বলিউডের নায়কদের গান গাওয়ার তালিকাটা ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। অভিনয়ের পাশাপাশি গান গেয়ে দর্শক মুগ্ধতা কেড়েছেন। প্লে-ব্যাক করেছেন, বের করেছেন অডিও অ্যালবামও। তারা নায়ক হিসেবে যতটা জনপ্রিয় ঠিক ততটাই জনপ্রিয় গায়কী প্রতিভা দিয়ে। এমন কয়েকজন তারকা নিয়ে প্রতিবেদন সাজিয়েছেন- পান্থ আফজাল
বলিউডে এই ট্রেন্ড নতুন নয়। ‘ওয়াজির’-এ অমিতাভের ‘অতরঙ্গি ইয়ারি’ থেকে অভিষেক, শ্রীদেবী থেকে শ্রদ্ধা- গানে ভুবন ভরিয়ে দেওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে নেই কেউ। নব্বইর দশকের শেষে বাদ ছিলেন না খানেরাও। আমিরের ‘খান্ডালা’ জাদু কাটতে না কাটতেই কিং খানের টপোরি স্টাইলে গাওয়া ‘আপন বোলা’ সাড়া ফেলেছিল গোটা বলিউডে। আর সেই সময়ে বাদ থেকে যাওয়া সালমান এখন একাই সুপারহিট। ‘মেঁ হু হিরো তেরা’র হ্যাং ওভারেই এখন বুঁদ টিনএজ রোমিওরা। বিশেষত উল্লেখযোগ্য, নতুন প্রজন্মের কলাকুশলীরা তাঁদের অভিনয় দক্ষতা প্রমাণের সঙ্গে সঙ্গেই ছাপ রাখছেন গানের জগতে। আলিয়া ভাট, শ্রদ্ধা কাপুর, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ফারহান আখতার, হৃত্বিক রোশান, অভয় দেওল- এঁরা সবাই প্লে-ব্যাক করেছেন তাঁদের নিজেদের ছবির জন্য। তাহলে কী এঁরা সবাই সুরের সমঝদার?
বলিউড তারকা আমির খান। তিনি বড় পর্দায় গেয়েছিলেন ‘গুলাম’-এর ‘আতি ক্যয়া খান্ডালা’। সেই ছবির ১৮ বছর পর তাঁকে গায়ক হিসেবে পাওয়া যায় ‘দঙ্গল’ ছবিতে। ‘দঙ্গল’-এর ‘ধক্কড়’ গানটির একটি ভার্সন গেয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও বিভিন্ন সিনেমায় তিনি গান গাওয়ার অভিনয়ও করেছেন। ক্লাসিক্যালও শিখেছেন। বলিউড বাদশা শাহরুখ খান শুধু একজন সুপারস্টার নন, তিনি কোটি কোটি মানুষের কাছে ইমোশন। অনেককে ভালোবাসার সংজ্ঞা বুঝিয়েছেন এসআরকে। এই নায়ক ‘জোস’ ছবিতে গান করেছেন। ‘আপনভোলা মেরি লায়লা’ গানটি গেয়ে তিনি সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্টেজ শো, সিনেমায় তিনি নিজের কণ্ঠে বিভিন্ন সিনেমার প্রিয় গান কণ্ঠেও তুলেছেন।
অমিতাভ বচ্চন। সত্তরের দশক হোক বা এখন। তাঁর গুণগ্রাহী সবাই। নিঃশব্দ ছবিতে ‘রোজানা’ গানটির জন্য তিনি পুরস্কারও পেতে পারতেন বলে অনেকের ধারণা। এ ছাড়াও কমল হাসান তনয়া শ্রুতি হাসান বা রজনীকান্তের জামাই ধনুশেরও অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবে সমান জনপ্রিয়তা। ‘বাগি’ ছবির ‘সব তেরা’ গানটিতে আরমান মালিকের সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী শ্রদ্ধা কাপুর। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, সোনাক্ষী সিনহাও নায়িকা থেকে গায়িকা হয়েছেন। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ইংরেজি ভাষায় গান গেয়ে মাতিয়েছেন পশ্চিমা বিশ্ব। অভিনয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় গানের দিকে আগে নজর দিতে পারেননি। তবে এত দিনে প্রিয়াঙ্কা জিতে নিয়েছেন পূর্ব-পশ্চিম। তাঁর গান ‘এক্সটিক’, ‘ইন মাই সিটি’ আন্তর্জাতিক বাজারেও হিট। গাওয়ার পাশাপাশি ‘এক্সটিক’ ভিডিওতে পিটবুলের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার উপস্থিতিও মন কাড়ে দর্শকের। ‘ম্যারি কম’ ছবিতে ছোট্ট শিশুকে নিয়ে গাওয়া প্রিয়াঙ্কার ‘চাওরো’ গানটিও পছন্দ অনেকের। বর্তমানে এই নায়িকা কাম গায়িকা অবশ্য বলিউডের দিকে নজরই দিতে পারছেন না। শিগগিরই হয়তো তাঁর কণ্ঠে ভক্তদের হৃদয়ে দোলা লাগবে। তাঁর গাওয়া সর্বশেষ বলিউড গান ২০১৫ সালে ‘দিল ধাড়কানে দো’ ছবির টাইটেল। শ্রদ্ধা কাপুরের নামও এ ক্ষেত্রে ওপরের দিকে। ‘আশিকী’ তারকা অভিনয় দিয়ে তো নিজেকে চিনিয়েছেনই, সেই সঙ্গে গানও গেয়ে যাচ্ছেন সমান তালে। তাও যেমন-তেমন নয়। তাঁর গাওয়া গান হিটও হচ্ছে। গায়িকা হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু ‘হায়দার’ ছবির মাধ্যমে। ছবিটিতে তিনি শুধু অভিনয়ই করেননি, সুরেশ ভাডকারের সঙ্গে ‘দো জাহান’ গানটি গেয়ে আলোচিতও হন। এরপর ‘এক ভিলেন’ ছবির ‘গালিয়া’ গানটির আনপ্লাগড ভার্সনে কণ্ঠ দেন অঙ্কিত তিওয়ারির সঙ্গে। তবে সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছেন ‘বাগি’র ‘সব তেরা’ গেয়ে। তালিকায় সবচেয়ে নাটকীয় অন্তর্ভুক্তি আলিয়া ভাটের। এই নায়িকার গলায় জাদু প্রথম খুঁজে পান ‘রকস্টার’ পরিচালক ইমতিয়াজ আলী। তিনি অস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক এ আর রহমানকে বলেন, আলিয়ার গলা অনেক ব্যতিক্রমী। শুরুতে বিশ্বাসই করেননি এ আর রহমান। তবে যখন আলিয়ার গলা শুনলেন, মানতে বাধ্য হলেন। ফলাফল ইমতিয়াজের ‘হাইওয়ে’ ছবির ‘সুহা সাহা’ গানের মাধ্যমে বলিউডি গানের জগতে অভিষেক। ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তবে আলিয়ার কণ্ঠ জানুয়ারি থেকেই শুনতে পান শ্রোতারা। বিষয়টি তখন আলিয়া ভাটের নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য ঠেকেছিল। তখন নিজের শরীরে চিমটি কেটে বলেছিলেন, ‘বাথরুম সিঙ্গার থেকে এ আর রহমানের সিঙ্গার।’ একই বছর মুক্তি পাওয়া ‘হাম্পটি শর্মা কি দুলহানিয়া’র ‘সমঝাওয়া’ গানটির আনপ্লাগড ভার্সনে কণ্ঠ দিয়েও আলোচিত হন। ইউটিউবে গানটি শুনেছেন ছয় কোটিরও বেশি শ্রোতা! সমসাময়িকরা গলার জাদু নিয়ে এত দূর চলে যাবে আর সোনাক্ষী পিছিয়ে থাকবেন-এটা কী হয়? ‘দাবাং’ নায়িকার আগেই ‘ইন্ডিয়ান আইডল জুনিয়র’-এর বিচারকের আসনে বসার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সংগীতের কলাকৌশল ভালোভাবে দখলে থাকলেও গাওয়াটা হয়ে ওঠেনি। সেটিও করে ফেললেন। টি-সিরিজের ব্যানারে গাইলেন নিজের প্রথম গান ‘ইশকোহলিক’। এ ছাড়াও তারা সুতারিয়া, আনুশকা শর্মা, মাধুরী, কাজল, অজয়, অক্ষয়ও গান গাওয়ার চেষ্টা করেছেন।