শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নদ-নদীর দূষণ

কথামালা নয় প্রতিরোধ প্রয়োজন

এক সময় রাজধানী ঢাকায় নদ-নদীর সংখ্যা ছিল অন্তত ৮টি। এর চারটি ইতোমধ্যে অস্তিত্ব হারিয়েছে। যে চারটি টিকে আছে সেগুলোর অবস্থাও সুবিধার নয়। দখল দূষণে চার নদীর অবস্থা হাহাকার করার মতো। দেশের নদ-নদী রক্ষায় গঠন করা হয়েছিল জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। কিন্তু কথামালা দিয়ে ঢাকাবাসীকে আশ্বস্ত করা ছাড়া তারা এ যাবৎ দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো অবদানই রাখতে পারেনি। অনেকের মতে, কথামালার ‘অশ্বডিম্ব’ প্রসবই কমিশনের একমাত্র সাফল্য। গত মার্চে রাজধানীবাসীর বাহবা নিতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘আগামী মার্চের মধ্যে স্বচ্ছ টলমলে হয়ে উঠবে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকা ঘিরে থাকা চার নদীর পানি। নদীতে আর পড়বে না শিল্পের বিষাক্ত রঙিন বর্জ্য। দূষিত কালচে পানির উৎকট গন্ধে নাকে রুমাল চাপতে হবে না কারও। পাল তুলে চলা নৌকার পাশাপাশি টলমলে পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে চলবে নানা প্রজাতির মাছ।’ তবে মার্চ আসতে মাত্র তিন মাস বাকি থাকলেও নদীগুলোর দূষণ কমেনি একচুলও। উল্টো শীত আসতেই ঘন ও কালচে হয়ে উঠেছে নদীর পানি। বেড়েছে দুর্গন্ধ। বহুবার উদ্যোগের পরও স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে কারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত বিষাক্ত রঙিন পানি নদীতে পড়া বন্ধ হয়নি। নদীপাড়ের বাসিন্দাদের গৃহস্থালি ও মানববর্জ্য আগের মতোই পড়ছে নদীতে। বর্ষায় নদীগুলোর পানি কিছুটা পরিষ্কার থাকলেও শীত আসতেই হয়ে ওঠে ঘন, কালচে ও দুর্গন্ধযুক্ত। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগে পানি কমে যাওয়ায় দৃশ্যমান হয়েছে স্যুয়ারেজ লাইনগুলো। সেখান দিয়ে বিরামহীন নদীতে পড়ছে শিল্প ও পয়ঃবর্জ্য মিশ্রিত বিষাক্ত পানি। নদ-নদীর দূষণ ও দখল বন্ধে কথামালা যে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না সে মহাসত্যটি তুলে ধরেছে ঢাকার প্রাণ হিসেবে বিবেচিত চার জলাশয়ের হতশ্রী অবস্থা। সংকট উত্তরণে চার নদী রক্ষায় কমিশনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার এবং সামাজিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। নদ-নদীর দখল দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকায় তাদের সতর্ক দৃষ্টিও প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর