আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। যৌথ বাহিনী গঠন করে অভিযান চালানো হচ্ছে। তার মধ্যেই অনেক এলাকায় খুনখারাবি, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ঘটছে। অহরহ গণপিটুনির ঘটনা, বিশৃঙ্খল জনতার হামলায় পরিস্থিতির উদ্বেগজনক অবনতি ঘটছে। কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। একের পর এক মব সৃষ্টির ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, রাহাজানিতে ভীতসন্ত্রস্ত সাধারণ মানুষ। খোদ পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে দিনে গড়ে ১০টি খুন হচ্ছে। কী ভয়ংকর ভীতিকর অবস্থা। কোনো সভ্য সমাজে এটা ভাবা যায়! অথচ এটাই আমাদের চরমতর দুর্ভাগ্যের বাস্তবতা। সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায় থেকে বারবার আশ্বাসের পরও পরিস্থিতির উন্নতি নেই। প্রশ্ন উঠছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বাহিনীগুলোর সদিচ্ছা, সক্রিয়তা ও সক্ষমতা নিয়ে। ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচার পতনের পর পুলিশ ভাবমূর্তি ও মনোবল হারিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। তখন থানা-পুলিশ পাহারা দিতে সেনা নিয়োগ দিতে হয়েছিল। পরে তাদের বিচারিক ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কাক্সিক্ষত সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছতে না পারলেও উন্নতির প্রচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। এখন এদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা দরকার। এজন্য প্রয়োজন নিবিড় তদারকি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জড়িত সব বিভাগ ও বাহিনীর সমন্বিতভাবে কাজ করা। মনে রাখা দরকার যে, স্বৈরাচার পতনের পর বিরাট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে, পানি ঘোলা করে ফায়দা লোটার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তা সমানতালে চলছে অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার কর্মপ্রচেষ্টার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। থিতু হয়ে কাজ করতে দিচ্ছে না সরকারকে। ১০ মাস ধরে চালু হওয়া দখলবাজির হাতবদল অজ্ঞাত কারণে সরকার শক্ত হাতে দমনে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। নির্মোহ কঠোরতায় সব হঠকারিতা গুঁড়িয়ে দিতে হবে। না হলে আবার অনাচার-অপরাধের মঞ্চে দাঁড়িয়ে নতুন স্বৈরাচার মাথা চাড়া দেবে। জুলাই-আগস্টের আত্মত্যাগ অর্থহীন হবে।
জনগণ থেকে যাবে সেই তিমিরেই।