খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের অভাবে প্রায় বছরখানেক ধরে নজিরবিহীন দুর্দিনের মধ্যে রয়েছেন দেশের বিনিয়োগকারীরা। ফলে ঋণখেলাপি হওয়াকে যারা ঘৃণার চোখে দেখতেন সেসব ব্যবসায়ীও পড়েছেন বিপাকে। কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, মব সন্ত্রাস, ভুয়া মামলার দুর্বিপাকে পড়ে বিপুলসংখ্যক শিল্পোদ্যোক্তা ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছেন নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতির কারণে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর মুনাফা না বাড়ায় প্রভিশন ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ২০২৪ সালের মার্চে যেখানে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা, এক বছর পর তা প্রায় সাড়ে ৬ গুণ বেড়ে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। আইএমএফের পরামর্শে ঋণখেলাপির সময়সীমা ১৮০ দিন থেকে কমিয়ে ৯০ দিনে নামিয়ে আনার পর খেলাপি ঋণ বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠন করে, ইচ্ছাকৃত নয় এমন বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন যাচাইবাছাই করা ছিল কমিটির দায়িত্ব। এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৫৩টি আবেদন জমা পড়লেও কোনো আবেদন চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। এ পর্যন্ত মাত্র ৫৬টি আবেদন প্রাথমিকভাবে বাছাই হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদন না আসায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা ঋণখেলাপির পরিচয় থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।
২০২৪ সালের মার্চে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে মন্দ ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপির ৮৪.৫৪ শতাংশ। ২০২৫ সালের মার্চে এসে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকায়। ব্যবসাবাণিজ্যের সুযোগ উন্মোচিত না হলে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকবে স্পুটনিক গতিতে। ব্যাংকগুলোর অবস্থাও দিনদিন নাজুক হয়ে পড়বে। ব্যবসাবাণিজ্য মার খেলে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। গরিবের সংখ্যাও বাড়বে পাল্লা দিয়ে। এ অবস্থায় থিওরি দিয়ে নয় অর্থনৈতিক খাতের সমস্যা সমাধানে চোখ-কান খোলা রেখে বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গ্রহণ করতে হবে ব্যবসাবান্ধব ব্যাংকিং নীতি।