শনিবার, ৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

আত্মীয়তার সম্পর্কের গুরুত্ব ও ফজিলত

মো. আমিনুল ইসলাম

আত্মীয়তার সম্পর্কের গুরুত্ব ও ফজিলত

আমাদের জীবনে পারিবারিক সূত্রে সম্পর্কের নামই আত্মীয়তার সম্পর্ক। আমাদের সামাজিক জীবনে রক্তের সম্পর্ক আর বৈবাহিক সূত্রে তৈরি হয় আত্মীয়তার সম্পর্ক। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছাড়া আমাদের জীবন হয় একাকিত্বে ভরা আর বিচ্ছিন্ন ও আনন্দহীন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর এবং আত্মীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর’ (সুরা নিসা-০১)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক কর না এবং সদয় হও বাবা-মার সঙ্গে, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে, এতিমের সঙ্গে, মিশকিনের সঙ্গে, প্রতিবেশীর সঙ্গে আর অনাত্মীয় অসহায় মুসাফির, নিজের সঙ্গী-সহচর এবং পথচারীর সঙ্গে সর্বদা ভালো ব্যবহার করবে। অবশ্যই আল্লাহতায়ালা এমন মানুষকে কখনো পছন্দ করেন না, যে অহংকারী ও দাম্ভিক’ (সুরা নিসা-৩৬)। এই আয়াতে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেন, ‘যে আল্লাহ ও পরকালের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে’ (বুখারি, আবু দাউদ,  তিরমিজি)। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চায়, আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার রিজিক বৃদ্ধি করে দিক এবং তার হায়াত বৃদ্ধি করে দিক, তাহলে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চলে।’ অথচ দুঃখের বিষয় হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক নিয়ে আমরা খুবই উদাসীন এবং দরিদ্র আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে আমরা আরও বেশি উদাসীন। আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করাকে আমরা কোনো ব্যাপারই মনে করি না। অথচ আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করা মারাত্মক গুনাহ। যারা এই সম্পর্ক নষ্ট করে আল্লাহ নিজে তাদের অভিশাপ দেন। দুনিয়ায় তাদের ওপর নেমে আসে কষ্ট, দুর্ভোগ ও যন্ত্রণা। আল্লাহ বলেন, ‘ক্ষমতায় বসলে তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং যাবতীয় আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবে’ (সুরা মোহাম্মদ-২২)।

আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা আত্মীয়স্বজনকে তাদের পাওনা আদায় করে দেবে এবং অভাবগ্রস্ত এবং মুসাফিরকেও’ (সুরা বনি ইসরাইল-২৬)। এই আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে আত্মীয়স্বজনকে মুসাফির ও অভাবীকে দান খয়রাত নয়, তাদের অধিকারকে সম্মান দেখাতে বলা হয়েছে। এ অধিকার দিতে গিয়ে যেন তাকে অনুকম্পা করা না হয়। মনে রাখতে হবে, সম্পদের মালিক আল্লাহতায়ালা। আর সম্পদ দিয়ে তিনি সম্পদশালীকে পরীক্ষা করেন।

আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করার ব্যাপারে হাদিসে কঠোরতার কথা বলা হয়েছে। হজরত জুবাইর ইবনে মুতইম (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসুল (সা.) বলেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বুখারি ও মুসলিম)। হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার নিকটাত্মীয় দুর্বল, দরিদ্র সে যদি তাদের প্রতি সহানুভূতি না দেখিয়ে নিজের দান-সদকা দূরের অন্য কাউকে দেয় আল্লাহ তার দান কখনোই কবুল করবেন না এবং হাশরের দিন তার দিকে দৃষ্টিপাতও করবেন না। আমাদের জেনে রাখা দরকার, হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ও মদপানকারী কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না (মুসলিম শরিফ)। সুতরাং যে লোক নিজের অসহায় দরিদ্র আত্মীয়র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের পরিত্যাগ করে অহংকার প্রকাশ করে এবং ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখে না, তারা জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি পাবে না। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, প্রকৃত আত্মীয়তা রক্ষা হচ্ছে সম্পর্ক ছিন্ন করা হলেও যে তা বজায় রাখে। আত্মীয় দুর্ব্যবহার করলেও যে তাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে এবং তাদের খোঁজখবর নেয় এবং দরিদ্র হলে আর্থিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে। রসুল (সা.) বলেন, ‘প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী নয়। বরং আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী সে ব্যক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরও তা বজায় রাখে।’

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর