শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঢাকাই চলচ্চিত্রের মজার যত গল্প

ঢাকাই চলচ্চিত্রের মজার যত গল্প

ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাস অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় আগের। এই সময়ে চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্রের নির্মাতা ও শিল্পীদের বেলায় ঘটেছে নানা মজার ঘটনা।  এমনই কয়েকটি ঘটনার কথা এখানে তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

‘সুজন সখী’ আমাকে কুফা নায়ক থেকে হিট বানিয়ে দিল : ফারুক

১৯৭৫ সাল। নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘লাঠিয়াল’ ছবির আউটডোর শুটিং চলছে। শুটিংয়ে খান আতা ভাই এলেন। শট শেষ হলে তিনি আমাকে ‘সুজন সখী’ নামে একটি ছবি নির্মাণের কথা বললেন এবং তাতে আমাকে সুজনের চরিত্র রূপায়ণের জন্য প্রস্তাব দিলেন। যেদিন ‘সুজন সখী’র শুটিং শুরু হলো সেদিন আমাকে আর কবরী ম্যাডামকে নিজের গাড়িতে করে স্পটে নিয়ে গেলেন তিনি। গাড়িতে আবারও গল্পে গল্পে ছবির চরিত্রগুলো এমনভাবে বললেন আতা ভাই, মনে মনে আমি সুজন হয়ে গেলাম। শুটিংয়ে উপচেপড়া মানুষের ভিড় সামলাতে পুলিশ লাঠিপেটা করার সময় আমিও হাতে ব্যথা পাই। কবরী ম্যাডাম তখন সুপারস্টার। তাঁর সঙ্গে আমাকে দর্শক কীভাবে গ্রহণ করে তা ভেবে বেশ নার্ভাস ফিল করছিলাম। খান আতা ভাই খুব কষ্ট করে সিনেমাটা বানান।  ছবিটি মুক্তির পর রীতিমতো তা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ইতিহাস হয়ে গেল। আতা ভাই পারিশ্রমিক বাবদ আমাকে ৫ হাজার টাকা আর একটা হৃদয়কাড়া চিঠি দিয়েছিলেন। এই ছবি আমাকে কুফা, অপয়া হিরো থেকে হিট বানিয়ে দিল। জীবনে এমন অনেক ভক্ত পেয়েছি যারা আমাকে বলেছে, তাদের মা-বাবা হলে গিয়ে বারবার ছবিটি দেখেছে। পণ করেছে, ছেলে হলে নাম রাখবে সুজন। এমন অনেক সুজনকেই আমি দেখেছি।

 

রাজ্জাক ভাইয়ের ভাগ্নির চরিত্রে কাজ করে চ্যালেঞ্জে জয়ী হলাম : ববিতা

নারায়ণ ঘোষ মিতার চলচ্চিত্র ‘আলোর মিছিল’। গল্পটা ‘আলো’ নামের এক মেয়েকে ঘিরে। সব ইমোশন তাকে নিয়ে, কিন্তু ছবিতে রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে রোমান্টিক জুটি হলেন সুজাতা ম্যাডাম। আমি গল্পে রাজ্জাক সাহেবের ভাগ্নি। আমাকে নিয়ে তখন ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁরা লগ্নি করছেন বা যাঁরা আমার বন্ধু, সবাই চাইলেন আমি যেন ছবিটা ‘না’ করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুন্দর গল্প, সুন্দর চরিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছারই জয় হলো। আমি চ্যালেঞ্জে জয়ী হলাম। রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে রোমান্টিক নায়িকা হিসেবে কিছু ছবি হিট করার পর ‘আলোর মিছিল’-এর অফার এলো। নারায়ণ ঘোষ মিতা যখন সিকোয়েন্সগুলো অভিনয় করে দেখাতেন, বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠত। এ জন্যই এসব ছবি করার সময় গ্লিসারিন লাগত না। আমার একটা সংলাপ খুব জনপ্রিয় হয়েছে ‘চা গরম চা গরম’। দর্শক ছবিটা কীভাবে নেয় তা দেখার জন্য বোরকা পরে গিয়েছিলাম ‘মধুমিতা’ সিনেমা হলে। আলো যখন মারা যায়, দর্শককে দেখেছি হাউমাউ করে কাঁদতে। যাঁরা ছবিটি করতে মানা করেছিলেন তাঁরা সবাই পরে আমাকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন। কারণ এ ছবির পরও রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে আমার রোমান্টিক ছবি হিট হয়েছে। ‘আলোর মিছিল’ আমার প্রিয় সিনেমাগুলোর একটি।

 

স্বপ্ন পূরণ হয়নি আলমগীর কবিরের : কাজী হায়াৎ

আমি তখন পরিচালক মমতাজ আলীর সহকারী। হঠাৎ এক দিন চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কবির আমাকে ‘সীমানা পেরিয়ে’ ছবির সঙ্গে যুক্ত হতে বললেন। খোলাখুলিভাবেই বললেন, দুজন সহকারী রাখা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। আমাকে তাই বেশ পরিশ্রম করতে হবে। তাঁর সঙ্গে কাজ করার তীব্র আগ্রহ ছিল বলেই রাজি হয়ে গেলাম। কক্সবাজারে শুটিংয়ের দিনগুলো দারুণ কেটেছিল। সে সময় নেগেটিভ সংকট ছিল, রাত-দিন একাকার করে সম্পাদনার কাজ করতে হয়েছিল। এরপর তাঁর সঙ্গে কিছু তথ্যচিত্রের কাজও করেছিলাম। মাসে ২০০ টাকা করে দিতেন। ‘সীমানা পেরিয়ে’ আমার কাছে নান্দনিক একটি সিনেমা। আমার ‘দায়ী কে’ জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর দেখা করতে গিয়েছিলাম তাঁর অফিসে। অভিনন্দন জানিয়ে আমাকে কিছু কষ্টের কথা বলেছিলেন সেদিন। ভালো ছবি নির্মাণের জন্য প্রচুর ঋণ করেছিলেন। ছবিগুলো ব্যবসা না করায় অনেকেই তাঁকে ভুল বুঝেছেন।  যে স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন তার অনেক কিছুই পূরণ করতে পারেননি তিনি।

সর্বশেষ খবর