মুক্তি পাচ্ছে নতুন ছবি। ধীরে ধীরে প্রেক্ষাগৃহে ফিরছে দর্শক, আর এতেই নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন সিনেমা হল মালিকরা। শুধু সিনেমা হল নয়, সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষও এখন পরিস্থিতির উন্নতি দেখে খুশি। বৈশ্বিক মহামারী করোনা আটকে দিয়েছিল নতুন ছবি মুক্তি। এখন দেশে করোনা মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হলে নির্মাতারা তাঁদের আটকে পড়া নতুন ছবি মুক্তি দিতে শুরু করেছেন। তাই ফের জেগে উঠছে চলচ্চিত্রপাড়া। শুরু হয়েছে শুটিং, নতুন চলচ্চিত্র মুক্তি আর নির্মাণ। এরই মধ্যে নতুন ছবি মুক্তি পেয়ে দর্শকগ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। গত মাসে মুক্তি পাওয়া ‘পদ্মাপুরাণ’ আর ‘চন্দ্রাবতী কথা’ সফল ছবির তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ডিপজল প্রযোজিত ও এফ আই মানিক পরিচালিত ও ডিপজল, সোহেল রানা, দিতি, রোমানা, জায়েদ খান প্রমুখ অভিনীত ‘এ দেশ তোমার আমার’ শিরোনামের বিগ বাজেট ও অ্যারেঞ্জমেন্টের ছবিটি প্রায় ৪০টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে ৫ নভেম্বর। প্রতিটি সিনেমা হলের সেল রিপোর্ট সন্তোষজনক বলে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি সূত্রে জানা গেছে। মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ বলেন, আমরা সিনেমা হল মালিকরা বরাবরই ধারাবাহিকভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে মানসম্মত ছবির দাবি জানিয়ে আসছি। নতুন ছবি না পেলে দর্শক কেন সিনেমা হলে আসবে? দর্শক না পেলে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। এখন কভিড লকডাউনের পর আবার নতুন ছবি মুক্তি পেতে শুরু করেছে। দর্শকও সিনেমা হলে ফিরতে শুরু করেছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে সিনেমা হল আবার দর্শক পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে। স্টার সিনেপ্লেক্সের বিপণন বিভাগের সিনিয়র ব্যবস্থাপক মেসবাহউদ্দীন আহমেদ প্রায় একই সুরে বলেন, কভিডের লকডাউন শেষে নতুন ছবি মুক্তি পাওয়ায় মোটামুটি এখন ভালো সাড়া পাচ্ছি। নতুন ছবি দেখতে দর্শক আসছে। এতে আবার আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। লকডাউনের বন্ধ শেষে সিনেপ্লেক্স খোলার পর বিশেষ করে ‘পদ্মাপুরাণ’ ও ‘চন্দ্রাবতী কথা’ ছবি দুটি দর্শকগ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এটি স্বস্তির খবর। এভাবে নতুন ছবি মুক্তির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দর্শক আবার ছবিঘরে ফিরতে শুরু করবে এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রেক্ষাগৃহ মালিক এবং দর্শক সবাই লাভবান হবে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, আমরা প্রদর্শকরা তো সবসময় দেশি ও দর্শক পছন্দের ছবি চেয়ে আসছি। ছবির অভাবে চরম লোকসান গুনে সিনেমা হল বন্ধ হতে হতে এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। লকডাউনের বন্ধের পর এখন যখন নির্মাতারা নতুন ছবি মুক্তি দিতে শুরু করেছে তখন সিনেমা হলে দর্শক আগমনে আবার ছবিঘর জমে উঠবে এই প্রত্যাশা আমাদের। তবে মানসম্মত ছবি একনাগাড়ে মুক্তি পেতে হবে, দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পের সুদিন ফেরাতে এর কোনো বিকল্প নেই। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, আমি চাই প্রতি সপ্তাহে নতুন ছবি মুক্তি পাক। ধারাবাহিকভাবে নতুন ছবি মুক্তি পেলে দর্শকের মনে এই আস্থা জন্মাবে যে, নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে তাই সিনেমা হলে যেতে হবে। কারণ মানহীন এবং অনিয়মিত ছবি মুক্তি পেতে থাকায় দর্শকের মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মে গেছে যে, নতুন ছবি যেহেতু নেই তাহলে সিনেমা হলে গিয়ে কি লাভ। বাংলাদেশের দর্শক দেশীয় ভালো ছবি নিয়মিত চাইবে এটিই স্বাভাবিক। আর তাঁদের চাহিদা পূরণের দায়িত্ব নির্মাতাদের। এদিকে, ১২ নভেম্বর প্রটোকল ও মেট্রো প্রযোজিত আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত আজমেরী বাঁধন, জাইমা, সাবেরি আলম প্রমুখ অভিনীত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’, ১২ নভেম্বর এম কে জামান পরিচালিত ও রাফাত রউফ ও রোজ অভিনীত ‘তোর মাঝে আমার প্রেম’, ১৯ নভেম্বর অনন্য মামুন পরিচালিত নিরব, প্রিয়মণি, নওশাবা, রাশেদ মামুন অপু প্রমুখ অভিনীত ‘কসাই’, ২৬ নভেম্বর মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত জয়, আঁচল, আমান, তানহা মৌমাছি অভিনীত ‘আয়না’ এবং ইলান জিরার্ড ও রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত প্রযোজিত এবং রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত পরিচালিত ফজলুর রহমান বাবু, শতাব্দী ওয়াদুদ, তিতাস জিয়া, তাসনূভা তামান্না, রোজী সিদ্দিকী প্রমুখ অভিনীত ‘নোনা জলের কাব্য’, ৩ ডিসেম্বর ক্রপ ক্রিয়েশন প্রযোজিত ফয়সাল আহমেদ পরিচালিত ও আরিফিন শুভ, ঐশী, তাসকিন, রাইসুল ইসলাম আসাদ, ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম, ইরেশ যাকের, শতাব্দী ওয়াদুদ ও মিশা সওদাগর প্রমুখ অভিনীত ‘মিশন এক্সট্রিম’, ২৪ ডিসেম্বর ইরান ও বাংলাদেশের আয়োজিত এবং মনসুন ফিল্মস ও ফারাবি সিনেমা ফাউন্ডেশন প্রযোজিত ইরানি পরিচালক মর্তুজা আতাশ জমজম পরিচালিত অনন্ত, বর্ষা, সজীব, নিক্সন প্রমুখ অভিনীত ‘দিন : দ্য ডে’ ও ৭ জানুয়ারি সিয়াম, পূজা অভিনীত ‘শান’ ছবিগুলো মুক্তির জন্য চূড়ান্ত।
গত বছরের মতো চলতি বছরের মার্চ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত করোনা লকডাউনের কারণে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও মুক্তি থেমে ছিল। গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে করোনা লকডাউন শুরু হলে সিনেমা হলও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুক্তি আটকা পড়ে যায় নতুন ছবি। চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও প্রদর্শকরা। বর্তমানে দেশ-বিদেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হলে প্রযোজকরা এবার তাঁদের বিগ বাজেট ও তারকাবহুল ছবি মুক্তি দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এখন আরও যেসব ছবি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো- দীপংকর দীপেনের ‘অপারেশন সুন্দরবন’, সোহানী হোসেন প্রযোজিত ও সুমন ওয়াজেদ পরিচালিত শাকিব খান ও দর্শনা অভিনীত ‘অন্তরাত্মা’, জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ‘জিন’, মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’ ও ‘আনন্দ অশ্রু’, দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’, ‘বিদ্রোহী’, ‘পরাণ’, ‘ক্যাসিনো’, ‘বর্ডার’, ‘বিউটি সার্কাস’, ‘কমান্ডো’, ‘সাইকো’,‘সাহসী যোদ্ধা’, ‘তালাশ’, লিডার প্রভৃতি।