বিশিষ্ট সমাজসেবী ড. বি বি রায়, শ্রমিক দল রাজনীতিক জানে আলম, পলা উদ্দিন (বর্তমানে ব্যারোনেস), সুলতান শরিফ, নিশাত দস্তগীর, আমিনুল হক বাদশা, ডা. জাহেদুল হাসান, গায়ক হিমাংশু গোস্বামী, রহমান জিলানী, সানু মিয়া, নুরু মিয়া, মান্না হক এবং আরও অনেকে। বলতে গেলে এটি পরিণত হয়েছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অফিসে। আশির দশকের শেষ দিকে এরশাদ হাইকমিশনার জেনারেল মীর শওকতকে দেশে তলব করলে তিনি মনে করেন দেশে গেলে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে তাই লন্ডনে স্থায়ী বসবাসের জন্য গাফ্ফার ভাইয়ের দ্বারস্থ হন। আমি তখন যুক্তরাজ্য ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইজরি সার্ভিসের আইনবিষয়ক উপপরিচালক। ইমিগ্রেশন-সংক্রান্ত বিষয়ে ছিলাম প্রচুর ক্ষমতার অধিকারী। গাফ্ফার ভাই জেনারেল শওকতকে আমার দফতরে নিয়ে আসেন। জেনারেল শওকতকে নিশ্চয়তা দেওয়ার পর তাঁকে নিয়ে গেলাম পাশের কামরায় সে সময় সংস্থার পরিচালক মাইকেল বার্নসের দফতরে। বঙ্গবন্ধুর বিশিষ্ট বন্ধু এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা একাত্তরে ব্রিটিশ সংসদ সদস্য মাইকেল বার্নস যখন জেনারেল শওকতকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে অভিনন্দন জানালেন, জেনারেল শওকত তখন অকপটে বলে ফেললেন ‘আমি এবং জিয়া মুক্তিযুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম কেননা নয় তো বাঙালি সেনারা আমাকে এবং জিয়াকে হত্যা করত। জিয়া মন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল না, তার আনুগত্য ছিল পাকিস্তানের প্রতি।’
সে সময় লন্ডনে জাতিসংঘের একটি শাখার প্রধান ছিলেন ড. শফিউল্লা। তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ রবীন্দ্রপ্রেমী। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই তাঁর গোল্ডার্স গ্রিন এলাকার বাড়িতে রবীন্দ্রসংগীতের জলসা হতো। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর প্রয়াণ ঘটলে লন্ডনের ইমামরা তাঁকে নাস্তিক বলে ঘোষণা করে তাঁর জানাজা পড়াতে নারাজ হলে গাফ্ফার ভাই তাঁর জানাজা পড়িয়েছিলেন।
আশির দশকে লন্ডনে ভারতীয় বিদ্যাভবনের নিমন্ত্রণে কলকাতা থেকে গিয়েছিলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও রথীন্দ্রনাথ রায়। কার্ডিফের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এঁদের সবার সঙ্গে গাফ্ফার ভাই এবং আমাকেও আমন্ত্রণ করেছিলেন। আমাদের কার্ডিফ নিয়ে যাওয়ার জন্য যে কজন দায়িত্ব নিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিলেন ছুরুক মিঞা নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী। তাঁর গাড়িতে চড়েছিলাম আমি, গাফ্ফার ভাই ও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। যাত্রাপথে ছুরুক মিঞা বিভিন্ন গানের রেকর্ড বাজানোর পর হঠাৎ বলে ফেললেন, ‘এবার আমি মাওলানা সাঈদীর একটি ওয়াজ বাজাব’। আওয়ামী কর্মীর মুখে এহেন কথা শুনে আমরা সবাই হতভম্ভ, আমরা বুঝতে পারলাম লোকটি অজ্ঞতাবশতই এমন প্রস্তাব দিলেন। গাফ্ফার ভাই ছুরুক মিঞাকে সাঈদীর অতীত ইতিহাস জানালে ছুরুক মিঞা বললেন, ‘আমি তো এগুলো জানতাম না। আমি কৃতজ্ঞ, আপনি আমার ভুল ভাঙলেন।’ ছুরুক মিঞা সাঈদীর ওয়াজের সব ক্যাসেট গাড়ি থেকে ছুড়ে ফেলে দিলেন।
‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নাটকে গাফ্ফার ভাই বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য জিয়া-মোশতাকের পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরেছিলেন। খসড়াটি জানার পর প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চরেরা গাফ্ফার ভাইকে বললেন, তিনি নাটক থেকে জিয়ার অংশ বাদ দিলে খালেদা সরকার তাঁকে আর্থিকভাবে উপকৃত করবে। গাফ্ফার ভাই খালেদার চরদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এ কথাটি গাফ্ফার ভাই আমাকে এবং নাটকের মুখ্য চরিত্র পীযূষ বন্দ্যোপধ্যায়ের কাছে ব্যক্ত করেছিলেন। এমনি আরও অনেক অজানা কথা রয়েছে এই মহান ব্যক্তি সম্পর্কে, যা জানলে তাঁর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ আরও বেড়ে যাবে। তিনি যে নীতির প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন এ ধরনের আরও বহু ঘটনা তা-ই প্রমাণ করে।
লেখক : আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।