শিরোনাম
শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : শাবনূর

নিজেকে কখনো নায়িকা ভাবতে পারিনি

নিজেকে কখনো নায়িকা ভাবতে পারিনি

জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর। চার দশকেরও বেশি সময় দর্শকপ্রিয়তা নিয়ে অভিনয় করে গেছেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হিসেবে সে দেশে অবস্থান করছেন।  ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর করোনাকাল শুরু হওয়ায় আর দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। গতকাল মুঠোফোনে তাঁর বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

কেমন আছেন?

ভালো আছি, তবে দেশের জন্য মনটা সব সময় কাঁদে। যতই বিদেশে থাকি না কেন মনটা দেশের মাটিতেই পড়ে থাকে। এ অবস্থা কিন্তু শুধু আমার নয়, সব বাংলাদেশিরই। নিজ দেশের সব মানুষের মতো আমারও একটিই পরিচয়- আমি বাঙালি। বাংলাদেশকে আমি ভালোবাসি। দেশকে নিয়ে গর্ব করি। হয়তো জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অনেকের মতো আমাকেও বিদেশে থাকতে হচ্ছে। আমি দেশকে যেমন ভালোবাসি তেমনি আমার প্রাণের চলচ্চিত্র জগৎকেও অনেক ভালোবাসি। সবার মতো আমারও কমন কথা হলো- ‘চলচ্চিত্র জগৎ আজ আমাকে নাম, খ্যাতি, যশ সবই দিয়েছে, চলচ্চিত্রের কারণেই আজ আমি সবার কাছে ‘অভিনেত্রী শাবনূর’ হতে পেরেছি। তাই শিগগিরই দেশে ফিরে আবারও চলচ্চিত্রের কাজে আত্মনিয়োগ করতে চাই।

 

অস্ট্র্রেলিয়ায় সময়টা কীভাবে কাটছে?

আইজানের দেখাশোনা আর ফল, ফুল, সবজির বাগান করে সময়টা ভালোই কেটে যাচ্ছে। তাছাড়া ছোট বোনের স্বামীর সঙ্গে এখানে অল্প-স্বল্প ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে আমার। এসব নিয়ে বেশ আছি। তারপরও দেশের সুখ-শান্তি কোথাও খুঁজে পাই না।

 

আবার অভিনয়ে ফিরতে চান?

অভিনয়ে ফিরতে আরও কিছুদিন সময় চাই। ফেরার জন্য চেষ্টা চলছে। ফিরতে হলে আমাকে আগে ফিট হতে হবে। সে চেষ্টাই করছি। ওজন কমানো খুব কঠিন একটা কাজ। হঠাৎ করে ওজন কমানো সম্ভব নয়। ফিট হওয়ার জন্য আরও সময় প্রয়োজন। চলতি বছরই আমার নিয়মিতভাবে অভিনয় শুরু করার ইচ্ছা আছে। আবার ছবিতে অভিনয় করব। কারণ আমরা ব্যক্তিগতভাবে সবাই খুবই দুঃখী। আমি চাই মানুষদের বিনোদন দিতে। আমি এখনো কাজ করতে চাই। আমাকে নিয়ে যদি তেমন গল্পের ছবি বানাতে চান, আমার মতো করে গল্প বলতে চান, তাহলে অবশ্যই আমি সেসব ছবিতে অভিনয় করব।

 

আপনার কিছু ছবির কাজ অসমাপ্ত রয়েছে, তাই না?

জি হ্যাঁ, মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ভাইয়ের ‘এত  প্রেম এত মায়া’ ছবিতে আমি আর ববিতা ম্যাডাম একসঙ্গে কাজ করেছি। তাও বেশ কিছুদিন হয়ে  গেল। একটি বিদেশি ছবির ছায়া অবলম্বনে চমৎকার গল্পে ছবিটি নির্মাণ করেছেন মানিক ভাই। এ ছবির জন্য টাইটেল সংয়েও কণ্ঠ দিয়েছি আমি। এতে আমার আরও কিছু কাজ বাকি আছে। দেশে ফিরলে শিগগিরই ছবিটির কাজ শেষ করে দেব।

 

অভিনয় থেকে দূরে থাকার পর নিজেকে নায়িকা ভাবতে কেমন লাগে?

অভিনয়কে খুব মিস করি, তবে নিজেকে কখনো নায়িকা ভাবতে পারিনি। আমার মনে হয় আমি অন্য দশটা সাধারণ মেয়ের মতোই। চলচ্চিত্রটা আমার কাছে সংস্কৃতির চর্চা মাত্র। চলচ্চিত্র আমার প্রাণের জায়গা। আমার আসল আবাসস্থল। এখান থেকেই আজকের শাবনূরের জন্ম। চলচ্চিত্রকে মনেপ্রাণে ভালোবাসি কিন্তু নিজেকে নায়িকা ভাবতে লজ্জা লাগে ভীষণ।

 

চলচ্চিত্র নির্মাণে আসবেন?

বর্তমানে চলচ্চিত্রের সময়টা আবারও ভালোর দিকে যাচ্ছে। গত দুই ঈদে বেশকটি ছবি ভালো ব্যবসা করেছে বলে শুনেছি। আমার বিশ্বাস শিল্পের প্রতি আন্তরিক ও চলচ্চিত্রের সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে ছবির ব্যবসা আবারও ঘুরবে। চলচ্চিত্র আরও ভালো অবস্থানে যাবে। তখন অনেকেই আবার চলচ্চিত্র নির্মাণে ফিরবে। ছবি পরিচালনা করার ইচ্ছার কথা আগেই জানিয়েছিলাম। তাও করব। শুধু সব গুছিয়ে নিতে একটু সময় দরকার। আর কিছু নয়।

 

জীবনটা এখন কীভাবে সাজাতে চান?

‘আমাদের জীবনটা একটু অন্যরকম। আমাদের কারও না কারও অশান্তি আছে, দুঃখবোধ আছে, আমরা ব্যক্তিগত জীবনে অনেক দুঃখী। অনেক বিপর্যস্ত। জীবন মানে সুখ-দুঃখের লুকোচুরি। চাইলেই সব সময় জীবনকে ইচ্ছামতো সাজানো যায় না। তারপরও বলব- আদর্শ, সততা বজায় রেখে মনকে যদি ভালোবাসায় ভরিয়ে তোলা যায় তাহলে জীবনটা নিজের মতো করে সাজানো যায়। এর জন্য ইচ্ছাশক্তিই প্রধান। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এই বাজে ভয়টা জীবনে চলার পথে বড় অন্তরায়। জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যে এগিয়ে নিতে সৎ সাহস নিয়ে নির্ভয়ে এগিয়ে যেতে হবে, তাহলে সফলতার দেখা মিলবে। ১৯৯৩ সালে আমার চলচ্চিত্রে অভিষেক হওয়া প্রথম ছবি ‘চাঁদনী রাতে’র ব্যর্থতাই শুধু নয়, দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের ক্যারিয়ারে যত ঝড়-ঝাপটা আমার ওপর এসেছে, যত স্ক্যান্ডাল আমাকে  ফেস করতে হয়েছে, পৃথিবীর অন্য কোনো শিল্পীকে  বোধ করি অতটা করতে হয়নি। আমার প্রথম ছবির প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, নায়ক সালমান শাহ, নায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস, এক বিদেশি নাগরিককে আমার সঙ্গে জড়িয়ে মিথ্যা সম্পর্কের গুঞ্জন, সালমানের হত্যা/আত্মহত্যার জন্য অভিযুক্ত হওয়া, একাধিকবার এফডিসির বিভিন্ন সমিতি কর্তৃক ব্যান হওয়া, উফফফ, কী ফেস করতে হয়নি আমাকে, একই সঙ্গে পারিবারিক নানা টানাপোড়েনে অতিষ্ঠ ছিল আমার জীবন। বিশেষ করে স্বামীর সঙ্গে আমার ডিভোর্স, অন্য যে কেউ হলে বোধ হয় পাগল হয়ে যেত, সমস্যা ভুলে থাকার জন্য মাদকের আশ্রয় নিত বা আত্মহত্যা করত। আমি কিন্তু সব নেগেটিভকে মনের জোরে পাশ কাটিয়ে জীবনটাকে পজিটিভ বলে গড়ে তুলতে পেরেছি বলে সুখ আমার সঙ্গে বিট্রে করতে পারেনি।

 

আবার বিয়ে করে সংসারী হবেন?

আমার আর সংসারী হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়া যে কোনো নারীর জন্য ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। অনেকে মনে করেন, একবার কারও প্রতারণার শিকার হলে আর কোনো পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস বা বিয়ে করা যায় না। এটি ভুল ধারণা। ভালোমন্দ পৃথিবীর সবকিছুতেই আছে। তাই বলে ভালো মানুষ যে আর পাওয়া যাবে না তা কিন্তু নয়। আমার আর বিয়ের ইচ্ছা না থাকার কারণ হচ্ছে একমাত্র পুত্র আইজানকে প্রতিষ্ঠা করা।

সর্বশেষ খবর