অভিনেতা আফজাল হোসেন। দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা হলেও তাঁর নামের আগে নির্মাতা, চিত্রশিল্পী, লেখক, ফটোগ্রাফার পদবি যুক্ত করলেও ভুল হবে না। দেশের বিজ্ঞাপনী ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি এক অনন্য নাম। এ বছর অভিনয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ায় অনুভূতিটা কেমন?
যে কোনো কাজের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ার অনুভূতিটাই অন্যরকম। আমি খুবই আনন্দিত। সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছেন। সারা জীবন অভিনয় করে গেছি। এমন সম্মানে সম্মানীত হব- এমন চিন্তা কখনো মাথায় আসেনি। অভিনয়কে ভালোবেসেই সব করেছি। রাষ্ট্র সম্মান জানিয়েছে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দীর্ঘদিন কাজ করছি। আরও কাজ করে যেতে চাই।
অনেক আগেই তো পাওয়া উচিত ছিল স্বীকৃতিটা?
এসব নিয়ে আসলে আগে ভাবিনি। এত কিছু ভেবে তো আর অভিনয় করিনি। এতদিন ভালোবেসে শুধু এটা করে গেছি।
এই আনন্দের সংবাদে কে বেশি খুশি হয়েছেন?
আমার বাবা জানতে পারলে খুব ভালো লাগত। বাবা এখন বেঁচে নেই। আর মা বেঁচে থাকলেও এই খবর জানার মতো অবস্থায় নেই। বাবা আমার অভিনয়, আঁকাআঁকি নিয়ে তেমন খুশি ছিলেন না। কিন্তু একটা স্যুটকেসে তিনি আমার ছবিসহ সব সংবাদ সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন।
শিল্পী সংঘের নির্বাচনে তো ভোট দিতে এসেছিলেন...
হুমম, সুন্দর পরিবেশে ভোট দিয়েছি। কোনো ঝামেলা হয়নি। সঙ্গে অনেক পরিচিত মুখের সঙ্গে দেখা হয়েছে, আড্ডাও হয়েছে। যতক্ষণ ছিলাম, ভালো লেগেছে।
এফডিসিতে একই দিনে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন ছিল। চলচ্চিত্রাভিনেতা হিসেবে ভোট দিতে কেন যাননি?
সদস্যই তো হইনি! আসলে এত বছরেও ইচ্ছা হয়নি সেখানকার সদস্য হওয়ার... হাহাহা।
আপনাদের সময় কী অসামান্য নাটক-ধারাবাহিক নির্মিত হতো! এখন কেন হয় না?
সবই আছে আগের মতো, শুধু নেই ডেডিকেশন, একাগ্রতা। সবাই অল্পতেই জনপ্রিয় হতে চান। ফেসবুকের লাইক-কমেন্ট পেয়ে মনে করে তারকা হয়ে গেছেন। এখন বাংলাদেশে এত এত তারকা! তাঁরা যেমন নষ্ট হচ্ছেন তেমনি নষ্ট করছেন তাঁদের চারপাশ।
এই দায় কি এড়াতে পারবেন?
এটি একটি সম্মিলিত কাজ। এককভাবে কাউকে দায়ী করা যাবে না। কেউই কারও জায়গায় সৎ নেই। একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন। দেশের বাইরে যে ছবিগুলো পুরস্কারের জন্য পাঠানো হয় তার কয়টি মানসম্মত! বাজে ছবিগুলো কেন পাঠানো হয়? কারা পাঠান? এসব প্রশ্নের উত্তর সবাই জানি। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছেন না। কারণ, যাঁরা নিয়ন্ত্রক তাঁদের বিপক্ষে কখনই কেউ কথা বলতে চাইছেন না।
দীর্ঘদিন ফটোগ্রাফি ও পেইন্টিং করছেন। কবে এক্সিবিশন করবেন?
ইচ্ছা রয়েছে। এগুলো নিয়ে এক্সিবিশনের আয়োজন করা দরকার। সব কিছু গুছিয়ে নিতে একটু সময় নিচ্ছি।
‘পেন্ডুলাম’ নিয়ে মঞ্চে ফিরছেন কবে?
মাসুম রেজার রচনায় ও নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নির্দেশনায় ‘পেন্ডুলাম’। এর মাধ্যমে প্রায় দুই যুগের বেশি সময় পর মঞ্চে অভিনয় করার কথা ছিল। গত বছরের শেষের দিকে এটি করার পরিকল্পনা আমরা করেছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ও আমার কিছু কাজের ব্যস্ততায় ডেট পেছানো হয়েছে। আর শিশু একাডেমির যে ছবিটা বানাচ্ছি তার আরেকটু কাজ বাকি আছে। তা নিয়ে একটু ব্যস্ত। সময় নির্দিষ্ট করে অচিরেই ‘পেন্ডুলাম’ নিয়ে ফিরব আশা করছি।
নিজের কাজ নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা থাকে?
আসলে আমি মাস বা বছরব্যাপী কোনো পরিকল্পনা করি না। করতেও চাই না। তবে যাই করি, নিষ্ঠার সঙ্গেই করি। যেমন হঠাৎ করেই একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। ‘মানিকের লাল কাঁকড়া’। শিশুতোষ চলচ্চিত্র এটি। এর দৃশ্যায়ন শেষ। বাকি কাজগুলো নিয়েই মূলত একটু ব্যস্ত আছি।