মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

লিডার ও রিভেঞ্জে মুখর এফডিসি

আলাউদ্দীন মাজিদ

লিডার ও রিভেঞ্জে মুখর এফডিসি

লিডার ছবির একটি দৃশ্যে শাকিব-বুবলী

‘যে চলে যায় সে কি আর ফিরে আসে? তাকে কি ফেরানো সম্ভব?’ দেশীয় চলচ্চিত্রের সোনালি দিন হারিয়েছে অনেক আগে। চলচ্চিত্র জগৎজুড়ে শুধুই হাহাকার আর অব্যক্ত কান্না। এত বেদনার মাঝেও আশা জাগায় কোনো এক সোনালি বিকাল, কিছু স্বপ্নবাজ মানুষ। তাঁদের ওপর ভর করে শূন্যতার মাঝেও ডানা মেলে অজস্র স্বপ্ন। তখন চোখজুড়ে আসে শুধুই তারার মেলা। তেমনই একজন মানুষ নায়কোত্তম শাকিব খান। দেশীয় চলচ্চিত্রকে কমপক্ষে দুই দশক ধরে পরম মমতায় বুকে আগলে রেখেছেন এই চলচ্চিত্রপ্রাণ মানুষটি। স্বাভাবিক সময় তো নয়ই, উৎসবের দিনেও বড় পর্দায় এই শীর্ষ নায়কের ছবি না পেলে না পাওয়ার কান্নায় ভাসেন প্রদর্শক ও দর্শকরা। সবার ভালোবাসায় সিক্ত এই নিবেদিতপ্রাণ মানুষটি কখনো তাঁর প্রাণের দর্শক-ভক্তদের নিরাশ করেন না। এবারও তাই, করোনার এই ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে নিজের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে ছবির শুটিংয়ে টানা ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে চলেছেন তিনি। তাঁর কথায় নিজের জীবনের পরোয়া আমি করি না। দেশ, চলচ্চিত্র আর দেশের মানুষকে আমার শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত সেরা কাজটি দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাই এবং করে যাবে। তাঁর কথার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম গতকাল এফডিসিতে গিয়ে। অজস্র মানুষের ভিড়ে করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে শুধু দেশীয় চলচ্চিত্রকে আবার শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে অবলীলায় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তাঁকে ঘিরে অনেক দিন পর যেন মৃতপ্রায় এফডিসিতে প্রাণের জোয়ার জেগেছে। লিডার শাকিব খানকে নিয়ে সংস্থাটির আঙিনায় সাজ সাজ রব। প্রশাসনিক ভবনের সামনে ও আশপাশে পড়েছে সাধারণ মানুষের পোড় খাওয়া জীবনযাপনের সেট। শুটিং চলছে বেঙ্গল মিডিয়ার ছবি ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ ছবির। নির্দেশনা দিচ্ছেন টগবগে কর্মপাগল যুবক তপু খান। আগে বিজ্ঞাপন, নাটক নির্মাণে হাত পাকিয়ে এবার বড় পর্দায় মুনশিয়ানা দেখাতে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর দক্ষ নির্দেশনায় ক্যামেরার সামনে নিজেকে আরও শানিত করছেন নায়কোত্তম শাকিব খান। ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ ছবিতে নাাফিজ নামের এক তারুণ্যদীপ্ত যুবক প্রতিবাদের নায়ক হয়ে সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘবের মিশনে নেমেছেন তিনি। যিনি আপন জীবনের মায়া একপাশে সরিয়ে রেখে কণ্ঠে সোচ্চার আওয়াজ তুলে নিয়েছেন সব ধরনের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে। তিনি নির্ভীক, তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী প্রতিবাদের অনন্য নাম ‘লিডার’, যিনি পজিটিভ বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্নযুবক। শীর্ষনায়ক শাকিব বলেন, ‘চলচ্চিত্র মানেই জীবনের কথা বলা, দেশ, সমাজ আর মানুষের চলমান জীবনের ছবি ফুটিয়ে তোলা। এমন গল্প পেলে সেই ছবি দিয়ে বদলে দেওয়া যায় সমাজের ঘুণপোকা খাওয়া মানসিকতা। চলচ্চিত্র আবার ফিরে পাবে হারানো গৌরব, দর্শক হবে বিমোহিত, রাষ্ট্র হয়ে ওঠবে আরও সচেতন। এমন জীবনের গল্পে অবিরত কাজ করে যেতে চাই।’ নির্মাতা তপু খান ছবিটিকে জীবনের কাছাকাছি নিতে সর্বোচ্চ কাজ আর পরিশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। তপু খানের সঙ্গে কুশল বিনিময় হলেও গল্প করে সময় নষ্ট করার মানুষ নন তিনি। কাজকে প্রার্থনা করেই ক্যামেরার মনিটরে চোখ রেখে চলেছেন। ক্যামেরার সামনে নাফিজরূপী প্রতিবাদী যুবক শাকিবকে ঘিরে অসহায় মানুষ আর মিডিয়ার ভিড় জমেছে। কণ্ঠে তাঁর প্রতিবাদের আগুন ঝরছে। দূরে দাঁড়িয়ে দেখছি একদল কর্মপাগল মানুষের সুন্দর স্বপ্ন পূরণের কাজ। চিত্রায়ণের বিরতিতে ৬ নম্বর মেকআপ রুমে শীর্ষনায়ক শাকিব খানকে ঘিরে আছেন প্রখ্যাত নির্মাতা কাজী হায়াৎসহ অনেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। সবার কণ্ঠে শাকিবের অকুতোভয় নিরলস প্রচেষ্টার প্রশংসার ফুলঝুরি। আরেকটু এগিয়ে ৭ নম্বর মেকআপ রুমে ঢুকতেই দেখা মিলল এ সময়ের ক্রেজ নায়িকা শবনম বুবলীর। অফ হোয়াইট জামদানি শাড়িতে তাঁকে সত্যিই আকাশ থেকে নেমে আসা এক অপ্সরা মনে হচ্ছিল। তিনি কাজ করছেন তপুর ‘লিডার’ আর ইকবালের ‘রিভেঞ্জ’ ছবিতে। রিভেঞ্জ ছবিতে বুবলীর বিপরীতে আছেন রোশান। বেশ কিছুক্ষণ চলচ্চিত্রের সাতসতেরো নিয়ে অপ্সরা বুবলীর সঙ্গে আলাপচারিতায় সন্ধ্যা নামল বিকালের আকাশে। এফডিসির আঙিনা তখনো লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের আলো আর শব্দে মুখরিত। চলচ্চিত্রকে ঘিরে এ এক অন্যরকম ভালো লাগার শিহরণ।

সর্বশেষ খবর