শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

মাধবপাশার জমিদারি

মাধবপাশার জমিদারি

বরিশালের এক সুপ্রাচীন জমিদার পরিবার মাধবপাশা জমিদার পরিবার। ১৪ শতকের শুরুতে সোনারগাঁয়ের দনুজমর্দন দেব মুসলিম বিজয়ীদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে বরিশাল অঞ্চলে  গিয়ে ‘চন্দ্র্র্রদ্বীপ’ নামে একটি ক্ষুদ্র হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এই দনুজমর্দন দেব বা দনুজ রায়ই মাধবপাশা জমিদারদের পূর্বপুরুষ। এ বংশের হরিবল্লভের সময় (১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দ) পর্যন্ত চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য স্বাধীন ছিল। এরপর চন্দ্রদ্বীপ মুসলিম সুলতান ও আফগান শাসকদের আশ্রিত বা করদ রাজ্য হিসেবে শেষ আফগান শাসক দাউদ খান কররানির (১৫৭৩-১৫৭৬) মৃত্যু পর্যন্ত বহাল ছিল। হরিবল্লভের ছেলে জয়দেবের কোনো ছেলেসন্তান না থাকায় মেয়ে কমলাদেবী রাজ্য শাসন করেন। রাজকুমারী কমলাদেবীর বিয়ে হয় পণ্ডিত বলভদ্র বসুর সঙ্গে। বলভদ্র বসু দেখতে কালো ছিলেন বলে তাঁর নামে ‘কালা রাজার বিল’ ও কমলাদেবীর নামে ‘কমলা রানির দিঘি’ এখনো বিদ্যমান। রানি কমলা ও বলভদ্র বসুর ছেলে পরমানন্দ বসু থেকে চন্দ্রদ্বীপে ‘দেব’ বংশের স্থলে ‘বসু’ বংশের শাসনের সূত্রপাত ঘটে। রাজা পরমানন্দ বসুর আমলে ১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজদের সঙ্গে চন্দ্রদ্বীপ রাজার একটি বাণিজ্যিক ও সামরিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। পরমানন্দ বসুর ছেলে জগানন্দ বসুর মৃত্যুর পর কন্দর্পনারায়ণ চন্দ্রদ্বীপের রাজা হন। কন্দর্পনারায়ণ ছিলেন বাংলার ভুঁইয়াদের অন্যতম। মুঘল আমলে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে টোডরমলের রাজস্ব তালিকায় চন্দ্রদ্বীপ জমিদারি ‘বাকলা’ সরকারের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং তিনটি পরগনায় বিভক্ত হয়।

আইন-ই-আকবরিতে উল্লেখ আছে, রাজা কন্দর্পনারায়ণের আমলে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাকলায় মারাত্মক সাইক্লোন হয়। কন্দর্পনারায়ণ উপর্যুপরি মগ আক্রমণ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য ‘কচুয়া’ থেকে রাজধানী বরিশাল শহরের অনতিদূরে মাধবপাশায় স্থানান্তরিত করেন। মুঘলরা ঢাকায় রাজধানী প্রতিষ্ঠার পর কন্দর্পনারায়ণের ছেলে রামচন্দ্রের রাজত্বকালে রাজধানী মাধবপাশা আক্রমণ করে। রাজা রামচন্দ্র ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে মুঘল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। মির্জা নাথানের মতে রামচন্দ্রকে তাঁর জমিদারির একটি অংশ জায়গির দেওয়া হয়। এ সময় থেকে মাধবপাশার রাজপরিবার একটি সাধারণ জমিদারে পরিণত হয়। ১৯৫০ সালের জমিদারি বিলুপ্তি আইনের আওতায় মাধবপাশা জমিদারির অবসান ঘটে এবং এর উত্তরাধিকারীরা নিয়ম মোতাবেক ক্ষতিপূরণ লাভ করেন। মাধবপাশা জমিদারির নিদর্শন হিসেবে রামসাগর দিঘি ও বরিশাল-মাধবপাশা রাস্তা এখনো টিকে আছে। মাধবপাশা জমিদারবাড়ি ও কাছের রামসাগর দিঘি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত। রাজবাড়ি থেকে ‘রাজা কন্দর্পনারায়ণ’ নামাঙ্কিত একটি কামান আবিষ্কার হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর