শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

কবরের জীবন...

মো. আমিনুল ইসলাম

কবরের জীবন...

দুনিয়ার জীবনে মৃত্যু থেকে পলায়নের কোনো সুযোগ নেই। মৃত্যু অনিবার্য। আমরা ৭০, ৮০, ৯০ কিংবা ১০০ বছরের আয়ু নিয়ে দুনিয়ায় বসবাস করি। অনেকে এর চেয়েও কম আয়ু পায়। আমরা কিন্তু মৃত্যুর কথা ভুলে যাই। মৃত্যুর স্মরণকে হেলাফেলা করি। ধনসম্পদের লোভে আমরা পৃথিবীর জীবনে ব্যাপৃত থাকি। কিন্তু মৃত্যুর কথা স্মরণ করি না। মৃত্যু পাকড়াও করার পর শুরু কবরের জিন্দেগি। সেখানে আমরা কীভাবে থাকব? কী হবে আমাদের পরিণতি কজন আমরা তা নিয়ে ভাবী? অথচ কবরের জীবন পরবর্তী জীবনের প্রথম সোপান। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উবায়দা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃত ব্যক্তিকে যখন কবর দেওয়া হয় তখন সে কবরে বসে এবং সেসব লোকের পায়ের আওয়াজ শুনতে পায়, যারা তাকে কবরস্থ করে ফিরে যাচ্ছে। তখন মুর্দাকে কবর বলে, হে আদমসন্তান! তোর ধ্বংস হোক। তুই দুনিয়ায় আমাকে ভয় করতি না, যার কারণে তুই এ ভয়ংকর আজাব থেকে বাঁচার কোনো প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পারিসনি। আমার ভিতরের স্থান সংকীর্ণ, এখানে সাপ বিচ্ছু আর পোকামাকড়ে পরিপূর্ণ।’ (ইবনে আবি দুনিয়া) কবরবাসীকে কবরে রাখার পর দুজন ফেরেশতা এসে তাকে বসাবে এবং প্রশ্ন করবে, তোমার রব কে? নেক বান্দা হলে সে বলবে, আল্লাহ আমার রব। দ্বিতীয় প্রশ্ন করা হবে তোমার দীন কী? সে বলবে ইসলাম। তারপর একটি অবয়ব দেখিয়ে জানতে চাওয়া হবে ইনি কে? সে বলবে ইনি আল্লাহর রসুল। এরপর গায়েব থেকে আওয়াজ আসবে- আমার বান্দা সত্য বলেছে তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও এবং জান্নাতের বিছানায় শায়িত কর। এবং তখন সেই নেককার ব্যক্তি কবরে জান্নাতের সুঘ্রাণ ও সুখ পাবে। আর ইমানহীন কাফের ব্যক্তি এ তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারার কারণে তার ওপর জাহান্নামের শাস্তি বলবৎ হবে। তার কবর সংকুচিত করে দেওয়া হবে এবং শরীরের হাড় চাপে এক দিক থেকে অন্য দিকে চলে যাবে। এক অন্ধ ও বধির ফেরেশতা তাকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে থাকবে। তার চিৎকার মানুষ ও জিন ছাড়া সবাই শুনতে পাবে।

হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, সওয়াল-জওয়াব শেষে জান্নাতি ব্যক্তিরা বলবে আমাকে নামাজ পড়তে দাও। তারা তসবিহ তাহলিল ও নামাজে সময় কাটাতে চাইবে। কিন্তু তাদের বলা হবে তোমরা ঘুমাও। আর জাহান্নামিদের অবস্থা হবে ভয়াবহ। তারা কবরে নানা ধরনের আজাব ভোগ করতে থাকবে। হজরত ওসমান (রা.) যখনই কোনো কবরের সামনে দাঁড়াতেন তখনই এত বেশি কাঁদতেন যে কান্নায় তাঁর দাড়ি ভিজে যেত। তিনি জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনায় এত বেশি কাঁদতেন না যত বেশি কাঁদতেন কবর দেখে। তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন নিঃসন্দেহে কবর হচ্ছে পরকালের মনজিলগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রথম মনজিল। যে এ ধাপ অতিক্রম করতে পারবে পরবর্তী মনজিলগুলো অতিক্রম তার জন্য সহজ হয়ে যাবে। (তিরমিজি,  ইবনে মাজাহ) রসুল (সা.) আরও বলেছেন, কবরে কাফের ও বেইমানদের জন্য অবশ্যই বিষধর সাপ নিয়োজিত থাকবে এবং এ সাপ কিয়ামত পর্যন্ত তাদের দংশন করবে। রসুল (সা.) বলেছেন, যখন কোনো মোমিন ব্যক্তিকে দাফন করা হয় তখন কবর তার সঙ্গে সদাচরণ করে। কবর তাকে স্বাগত জানায়। কবর বলে জমিনে তুমি কখনই দম্ভ ভরে চলাফেরা করনি। তাই আজ তোমার সঙ্গে আমি সদ্ব্যবহার করব। তখন মৃত ব্যক্তির দৃষ্টিসীমা প্রসারিত হয় এবং জান্নাতের একটি দরজা তার দিকে খুলে দেওয়া হয়।  আর কোনো কাফের বা পাপাচারী ব্যক্তি যদি কবরস্থ হয় তখন কবর তার সঙ্গে এত বিরূপ আচরণ করে এবং তাকে দুই পাশ থেকে চাপ দেয় যাতে তার শরীরের ডান পাঁজরের হাড় বাঁ দিকে এবং বাঁ পাঁজরের হাড় ডান দিকে প্রবেশ করে। (তিরমিজি, মিশকাত)

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর