বুধবার, ১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিকল্পনাই জনকল্যাণ নিশ্চিত করে

মেজর অব. আখতার

দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিকল্পনাই জনকল্যাণ নিশ্চিত করে

মূল্যস্ফীতি এখন আমাদের জন্য একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এ অবস্থা এক দিনে তৈরি হয়নি। আমাদের অদূরদর্শী পরিকল্পনাই আজকের পরিণতি ডেকে এনেছে। দেশে উৎপাদিত ও আমদানিকৃত সব দ্রব্য ক্রমাগত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক দুষ্ট মাফিয়া বেনিয়া চক্রের কারসাজিতে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম নিয়ে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে, যা নিয়ন্ত্রণে আসতে কিছুটা সময় নেবে। এ টালমাটাল অবস্থার নির্মম শিকার খেটে খাওয়া মধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও বেকার মানুষ। বিশ্বের বর্তমান অস্থিতিশীল বাজারের জন্য মূলত একশ্রেণির লোভী ব্যবসায়ী দায়ী। ব্যবসায়ীদের মূল লক্ষ্যই মুনাফা। মুনাফা করা ছাড়া ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারে না। বাজারদর ওঠানামায় ব্যবসায়ীদের খুব একটা আসে-যায় না। বাজার কমলেও তারা মুনাফা করে। বাড়লে তো কথাই নেই। তখন তাদের পোয়াবারো। বিশ্বব্যাপী মহামারিতে ব্যবসায়ীদের লাভ হয়েছে। এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ব্যবসায়ীদের কোনো লোকসান নেই। তেলের দাম বাড়লেও তেল ব্যবসায়ীদের যেমন লাভ, তেলের দাম কমলেও তাদের লাভ। বিশ্ব অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয় ব্যবসায়ীদের কারণে। পৃথিবীর অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে ব্যবসায়ীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এজন্য দরকার শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যবস্থা যা বিশ্বকে একটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, আজ বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে বিশ্ব বেনিয়ারা। যাদের কোনো নীতি-নৈতিকতা নেই। বিশ্ব আজ কতগুলো করপোরেট হাউসের কাছে জিম্মি। এদের একমাত্র লক্ষ্য করপোরেট মুনাফা যেখানে জনকল্যাণের কোনো সুযোগ নেই।

বিশ্বে একসময় নীতি-নৈতিকতার মূল্য ছিল। শাসক জনগণের সামনে তার নীতি-নৈতিকতা নিয়ে আসত। শাসক জনগণকে ভয় করত। জনগণের কল্যাণ, উন্নতি ও উন্নত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য শাসক নীতিমান, সৎ ও উচ্চশিক্ষিত প্রশাসন তৈরি এবং জবাবদিহির মধ্যে সর্বদা সচেষ্ট থাকত। এখন তার উল্টোটা ঘটছে। এ অসৎ চক্রের সম্মিলিত লক্ষ্য জনগণকে শোষণ ও নিপীড়ন। তাই বিশ্বের বর্তমান শাসক ও প্রশাসন সম্মিলিতভাবে জনগণকে সর্বদা তাদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখে। তারা কখনো জনগণকে ক্ষমতাবান হতে দেয় না, দিতে চায়ও না। তারা শুধু তাদের নিরাপত্তা তথা নিরাপদে বেঁচে থাকা নামক এক অসম্ভব অলীক বাসনায় মত্ত। সেই সঙ্গে বিশ্বের বেনিয়াদের সরাসরি প্ররোচনায় এবং তাদের মুনাফা অর্জনের পথ সুগম রাখতে শাসক ও প্রশাসন চক্র তাবৎ বিশ্বকে অব্যাহতভাবে নিরাপত্তাহীন অস্থিতিশীল ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টির দিকে ধাবিত করছে। পৃথিবী এখন ক্রমান্বয়ে মানুষের অবাসযোগ্য গ্রহে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। গুটিকয় শাসকের নিরাপত্তার নামে লাখ লাখ মানুষকে আজ প্রতিনিয়ত হত্যা করা হচ্ছে। কখনো সন্ত্রাস, কখনো মহামারি, কখনো যুদ্ধের নামে মানুষ হত্যা অব্যাহত রয়েছে যার সবকিছুর পেছনে বিশ্ব বেনিয়াদের অর্থের লোভ এককভাবে কাজ করছে।

আমরা দেশবাসী এখন এক ধরনের অনিশ্চয়তার দিকে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। হয়তো শাসক ও প্রশাসন গোষ্ঠী তাদের কায়েমি স্বার্থ ও অবস্থানের কারণে আমাদের সঙ্গে একমত হবে না। একমত হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও নেই। যদি ভবিষ্যতে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি না হয় বা আমাদের কোনো অকল্যাণ না আসে তাতে আমাদের দুঃখ করার কোনো কারণও নেই। ভবিষ্যতে কোনো অকল্যাণ না হলে বা অনিশ্চয়তা দেখা না দিলে তা আমাদের জনই মঙ্গলময় হবে। এর সুবিধাভোগী আমরা তথা জনগণই হব। এতে আমাদের ভাবনার কিছু নেই।

আমরা সবকিছু ইতিবাচক হিসেবে নিতে চাই। ইতোমধ্যে মার্কিন প্রতি ডলারের মূল্য ১০০ টাকা হয়ে গেছে। একইভাবে অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার দামও বেড়ে গেছে। ডলার ও বৈদেশিক মুদ্রার দাম বেড়ে গেলে মূল্য ও মুদ্রাস্ফীতি একসঙ্গে ঘটে। ডলার ও বৈদেশিক মুদ্রার দাম বাড়লে আমদানি ব্যয় বাড়ে। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায় যা আমাদের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আমাদের ভোগ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতি, জ্বালানি তেল, লোহা, ইস্পাত, তুলা- প্রায় সবকিছুর বাজার মূলত আমদানিনির্ভর। যার কারণে আমদানি মূল্যের সুতার টানে স্থানীয় বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে ডলার ও বৈদেশিক মুদ্রার দাম বেড়ে গেলে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বেড়ে সরাসরি মুদ্রাস্ফীতি ঘটায়। মুদ্রাস্ফীতির কারণে পণ্যের চাহিদা বেড়ে আমদানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটায়। কদিন আগেও ১ ডলারের মূল্য ছিল ৮৪ টাকা, যা এখন ১০০ টাকার ওপরে। বাজারে নিত্যপণ্য হুহু করে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু সেভাবে মানুষের আয় বাড়ছে না। বৈদেশিক মুদ্রার সন্তোষজনক রিজার্ভ এবং জনগণের আর্থিক সামর্থ্য কিছুটা ভালো থাকায় সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের হাহাকার এখনো নগ্নভাবে প্রকাশ পায়নি। বেকার ও নিম্ন আয়ের মানুষের বেঁচে থাকা এখন অনেক বেশি কষ্টকর। যদিও আমাদের সমাজের নব্য উচ্চবিত্তদের গরিবদের সহায়তা করার মানসিকতা ও সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম হতদরিদ্রদের হাহাকার কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পেরেছে। তবে অর্থনীতিতে ব্যাপক কোনো পরিবর্তন আনতে না পারলে বর্তমান অবস্থা বেশিদিন না থাকার সম্ভাবনাই প্রবল।

আমাদের অর্থনীতি মূলত তিনটি অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের আয়ের উৎস হলো রপ্তানি ও রেমিট্যান্স। আমাদের ভোগ্য ও উৎপাদন বাজারও প্রায় সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। তার ওপর অর্থনীতি ব্যবস্থাপনাও খুবই দুর্বল। তিনটি অবস্থানে ব্যাপকভাবে কাজ করে যদি পরিমাণ ও গুণগত উন্নয়ন সম্ভব না হয় তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ বিপর্যয় ঠেকানো অনেক বেশি কঠিন বা দুষ্কর হয়ে যেতে পারে। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে গেল তাহলে আমরা কী করব? তখন অবশ্যই আমদানি কমাতে হবে, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি করতে হবে। এটাই যদি আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামর্থ্য বাড়ানোর উপায় হয় তাহলে অনাকাক্সিক্ষত বিপর্যয়ের জন্য অপেক্ষা না করে এখনই সে উপায় অর্জনের জন্য একযোগে নেমে পড়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমাদের রাজনৈতিক পথ ও মত আলাদা হতে পারে। কিন্তু দেশ ও জনগণ তো আমাদের সবার। দেশ যদি বিপর্যস্ত হয় তাহলে আমরা সবাই এর কষ্ট ভোগ করব, হয়তো একটি দুর্বৃত্ত শ্রেণি ছাড়া। তাই দেশ ও জনগণের স্বার্থে অর্থনীতিতে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি আনার লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সুপারিশ রাখছি-

১. ইতোমধ্যে আইএমএফ খাদ্য ও জ্বালানি তেলে ভর্তুকি বাড়াতে বলেছে। সমর্থনযোগ্য প্রস্তাব। আমি মনে করি সরকার এ ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা নেবে। ২. প্লাস্টিক, লোহা, ইস্পাত, সিমেন্ট ক্লিংকার, তুলা, কম্পিউটার, মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর শুল্কহার কমানো বা রেয়াত দেওয়া হোক। এর ফলে উৎপাদন বাড়বে, কর্মসংস্থান তৈরি হবে, বেকারত্ব কমবে, রপ্তানি বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে। স্থানীয় বাজারে এগুলোর মূল্য হ্রাস বা নিয়ন্ত্রণে আসবে। ৩. দক্ষ জনশক্তি বাড়ানোর জন্য কারিগরি ও হাতে-কলমে শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ জোর দিতে হবে। বিদ্যমান স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় সান্ধ্য ও নৈশ কারিগরি ও হাতে-কলমে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিরুৎসাহ করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অপেশাদারি শিক্ষাও নিরুৎসাহ করতে হবে। এর ফলে দ্রুত দক্ষ ও শিক্ষিত পেশাভিত্তিক জনশক্তি বৃদ্ধি পাবে। এই শিক্ষিত জনশক্তি বিদেশে পাঠিয়ে একদিক দিয়ে রেমিট্যান্স আয়ে বৈপ্লবিক অবদান আনা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে দেশ থেকে চলে যাওয়া রেমিট্যান্সের পথও নিয়ন্ত্রিত হবে। কারণ দক্ষ জনশক্তির অভাবে দেশে ভারতীয় ও চীনা শ্রমিকরা কাজ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা তাদের দেশে নিয়ে যায়। একটু প্রশিক্ষণ পেলেই আমাদের যুবকরা বৈদেশিক মুদ্রা দেশেই রেখে দিতে পারবে। ৪. আইটি শিক্ষাকে আরও গুরুত্ব দিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে সবাইকে আইটি শিক্ষায় শিক্ষিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এর ফলে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে যাদের মাধ্যমে দেশে থেকেই আয়ের পথ উন্মুক্ত হবে। আইটিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারলে শুধু আইটি সেক্টর থেকে মহিলারাই ঘরে থেকে আয় করে বর্তমান রেমিট্যান্স থেকে ১০ গুণ বেশি রেমিট্যান্স আনতে পারবে। ৫. বিশ্ববাজারের চাহিদা নিরূপণ করে আমাদের শ্রম ও শিল্প নীতি তৈরি করতে হবে, যাতে আমরা বিশ্বায়নের সুযোগ নিতে পারি। আমদানিনির্ভরতা কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষিতে জোর দিয়ে খাদ্যশস্য, চিনি, ভোজ্য তেলসহ সব খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষি উপকরণে শতভাগ ভর্তুকি দিতে হবে। ৬. করভিত্তিক উন্নয়ন থেকে সরে এসে টোলভিত্তিক উন্নয়নে জোর দিতে হবে যাতে সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। ‘ব্যবহার করলে মূল্য দিতে হবে’- এটাই হতে হবে উন্নয়ন ব্যয়ের মূলনীতি। ৭. সরকার প্রতিষ্ঠা ও পরিবর্তনে জনগণের ক্ষমতা দর্শনীয়ভাবে নিশ্চিত করতে হবে। ৮. সব নদীপথ ড্রেজিং ও নদীশাসন করে নদীপথের নাব্য বৃদ্ধি ও কৃষিজমি বাড়াতে হবে, নদীপথে কম খরচে পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, বড় বড় ব্রিজ, সমুদ্র ও বিমান বন্দর নির্মাণ আপাতত বন্ধ রাখতে হবে, নদীতে মাছ চাষ নিশ্চিত ও উৎসাহিত করতে হবে। আমাদের খাদ্যে মাছের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ৯. টাকার মূল্যমান ধরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে চরম কৃচ্ছ্রতার পথ বেছে নিতে হবে। সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার করতে হবে। সরকারের রাজস্ব ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দেশে উৎপাদিত সব পণ্যের বাজার উদার ও মুক্ত করে রাখতে হবে যাতে উৎপাদন ব্যাহত না হয়। মনে রাখতে হবে, কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেলে বেকারত্ব বেড়ে যাবে।

ঘরে আগুন লেগে গেলে তা হয়তো নিয়ন্ত্রণ বা নেভানো সম্ভব; কিন্তু ক্ষতি ঠেকানো যাবে না। আগুন নিয়ন্ত্রণ বা নেভানোর জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তার চেয়ে কম ব্যবস্থা যদি আগুন লাগার আগে বা লাগার মুহূর্তে নেওয়া হতো বা নেওয়া হয় তাহলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয় তা নিশ্চয় আমরা বলতে পারি।

