মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ

নভোমন্ডল এবং ভূমন্ডলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহতায়ালা। সবকিছু তাঁরই সৃষ্টি। তিনি এই সুন্দর মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মহাকাশ, পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা, সাগর, নদী-নালা, গাছ-বৃক্ষ, তরুলতা, ফল, ফুল, শাকসবজি, পশু-পাখি, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি। কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি, খোদা তোমার মেহেরবানি। শস্য-শ্যামল ফসল ভরা মাটির ডালিখানি, খোদা তোমার মেহেরবানি।’ প্রতিটি বস্তুকে তিনি যথাযথ উপযোগিতা অনুসারে ও পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছেন। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি। আমার কাজ তো এক মুহূর্তে চক্ষুর পলকের মতো।’ (সুরা আল ক্বামার- ৪৯-৫০)

আল্লাহতায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন সুন্দরতম আকৃতিতে। আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে।’ (সুরা আত ত্বীন-৪)

মানব সৃষ্টির ইতিহাস, তাৎপর্য, প্রক্রিয়া ও উদ্দেশ্য আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে সবিস্তারে আলোচনা করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন, আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী।’ (সুরা আন নিসা-১)

মানব সৃষ্টির বিভিন্ন প্রক্রিয়ার বিবরণে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তো মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে স্থাপন করি এক সংরক্ষিত আঁধারে। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে পরিণত করি, অতঃপর জমাট রক্ত থেকে মাংসপিন্ডে পরিণত করি, এরপর ওই মাংসপি-কে পরিণত করি অস্থি পাঁজরে, অতঃপর অস্থি পাঁজরকে মাংস দ্বারা আবৃত করি, অবশেষে তাকে অন্য এক সৃষ্টিরূপে দাঁড় করিয়েছি। অতএব, সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান।’ (সুরা আল মুমিনুন-১২-১৪)

অপর আয়াতে মহান প্রভু আরও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, ‘সুতরাং মানুষকে দেখা উচিত তাকে কী দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে দ্রুতবেগে স্খলিত পানি থেকে। এটা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বক্ষ পাঁজরের মধ্য থেকে।’ (সুরা আত তারিক-৫-৭)

আল্লাহ মানব, দানব, ফেরেশতা এবং সৃষ্টিকুলের মহান স্রষ্টা। তাঁর কোনো সমকক্ষ নেই। তিনি সমস্ত সৃষ্টিকে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টাকে খুঁজতে মহাগ্রন্থ আল কোরআনে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, হে রসুল! ‘বলুন, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ, কীভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করছেন। অতঃপর আল্লাহ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।’ (সুরা আল আনকাবুত-২০)

স্রষ্টাকে নিয়ে ভাবা ও চিন্তা করার অন্যতম মাধ্যম তাঁর সৃষ্টি। এই ভাবনার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার প্রতি মানুষের ইমান শানিত হবে। তাঁর প্রতি আনুগত্যের অনুপ্রেরণা উদয় হবে। বুঝতে পারবে প্রকৃতি বা বিবর্তনের মাধ্যমে কিছুই হতে পারে না। বরং সবকিছুই চলে মহান সৃষ্টিকর্তার নিয়ন্ত্রণে। পাখ-পাখালি উড়ছে, বৃক্ষলতা উদগত হচ্ছে, শাখা-প্রশাখা প্রসারিত হচ্ছে তা আপন গতিতে হতে পারে না। এই যে বিশাল জগৎ, খুঁটিবিহীন সুবিশাল মুক্ত গগন এমনিতেই সৃষ্টি হবে এবং স্বয়ংক্রিয় চলবে তা কল্পনা করাও কোনো বুদ্ধিমানের পরিচয় বহন করে না। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘ নিশ্চয়ই আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং দিবস ও রজনীর আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য।’ (সুরা আলে ইমরান-১৯০)।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর