শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

অস্থিতিশীল শ্রীলঙ্কা

সর্বদলীয় সরকারের বিকল্প নেই

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে প্রচ- গণবিক্ষোভ ও নৈরাজ্যের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। যথারীতি ক্ষমতা থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। দুই মাস আগে গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যান বেপরোয়া গণক্ষোভের মুখে। গোতাবায়ার পতনে রাজাপক্ষে পরিবারের প্রায় দুই দশকের শাসনামলের অবসান হলো। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট ও দুর্ভিক্ষাবস্থার জন্য রাজাপক্ষে পরিবারের ক্ষমতার অপচর্চাকে দায়ী করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রাজাপক্ষে পরিবারের প্রাণপুরুষ প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের শাসনামলে শ্রীলঙ্কায় তামিল বিদ্রোহের অবসান হয়। বিদ্রোহীরা এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল যে, দেশের তামিল অধ্যুষিত এক-তৃতীয়াংশ এলাকা বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়। মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও তাঁর ভাই সামরিক বাহিনীর তৎকালীন কর্নেল গোতাবায়া নিষ্ঠুরভাবে কয়েক দশকের সেই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটান। গোতাবায়া রাজাপক্ষে অস্ত্রহাতে বিদ্রোহ দমনে নেতৃত্ব দেওয়ায় সিংহলিদের কাছে জাতীয় বীরে পরিণত হন। শ্রীলঙ্কার উন্নয়নে একের পর এক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয় মাহিন্দা ও গোতাবায়া রাজাপক্ষের আমলে। পর্যটননির্ভর অনিন্দ্যসুন্দর এ দ্বীপদেশকে পর্যটনের স্বর্গভূমি বানানোর লক্ষ্যে এসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু দুই বছরের করোনা মহামারিতে পর্যটন আয় প্রায় শূন্য হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়ে দেশটি। রাজাপক্ষে ভ্রাতৃদ্বয়ের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেও সংকট ঘনীভূত হয়ে ওঠে। সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শূন্য হয়ে পড়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় দেউলিয়া অবস্থার শিকার হয় দেশ। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার দেশ ছেড়ে পলায়নে জনদাবি পূরণ হলেও শ্রীলঙ্কায় যে সীমাহীন নৈরাজ্য চলছে তাতে মানুষের দুর্ভোগই শুধু বাড়বে। দক্ষিণ এশিয়ার একসময়ের সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশটির এ বিপর্যয় শুধু সোয়া ২ কোটি বাসিন্দার নয়, এ অঞ্চলের সবার। শ্রীলঙ্কার বিপদাপন্ন মানুষের স্বার্থেই সে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সর্বদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় নিতে হবে উদ্যোগ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর