বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
ইতিহাস

সরোজিনী নাইডু

সরোজিনী নাইডু

সরোজিনী নাইডু ছিলেন খ্যাতনামা কবি ও রাজনীতিক। ১৮৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের হায়দরাবাদে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বিক্রমপুরের ব্রাহ্মণগাঁও। নাইডুর পিতা ড. অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন হায়দরাবাদের নিজামের শিক্ষা উপদেষ্টা। তাঁর মাতা বরোদা সুন্দরী দেবী ছিলেন কবি। সরোজিনী নাইডু ১৮৯১ সালে মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৮৯৫ সালে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান। সেখানে প্রথমে কিংস কলেজ এবং পরে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির গির্টন কলেজে অধ্যয়ন করেন (১৮৯৫-১৮৯৮)। ১৮৯৮ সালে ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর হায়দরাবাদের ড. মতিয়ালা গোবিন্দরাজলু নাইডুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।

সরোজিনী নাইডু ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯১৫ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন। তিনি সমগ্র ভারতে সভা-সমাবেশ করে নারী মুক্তি, শ্রমিক অধিকার রক্ষা ও জাতীয়তাবাদের সমর্থনে তাঁর বার্তা প্রচার করেন। তিনি ১৯১৬ সালে বিহারে নীল চাষিদের অধিকারের দাবিতে প্রচারাভিযানে অংশ নেন। ১৯১৭ সালে নারীর ভোটাধিকারের দাবিতে অ্যানি বেসান্তকে সভাপতি করে উইমেন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হলে নাইডু এই সংগঠনের সদস্য হন। ১৯১৯ সালে সরোজিনী নাইডু অল ইন্ডিয়া হোম রুল ডেপুটেশনের সদস্য হিসেবে ইংল্যান্ডে গমন করেন এবং ১৯২০ সালের জুলাই মাসে ভারতে ফিরে আসেন।

১৯২০ সালের ১ আগস্ট তিনি মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন। ১৯২৪ সালের জানুয়ারি মাসে পূর্ব আফ্রিকান ভারতীয় কংগ্রেসে যে দুজন কংগ্রেস দলীয় প্রতিনিধি অংশ নেন, সরোজিনী নাইডু ছিলেন তাঁর একজন। ১৯২৫ সালে তিনি কানপুরে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া ন্যাশনাল কংগ্রেসের বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯২৬ সালে অল ইন্ডিয়া উইমেন কনফারেন্স গঠিত হলে সরোজিনী এর সভাপতি নির্বাচিত হন এবং নারী শিক্ষা অধিকার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। সরোজিনী নাইডু ১৯২৮ সালের অক্টোবর মাসে গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের বার্তা নিয়ে আমেরিকা গমন করেন। সেখানে তিনি আফ্রিকান আমেরিকান এবং ভারতীয় আমেরিকানদের মধ্যকার বৈষম্যের প্রতিবাদ জানান। আমেরিকা থেকে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য ১৯৩০ সালের মে মাসে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৩১ সালের ৩১ জানুয়ারি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৩১ সালে কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি গান্ধীর সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন। ১৯৩২ সালে নাইডু লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য গ্রেফতার হন এবং অসুস্থতার কারণে পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর ভারত ছাড় আন্দোলনে জড়িত থাকার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করে ২১ মাস কারান্তরিন রাখা হয়। ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে এশিয়ান রিলেশন্স কনফারেন্সে স্টিয়ারিং কমিটিতে তিনি সভাপতিত্ব করেন। সরোজিনী তাঁর বাগ্মিতার জন্য খ্যাতিমান ছিলেন।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর সরোজিনী নাইডু ভারতের উত্তর প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

তাঁর রচিত কবিতা সংগ্রহ The Golden Threshold ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি সাধারণ্যে ‘বুলবুলে হিন্দ’ খেতাবে বিভূষিত হন। ১৯০৮ সালে হায়দরাবাদে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে কায়সার-ই-হিন্দ স্বর্ণপদক প্রদান করে। ১৯৪৯ সালের ২ মার্চ এলাহাবাদে তাঁর মৃত্যু হয়। 

মোহাম্মদ সোহেল

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর