সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : মাহফুজ আহমেদ

আমাদের পুরো জীবনটাই রহস্যে ঘেরা

আমাদের পুরো জীবনটাই রহস্যে ঘেরা

নব্বইয়ের দশক থেকে এখনো সমান জনপ্রিয় অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ। দুই দশকের সফল ক্যারিয়ার। সাংবাদিকতা থেকে অভিনয়ে এসে মাত করেছেন। টানা আট বছর পর তিনি একেবারে নতুনভাবে, নতুন আঙ্গিকে ‘প্রহেলিকা’র মাধ্যমে ফিরছেন রুপালি পর্দায়। এই তারকার সঙ্গে সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন - পান্থ আফজাল

 

দীর্ঘ বছর পর সিনেমা দিয়ে অভিনয়ে ফিরছেন। এত দীর্ঘ বিরতির কারণ কী ছিল?

আমাকে লোভে ফেলে এমন কোনো চরিত্র পাইনি বলেই অভিনয় করা হয়ে ওঠেনি। যে চরিত্রটা আমার কাছে মানুষ প্রত্যাশা করে, সে জন্যই আসলে অপেক্ষায় ছিলাম এতদিন। তবে এবার সেটা পেয়েছি। ‘প্রহেলিকা’ সিনেমায় মনা চরিত্র হয়ে ফিরছি। যেমনটা আগে দর্শকরা দেখেছেন ‘আমাদের নুরুলহুদা’ বা ‘চৈতা পাগল’-এ। আমি মাঝারি মানের অভিনেতা। ভালো নির্মাতা, লোভনীয় ও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের জন্য আকুল হয়ে বসে থাকি।

 

অভিনয়ে তাহলে এখন থেকে নিয়মিতই পাওয়া যাবে আপনাকে?

আবার যদি প্রহেলিকার মতো গল্প পাই, আবার যদি ব্যক্তি মাহফুজ শিল্পী মাহফুজকে তাড়া করতে থাকে তাহলে অবশ্যই ক্যামেরার সামনে দাঁড়াব। দীর্ঘ বছর প্রহেলিকার জন্য অপেক্ষা করেছি। এমন একটা গল্প পেলে ব্যক্তি মাহফুজ শিল্পী মাহফুজকে কাজটা করার জন্য তাড়না দিতে থাকে।

 

আপনি একটু চুজি স্বভাবের। সেই হিসেবে এ সিনেমার কাজে আগ্রহের প্রধান কারণ কি ছিল?

স্ক্রিপ্ট পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছে। চিত্রনাট্যই আমাকে কাজটি করতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। সিনেমার প্রতিটি চরিত্রই আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে। চিত্রনাট্যকার পান্থ শাহরিয়ার চরিত্রগুলো যেভাবে দেখতে চেয়েছেন, তা শুনে তাঁর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কনভিন্স হয়েছি বলে কাজটি করেছি। আমরা যত সিনিয়রই হই, শুটিংয়ের আগের দিন বার্ষিক পরীক্ষার আগের রাতের অনুভূতি ফিরে আসে। তবে প্রহেলিকায় খুব আনন্দ নিয়ে কাজ করেছি। গল্পটা চমৎকার। অর্পা ও মনার প্রেমকাহিনিই হচ্ছে এই প্রহেলিকা। আমাদের পুরো জীবনটাই রহস্যে ঘেরা, সম্পর্কও রহস্যে ঘেরা। আর প্রহেলিকা মানেই রহস্য, ধাঁধা।

 

শুটিং শেষেই দেশের বাইরে চলে গেলেন, কেন?

আমি মনা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলাম। যার কারণে, শুটিং শেষ করার পরদিন দেশের বাইরে চলে যাই। মূলত এই চরিত্র থেকে বের হতেই দেশ ছাড়ি। এটি করতে গিয়ে রীতিমতো একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এবং আজকের আগে এ প্রসঙ্গে আমি মিডিয়ায় কোনো কথাও বলিনি। আশা করছি সিনেমাটি মুক্তির পর সেটা আপনারাও অনুভব করবেন। চয়নিকা চৌধুরীর নির্দেশনায় আগেও কাজ করেছি। তবে বুবলীর সঙ্গে প্রথম। তারপরও একটুও সমস্যা হয়নি। ছবিটা দর্শক পছন্দ করবে বলেই আমার বিশ্বাস।

 

প্রতিষ্ঠিত নায়িকা বুবলীর বিপরীতে কাজ করতে কোনো অস্বস্তিবোধ কাজ করেছিল?

শুধু বুবলী নয়, টুবলি থাকলেও জড়তা কাজ করত আমার! কারণ আমি তো সবাইকে নিয়ে ভয়েই ছিলাম। আমার সঙ্গে আরও ছিলেন সেতু আজাদ, রাশেদ মামুন অপু, নাসির উদ্দিন খানের মতো অভিনেতারা। যারা এখন ওটিটি মাত করছে। আমার ভয়ের কারণ ছিল, ওদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারব কি না। কারণ, এটা তো সত্যি লম্বা সময় আমি ক্যামেরার বাইরে। প্রথম দৃশ্য করেছিলাম বুবলীর সঙ্গে। সে কিন্তু আমার মোস্ট ফেভারিট কো-অ্যাক্টর। আর সহশিল্পী হিসেবে তার সঙ্গে প্রথম কাজ। আমি সত্যিই নার্ভাস ছিলাম সেদিন। তবে এটাও ভরসা ছিল, সাঁতার একবার শিখলে সেটা তো আর ভুলে যাওয়ার কথা নয়। এরপর একটি দৃশ্য করছি, আর মনিটরে গিয়ে দেখছি। দেখলাম, না হচ্ছে! যদিও বুবলী বারবার বলছে সে আমার সঙ্গে কাজ করে ধন্য বা ইত্যাদি। কিন্তু আমি বলব, তার সঙ্গে কাজ করে আমি অনেক কিছু শিখেছি।

 

কী এমন শিখেছেন বুবলীর কাছ থেকে?

আমরা যারা টেলিভিশন মিডিয়া থেকে ফিল্মে যাই, তাদের মধ্যে একটা অভ্যাস আছে। আমরা কাজটা করতে গিয়ে ভাবী- ঠিক আছে করলাম আরকি। ঠিক আছে হবে আরকি! এ বিষয়টি হচ্ছে নন-প্রফেশনাল আচরণ। কিন্তু ফিল্মের একজন প্রফেশনাল আর্টিস্ট, লাইক বুবলী; তারা এভাবে কখনো ভাবে না। তারা কল টাইম ৩টা মানে ৩টা, ৫টা মানে ৫টা। ওর জন্য কোনো দিন শুটিং লেট হয়নি। ওর এই টাইমিংয়ের জন্য আমাকে তটস্থ থাকতে হয়েছে। এমন আরও অনেক গুণ দেখেছি বুবলীর মধ্যে। যা আমাকে নতুন করে শিখিয়েছে এবং সচেতন করেছে।

 

আপনার সময়ের অনেকেই এখন ওটিটিতে কাজ করছেন। আপনাকে কবে দেখা যাবে?

একজন অভিনেতা হিসেবে আমি ওটিটির কাজ ফলো করি। মানুষ এখন কনটেন্ট পছন্দ করে। ওটিটি প্ল্যাটফরমে ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। আমি অপেক্ষায় আছি কাজ করার জন্য। নিজেকে তৈরি করছি। কোনো নির্মাতা যদি ভালো গল্প ও চরিত্র নিয়ে আসেন, তাহলে অবশ্যই অভিনয় করব। এখন কিন্তু বড় পর্দা-ছোট পর্দা বলে কিছু নেই। পছন্দের চরিত্র পেলেই করব।

 

শুনেছি চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট তৈরি করছেন। চলচ্চিত্রটি নির্মাণের কাজ শুরু করবেন কবে?

ইচ্ছা রয়েছে নির্মাণের। স্ক্রিপ্ট করছি। তবে একটু সময় লাগবে। মনের মতো হলে তবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।

 

এখনকার কনটেন্ট বিষয়ে অভিমত কি?

এখনকার কনটেন্ট মানে হচ্ছে গ্লোবাল কনটেন্ট। এখন আর আগের মতো করে কিছু করলে হবে না। এখনকার দর্শকরা অনেক পরিণত। তারা সারা পৃথিবীর খোঁজখবর রাখছে। বিশ্বাসযোগ্য চরিত্র রূপায়ণ করতে না পারলে ছুড়ে ফেলে দেবে দর্শক। এখন আসলে মেধা বিচারের সময়।

সর্বশেষ খবর