ডলারের দাম ১০০ টাকার ওপরে চলে গেছে। প্রবল ক্ষমতাসীনরা ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এজন্য আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। তবে এ মুহূর্তে নিজের তাগিদে কিছু নিবেদন বিনয়ের সঙ্গে রাখছি যা আমি আগে ফেসবুকে কিছু কিছু দিয়েছিলাম-

১. অনতিবিলম্বে বৈধ পথের বাইরে ডলার ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন সিলগালা করে বন্ধ করতে হবে। ২. আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ৩. আমদানির জন্য যেসব এলসি বা ঋণপত্র ইতোমধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করা হোক। ৪. রিজার্ভে টান পড়ার আগেই জরুরি ভিত্তিতে আইএমএফ থেকে ডলার সংগ্রহ করা হোক। ৫. সব রপ্তানি আয় ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাংকের নির্ধারিত দরে লেনদেন করার নির্দেশনা জারি করা হোক। নির্ধারিত দরের বাইরে কেউ ১ পয়সা কমবেশি দিয়ে ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করতে পারবে না। করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে আইন করে দিতে হবে। ৬. উচ্চহারে তিন মাস মেয়াদি ডলার বন্ড ছাড়া হোক যা টাকায় পরিশোধ করা হবে। ফলে বাজারের ডলার সরকারের হাতে চলে আসবে। ৭. অবৈধ পথে পাঠানো সব ধরনের রেমিট্যান্স কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক। রেমিট্যান্সের একটি অংশ উচ্চসুদে বা মুনাফায় সঞ্চয়ী আমানত হিসেবে অন্তত এক বছরের জন্য ব্যাংকে জমা রাখা হোক যাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রিত হয়। ৮. হুন্ডি ব্যবসা কঠোরভাবে বন্ধ করে দেওয়া হোক। ৯. সীমান্তের চোরাকারবারি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক। ১০. অনতিবিলম্বে ডলারসহ সব বিদেশি মুদ্রার কার্ব মার্কেট সিলগালা মেরে বন্ধ করে দেওয়া হোক। ১১. ব্যাংকের বাইরে ডলার ও বিদেশি মুদ্রা লেনদেন বা বেচাকেনা অবৈধ ঘোষণা করে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হোক। ১২. ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টের পেমেন্ট বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করা আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হোক। ১৩. পোশাক রপ্তানির আয়সহ সব রপ্তানি আয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দরে পরিশোধ করা হোক। আর যদি খোলাবাজারে তারা বিদেশি মুদ্রা বিক্রি করে তাহলে অতিরিক্ত অর্থ শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বিতরণ করা হোক। ১৪. সরকারি কর্মচারীদের মতো অন্যদেরও আপাতত বিদেশে যাওয়া বা ভ্রমণ বন্ধ করে দেওয়া হোক। শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হোক। শিক্ষা ও চিকিৎসায় আমাদের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে যার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আপাতত সবার জন্য বিদেশ যাওয়াও বন্ধ রাখা হোক। বিদেশ যেতে না পারলে দুর্নীতি অনেক কমে যাবে এবং টাকা পাচারও নিয়ন্ত্রিত হবে। ১৫. আন্তব্যাংকের ডলার ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হোক। ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার জন্য ব্যাংক আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। বৈদেশিক মুদ্রা বা মুদ্রার ব্যবসা করা তাদের জন্য মানানসই নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দরের বেশি বা কম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যাংকই লেনদেন করতে পারে না। এ ব্যাপারে কঠোর নীতি ও অবস্থান বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া উচিত।

সমস্যায় নিমজ্জিত হয়ে সমাধানের পথ খোঁজার চেয়ে সমস্যা পরিহার করার আগাম ব্যবস্থা নেওয়া অনেক বেশি কার্যকর। বিরোধের রাজনীতি থেকে বের হতে পারলে দেশের ও দশের মঙ্গল হবে। স্তাবকরা সবকিছুতেই বেশি বেশি বলবে কিন্তু গণেশ উল্টে গেলে তখন সবাই চেহারা পাল্টাবে। পরিবর্তনের চেয়ে সমন্বয় ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক এখন অনেক বেশি কাম্য যা ভোগান্তি হ্রাস করতে সহায়ক হবে। ‘আজ’ চলে যাচ্ছে কিন্তু চলে যাওয়া ‘আজ’কে নিয়ে ভাবার চেয়ে সুন্দর ও সুখের আগামী দিন নিয়ে আমাদের সবার ভাবনা হোক। জনগণ পরিবর্তনের প্রত্যাশায় এবং তাদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে আকুল।

                লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

সর্বশেষ খবর